অন্তর্বতী সকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে নিউ ইয়র্কে বৈঠক হবে না ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর। তবে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হবে।
শনিবার দুপুর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন নিজেই এ কথা বলেন।
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের যোগদান উপলক্ষে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর অধিবেশনে যোগ দিতে যাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনদিন পর আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর তিনি বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে রওনা হবেন।
অধিবেশনে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর দেখা হচ্ছে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে তৌহিদ হোসেন বলেন, “ওনাদের দুজনের নিউ ইয়র্কে উপস্থিতি একসঙ্গে হচ্ছে না। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নিউইয়র্ক থেকে আগে চলে আসছেন আর প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস একটু পরে যাচ্ছেন। কাজেই তাদের সেখানে দেখা হওয়ার সম্ভাবনা নেই বলেই মনে হচ্ছে।”
তবে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে তার আলোচনা হতে পারে কিনা, জানতে চাইলে তিনি বলেন, “এস জয়শঙ্করের সঙ্গে আমার দেখা হওয়ার বিষয়টি প্রায় নিশ্চিত। ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কে যে এক ধরনের টানাপোড়েন চলছে এটা স্বীকার করতে হবে। সমস্যার সমাধান করতে সমস্যার অস্বিত্ব অস্বীকার করলে চলবে না।”
অবশ্যই আমরা এই টানাপোড়েন দূর করার চেষ্টা করবো মন্তব্য করে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “ওয়ার্কিং রিলেশন যেন হয়। তবে সর্ম্পকটা হতে হবে মর্যাদা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের ভিত্তিতে। এর ভিত্তিতে সর্ম্পক এগিয়ে নেওয়া সম্ভব এবং আমরা সেই চেষ্টাটাই করব।”
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবের আগে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা এক লিখিত বক্তব্য দেন। সেখানে তিনি বলেন, “আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর থেকে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৯তম অধিবেশনের উচ্চ পর্যায়ের বিতর্ক পর্ব শুরু হতে যাচ্ছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোর মতো এবার বাংলাদেশ থেকে শতাধিক সদস্যের প্রতিনিধিদল ভাড়া করা উড়োজাহাজে নিউইয়র্ক সফর করবেন না।
“আগে কেন বড় প্রতিনিধি দল যেত, সেটি আমি বলতে পারব না। আমি জানি না। কিন্তু বর্তমান সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ব্যয় সংকোচন করতে হবে, অপ্রয়োজনীয় খরচ করা যাবে না। সব মিলিয়ে এবারে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলে ৫৭ জন থাকছেন।
“আমি আমার দায়িত্বের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ উচ্চ পর্যায়ের সভাগুলোতে অংশগ্রহণের জন্য দুইদিন আগে ভিন্ন একটি ফ্লাইটে নিউ ইয়র্ক যাব।”
বাংলাদেশের জন্য এ বছরের অধিবেশন বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ জানিয়ে তৌহিদ হোসেন বলেন, “এ বছরই জাতিসংঘে বাংলাদেশের সদস্যপ্রাপ্তির ৫০ বছর পূর্তি হতে যাচ্ছে। এ উপলক্ষে প্রধান উপদেষ্টার উপিস্থিতিতে ২৪ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সদর দপ্তরে বাংলাদেশের একটি উচ্চ পর্যায়ের সংবর্ধনার আয়োজন করছে। এতে বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিদলের প্রধানদের পাশাপাশি জাতিসংঘের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা, কয়েক দেশের সরকার রা রাষ্ট্রপ্রধানরাসহ বিভিন্ন সংস্থা প্রধান অংশ নেবেন বলে আশা করা যাচ্ছে।”
প্রধান উপদেষ্টা ২৭ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সাধারণ বির্তক পর্বে বক্তব্য দেবেন বলে জানান পররাষ্ট্র উপদেষ্টা।
সেই ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা বিগত দুই মাসে বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া গণঅভ্যুত্থানের বিবরণ ও আগামী দিনে জনভিত্তিক, কল্যাণমুখী ও জনস্বার্থে নিবেদিত একটি রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে তোলার দৃঢ় প্রত্যয় বিশ্ব দরবারে তুলে ধরবেন বলে আশা করা যাচ্ছে।
পাশাপাশি আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশের বলিষ্ঠ অবস্থা, জলবাযু পরিবর্তন ও এর প্রভাব, জলবায়ু ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, বিশ্বব্যাপী সংঘাত, রোহিঙ্গা সংকট, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অজর্নের ক্ষেত্রে উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রতিকূলতা, উন্নয়নশীল দেশসমূহ হতে সম্পদ পাচারের প্রতিরোধ, নিরাপদ অভিবাসন, অভিবাসীদের মৌলিক পরিসেবা প্রাপ্তির নিশ্চয়তা, জেনারেটিভ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার পরিপ্রেক্ষিতে প্রযুক্তির টেকসই হস্তান্তর এবং ফিলিস্তিন সম্পর্কিত বিষয় প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যে উঠে আসতে পারে।
এসময় প্রধান উপদেষ্টা নেদারল্যান্ডস, নেপাল, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী, ইউরোপিয়ান কমিশনের প্রেসিডিন্ট, জাতিসংঘের মহাসচিব-মানবাধিকার সর্ম্পকিত হাইকমিশনার, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্টসহ অন্যান্য সংস্থা প্রধানদের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে অংশ নেবেন।
অনেক বৈঠকের সিদ্ধান্ত শেষ মুহূর্তেও হয় মন্তব্য করে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেন, “নতুন বৈঠক তালিকায় যোগ হতে পারে। আবার অনেক সময় সময়ের অভাবে কোনও কোনও বৈঠক বাদও হয়ে যেতে পারে।”
এদিকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তিন দিনের যুক্তরাষ্ট্র সফরে শনিবার সকালে রওনা দিয়েছেন। তার এই সফরের মূল আলোচ্য হলো- কোয়াড নেতাদের সম্মেলন, জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে ভাষণ এবং বিভিন্ন দ্বিপক্ষীয় বৈঠক।
জাতিসংঘ সম্মেলনের সাইডলাইনে বিশ্ব নেতাদের কয়েকজনের সঙ্গেও মোদীর দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হতে পারে বলে জানিয়েছে এনডিটিভি।