Beta
বুধবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৫
Beta
বুধবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৫

গুজব ঠেকাতে ঐক্য ধরে রাখুন : ড. ইউনূস

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস মঙ্গলবার জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন। ছবি : পিআইডি
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস মঙ্গলবার জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন। ছবি : পিআইডি
[publishpress_authors_box]

স্বাধীনতা দিবসের আগে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে গুজব ঠেকাতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

জুলাই অভ্যুত্থানের পর এখনও ‘যুদ্ধাবস্থা’য় থাকার কথা তুলে তিনি বলেছেন, ক্ষমতা হারানো শক্তি নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত, তাদের বড় হাতিয়ার হলো গুজব। ঐক্য ভাঙার চেষ্টা চালানো হচ্ছে গুজব ছড়িয়ে।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছরের আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের সাত মাস পেরিয়ে স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের একদিন আগে মঙ্গলবার জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন তিনি।

 ড. ইউনূস বলেন, “দেশবাসীকে আমি স্মরণ করিয়ে দিতে চাই যে, জুলাই অভ্যুত্থানের প্রথম পর্ব সফলভাবে সমাপ্ত হয়েছে। প্রথম পর্বের সমাপ্তির মধ্য দিয়ে অভ্যুত্থানের দ্বিতীয় পর্ব শুরু হলো। সব সময় মনে রাখতে হবে আমরা কিন্তু যুদ্ধাবস্থায় আছি।”

জুলাই অভ্যুত্থানের পরাজিত শক্তি গুজবকে হাতিয়ার করেছে দাবি করে তিনি বলেন, “গুজব দেখলেই গুজবের সূত্রের সন্ধান করতে থাকবেন। গুজবকে অবহেলা করবেন না। বহু অভিজ্ঞ সমর বিশারদ এই গুজবের পেছনে দিনরাত কাজ করছে, সীমাহীন অর্থ এর পেছনে নিয়োজিত আছে।

“এর মূল লক্ষ্য জুলাই অভ্যুত্থানকে ব্যর্থ করা আমাদের সামগ্রিক ঐক্য পলাতক শক্তির গায়ে জ্বালা ধরিয়ে দিচ্ছে। তারা এই ঐক্য ভাঙতে চায়। তাদের অভিনব কৌশল আপনি টেরই পাবেন না। আপনি বুঝতেই পারছেন না কখন তাদের খেলায় আপনি পুতুল হয়ে গেছেন।”

“আমাদের সচেতনতা এবং সামগ্রিক ঐক্য দিয়েই এই গুজবকে রুখতে হবে। পলাতক অপশক্তির ষড়যন্ত্রকে ব্যর্থ করে দিতে হবে,” বলেন তিনি।

অন্তর্বর্তী সরকার সাধারণ নির্বাচনের দিকে এগোচ্ছে জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ছয়টি সংস্কার কমিশনের ১৬৬টি সুপারিশ ও পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদনসহ ৩৮টি রাজনৈতিক দলের কাছে চিঠি দেওয়া হয়েছে। দলগুলোও ইতিবাচকভাবে সাড়া দিয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলো যেসব বিষয়ে একমত হবে, তার ভিত্তিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ‘জুলাই চার্টার বা জুলাই সনদ’ তৈরি করবে।

এই প্রক্রিয়া শেষে নির্বাচনের আয়োজন করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, “আমি আগেও বলেছি, আবারও বলছি, এ বছর ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে।

“আমরা চাই, আগামী নির্বাচনটি বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচাইতে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হোক। এজন্য নির্বাচন কমিশন সব ধরনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। রাজনৈতিক দলগুলো ব্যাপক উৎসাহ, উদ্দীপনায় নির্বাচনের জন্য তৈরি হতে শুরু করবে বলে আশা করছি।”

নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসবে, গুজব তত বাড়বে বলেও দেশবাসীকে সতর্ক করে দেন ড. ইউনূস।

“যতই নির্বাচন কাছে আসবে, এর রূপ আরও ভয়ঙ্কর হতে থাকবে। কারা এর পেছনে আছে, কেন আছে তা আপনাদের সবারই জানা আছে।”

গুজব মোকাবেলায় জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তেনিও গুতেরেসের সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি পাওয়ার কথাও বলেন তিনি।

ভাষণের শুরুতেই ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি বাহিনীর হত্যাযজ্ঞে নিহত এবং নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের স্মরণ করেন ড. ইউনূস।

সেইসঙ্গে গত বছরের জুলাই অভ্যুত্থানে নিহতদের স্মরণ করে তিনি বলেন, “জুলাই গণঅভ্যুত্থান আমাদেরকে যে বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন পূরণের সুযোগ এনে দিয়েছে, সে সুযোগ আমরা কাজে লাগাতে চাই।”

