Beta
বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৫
Beta
বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৫

যতদিন চাইবে, ততদিন থাকব : ড. ইউনূস

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস রবিবার জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন। ছবি : পিআইডি
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস রবিবার জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন। ছবি : পিআইডি
[publishpress_authors_box]

‘ফ্যাসিবাদী শাসনের’ অবশেষ থেকে দেশকে মুক্ত করতে সংস্কারের জন্য সময় চাইলেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস; রাতারাতি পরিবর্তন প্রত্যাশা না করে সবাইকে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানালেন। নির্বাচনের দিনক্ষণ বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু না বলে তিনি জানালেন, দেশবাসী যতদিন চাইবে, ততদিনই ক্ষমতায় থাকবে তার অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধানের দায়িত্ব নেওয়া ইউনূস রবিবার জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার একটি রূপরেখা তুলে ধরেন।

২৫ মিনিটের এই ভাষণের শুরুতে ৩ মিনিটের মতো সময় তিনি ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের ‘ফ্যাসিবাদী’ শাসনের সমালোচনা করেন। এরপর তিনি আন্দোলনে নিহতদের স্মরণে ‘জুলাই গণহত