‘জুলাই গণহত্যায়’ যারা জড়িত ছিল, তাদের শাস্তি নিশ্চিতের প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “যারা নির্বিচারে মানুষ হত্যা করেছে, যারা ইতোমধ্যে হত্যাকারী হিসেবে বিশ্বের কাছে স্বীকৃত, তাদের বিচার এদেশের মাটিতে হবেই।”

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয়ের প্রতিবেদনেই খুনিরা চিহ্নিত হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “এই রিপোর্টে স্পষ্টভাবে উঠে এসেছে যে, শেখ হাসিনা নিজেই নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছিলেন বিক্ষোভকারীদের হত্যা করতে।

“জাতিসংঘের রিপোর্ট পড়ে সবার গায়ের লোম দাঁড়িয়ে গেছে। কী ভয়াবহতা! কীভাবে একজন প্রধানমন্ত্রী নিজ দেশের নিরস্ত্র মানুষকে হত্যার পর লাশ লুকিয়ে ফেলার নির্দেশ দিতে পারে! ক্ষমতা আঁকড়ে রাখার জন্য তিনি পৃথিবীর সকল নিষ্ঠুরতা ছাড়িয়ে গেছেন, এটাই জাতিসংঘের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।”

দীর্ঘ ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা অন্তর্বর্তী সরকারের গত সাত মাসে নেওয়া বিভিন্ন কাজের ফিরিস্তি তুলে ধরে বলেন, “বর্তমান সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে জোর ব্যবস্থা নিয়েছে। রমজান ও ঈদে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল জিনিসপত্রের দামের লাগাম টেনে ধরা, বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা।

“রমজান মাসজুড়ে সরবরাহ চেইনের প্রতিবন্ধকতা কঠোরভাবে প্রতিহত করতে সব ধরনের ব্যবস্থা আমরা নিয়েছি। দেশের সকল জায়গা থেকে খবর এসেছে যে, এই রমজানে দ্রব্যমূল্য আগের তুলনায় কমেছে; জনগণ স্বস্তি পেয়েছে। দাম নিয়ন্ত্রণে এই প্রচেষ্টা চলমান থাকবে।”

ধ্বংসপ্রাপ্ত অর্থনীতি স্বস্তিতে

আওয়ামী লীগ দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করে গিয়েছিল দাবি করে ড. ইউনূস বলেন, তারা অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

“গত ১৬ বছরে শেখ হাসিনা যে ভয়াবহ লুটপাট কায়েম করেছিল; আপনারা সেটার ভুক্তভোগী ছিলেন। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে তারা পালিয়ে যাবার সময় এক লণ্ডভণ্ড অর্থনীতি রেখে গেছে। এই পরিস্থিতিতে দায়িত্ব নেওয়ার পর অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের জন্য অন্তর্বর্তী সরকার নানা উদ্যোগ নিয়েছে।”

আওয়ামী লীগ আমলে চর দখলের মতো ব্যাংকগুলো দখল হয়েছিল দাবি করে তিনি বলেন, “লুটপাটের মহোৎসবে গত ১৫ বছরে ২৩৪ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে- এটা আমরা জানি। কত রকমভাবে পাচার হয়েছে তাও জানার বিষয়।

“অভিনব একেকটা পদ্ধতি ছিল। পাচারের একটা পদ্ধতি সবাইকে হতভম্ব করে দিয়েছে। এই পাচার হয়েছে- বিদেশে অধ্যয়নরত সন্তানের কাছে টাকা পাঠানোর নামে। তিনি সন্তানের লেখাপড়ার জন্য এক সেমিস্টারের অর্থাৎ তিন মাসের খরচ বাবদ অফিসিয়াল ব্যাংকিং চ্যানেলে পাঠিয়েছেন ৩ কোটি ৩৩ লাখ ডলার অর্থাৎ প্রায় ৪০০ কোটি টাকা। পাচারের এর চাইতে বেশি তাক লাগানো পন্থা আর কী আছে, তার কোনও সীমা আছে বলে আমার মনে হয় না।”

অর্থ পাচারকারীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনতে সরকার তৎপরতা জোরদারে পাশাপাশি ব্যাংক খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে কাজ চালাচ্ছে বলে জানান প্রধান উপদেষ্টা।

অর্থনীতির সূচকগুলো ইতিবাচক ধারায় ফিরতে শুরু করছে জানিয়ে তিনি বলেন, “দেশের ধ্বংসপ্রাপ্ত অর্থনীতিতে স্বস্তি এনে দিয়েছে আমাদের প্রবাসী ভাই-বোনেরা। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে রেমিটেন্স ধারাবাহিকভাবে বেড়েছে। ফেব্রুয়ারি মাসে রেমিটেন্স প্রবাহ রেকর্ড গড়েছে।”

অন্তর্বর্তী সরকার বিভিন্ন দেশের শীর্ষস্থানীয় বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক করে যাচ্ছে জানিয়ে ড. ইউনূস বলেন, “দ্রুততম সময়ে দেশে নতুন নতুন বিদেশি বিনিয়োগ আপনারা দেখতে পাবেন।”

ঢাকার ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে মঙ্গলবার ‘স্বাধীনতা পুরস্কার-২০২৫’ প্রদান অনুষ্ঠানে ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
ঢাকার ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে মঙ্গলবার ‘স্বাধীনতা পুরস্কার-২০২৫’ প্রদান অনুষ্ঠানে ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

বাংলাদেশে স্টারলিংকের কার্যক্রম তিন মাসের মধ্যে শুরু করতে বাণিজ্যিক চুক্তি চূড়ান্ত করার কাজ চলছে বলে জানান তিনি।

ড. ইউনূস বলেন, “স্টারলিংকের মাধ্যমে স্বল্পমূল্যে উচ্চগতির ইন্টারনেট বাংলাদেশের ডিজিটাল জগতে একটি বিপ্লব আনবে। স্টারলিংক সেবা চালু হলে দেশের প্রতিটি গ্রাম, দ্বীপাঞ্চল, দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চল অতি উচ্চগতির ইন্টারনেট সেবার আওতায় চলে আসবে।”

বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আগামী মাসে ঢাকায় চার দিনব্যাপী যে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ সম্মেলন করছে, তা বিশ্বখ্যাত অনেক বিনিয়োগকারী অংশ নেবেন বলে জানান তিনি।

ড. ইউনূস বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই স্বতঃস্ফূর্তভাবে বিভিন্ন দেশের সরকার বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে।

“বিশ্ব মানচিত্রে বাংলাদেশকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া আমাদের অন্যতম লক্ষ্য। এ লক্ষ্যে আমরা আসিয়ানের সদস্য হিসেবে যোগদান করার বিষয়ে আগ্রহের কথা জানিয়েছি।”

মালয়েশিয়া রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের জন্য জাতিসংঘের সম্মেলন আয়োজনের দায়িত্ব নিয়েছে বলেও জানান তিনি।

ড. ইউনূস আরও বলেন, আগামী সেপ্টেম্বর মাসে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে একটি পৃথক অধিবেশন আয়োজন করবে। মালয়েশিয়া ও ফিনল্যান্ড যৌথভাবে এ সম্মেলনের আয়োজক হতে এগিয়ে এসেছে।

অস্ট্রেলিয়ার সাবেক ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী জুলি বিশপকে এই গুরুত্বপূর্ণ সভায় মুখ্য ভূমিকা পালনের জন্য আহ্বান জানিয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, “তিনি আমার প্রস্তাব গ্রহণ করেছেন।”

বুধবার চীন সফরে যাওয়ার কথা তুলে ধরে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “প্রেসিডেন্ট শি চিন পিংয়ের সঙ্গে আমার বৈঠক হবে। চীনের বড় বড় ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের সিইওদের সঙ্গেও বৈঠক করব। পৃথিবীর সর্ববৃহৎ চাইনিজ সোলার প্যানেল নির্মাতা প্রতিষ্ঠান লংজি বাংলাদেশে কারখানা স্থাপনের আগ্রহ জানিয়েছে। আমরা তাদের সঙ্গে কাজ করছি।”

দেশের ক্রমবর্ধমান বিদ্যুৎ চাহিদা মেটাতে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ যথাসময়ে শেষ করার ওপর জোর দিচ্ছেন বলেও জানান প্রধান উপদেষ্টা।

‘দুর্নীতিমুক্তি সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারে’

দুর্নীতিকে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সমস্যা হিসাবে চিহ্নিত করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “স্বৈরাচারী সরকার এই দুর্নীতিকে বিশ্বের শীর্ষ স্থানে নিয়ে গেছে। দুর্নীতির ফলে শুধু যে সবকিছুতে অবিশ্বাস্য রকম ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে তাই না, এর ফলে সরকার ও জনগণের সকল আয়োজন বিকৃত হয়ে যায়।

“পুরো বিশ্ব বুঝে গেছে, আমরা জাতি হিসেবে সততার পরিচয় বহন করি না। এটা শুধু জাতীয় কলঙ্কের বিষয় নয়, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে এটা আত্মঘাতী বিষয়।”

দুর্নীতি থেকে মুক্ত হওয়া ছাড়া বাংলাদেশের কোনও গতি নেই মন্তব্য করে তিনি বলেন, “অন্তর্বর্তী সরকার সকল কাজ দুর্নীতিমুক্ত করতে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে যাচ্ছে। এই সরকারের মেয়াদকে দুর্নীতিমুক্ত রাখার চেষ্টার পাশাপাশি আগামী দিনেও দেশের নাগরিককে যেন সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা পুষ্ট দুর্নীতি থেকে মুক্ত রাখতে পারে, সেই ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”

দুর্নীতি প্রতিরোধের অংশ হিসেবে সরকারি সব অফিসে ই-ফাইলিং চালুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানান প্রধান উপদেষ্টা। সরকারি সব কার্যক্রমে অনলাইন সেবা চালুর বিষয়েও সরকার কাজ করছে বলে জানান তিনি।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, সরকারি সিদ্ধান্ত ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার পর বিমানের টিকেট কেনার পুরো প্রক্রিয়াটি অনলাইনে নিয়ে যাওয়ায় বিমানের টিকিটের দাম শতকরা ৫০ থেকে ৭৫ ভাগ কমে গেছে।

রাজস্ব সংস্কার কমিশনের সুপারিশ অনুসারে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বিলুপ্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এর জায়গায় দুটি পৃথক বিভাগ করা হচ্ছে। একটি হলো নীতি প্রণয়ন বিভাগ বা জাতীয় রাজস্ব নীতি বোর্ড, অন্যটি বাস্তবায়ন বিভাগ বা জাতীয় রাজস্ব সংগ্রহ বিভাগ।

এর ফলে সরকারের পছন্দের ব্যক্তিরা হাজার হাজার কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার আর সুযোগ পাবে না।

‘নারীবিদ্বেষ রুখতে সামাজিক আন্দোলন চাই’

অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক ক্ষেত্রে নারীদের বৈষম্যের শিকার হওয়ার কথা তুলে ধরে ড. ইউনূস বলেন, নারীদের অবস্থানের ইতিবাচক পরিবর্তন চান তিনি।

“বাংলাদেশের ইতিহাসে এখন পর্যন্ত যত আন্দোলন-সংগ্রাম হয়েছে, তার মধ্যে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে নারীদের অংশগ্রহণ ছিল সবচাইতে বেশি। গণ-অভ্যুত্থানে নারীরা দুঃসাহসিক ভূমিকা রেখেছে। পুরোনোকে দূরে ঠেলে দিয়ে নতুনের ভিত্তি স্থাপনের প্রতিজ্ঞা নিয়েছে। তারা ব্যাপক সংস্কারের কথা বলেছে। সর্বত্র নারীদের ভূমিকা আরও জোরালো করার কথা বলেছে।”

“আমি মনে করি, জুলাই গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশের প্রেক্ষিত বদলে দিয়েছে। জুলাইয়ের পর নারীদের অবস্থান ইতিবাচকভাবে পরিবর্তন হবে, সেটাই আমরা চাই। আমরা বাংলাদেশ নিয়ে নতুন করে ভাবতে চাই। আর এই নতুন ভাবনায় নারীদের অবস্থান উচ্চতম পর্যায়ে অগ্রাধিকার পাক সেটাই আমরা চাই।”

নারীর প্রতি বিদ্বেষমূলক কথাবার্তা, নারীকে খাটো করে রাখার প্রবৃত্তি যারা ধারণ করে তাদের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা প্রয়োজনের কথা বলেন তিনি।

ড. ইউনূস বলেন, “দেশের সবার মতো আমিও অত্যন্ত আনন্দিত যে এবার নারী ফুটবল টিম দক্ষিণ এশিয়ায় চ্যাম্পিয়ান হয়েছে। দেশজুড়ে আয়োজিত ‘তারুণ্যের উৎসব ২০২৫’ এ বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ২৭ লক্ষ ৪০ হাজার মেয়েরা প্রায় তিন হাজার খেলা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে অংশ গ্রহণ করেছে।”

নারী অধিকারের পাশাপাশি একই রকম গুরুত্বের সঙ্গে সংখ্যালঘুদের নাগরিক অধিকার, সমতল ও পাহাড়ের জাতিগোষ্ঠীর নাগরিক অধিকার রক্ষার কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা।

“কারও কোনও নাগরিক অধিকারকে অবহেলা করলেই এ জাতির জন্য মহাসঙ্কট সৃষ্টি করবে। নাগরিক হিসেবে আমরা কেউ যেন অন্য নাগরিকের অধিকার হরণের দায়ে অভিযুক্ত হতে না পারি সে ব্যাপারে আমাদের নিশ্চিত থাকতে হবে। তাহলেই সত্যিকার নতুন বাংলাদেশ জন্মলাভ করবে।”

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত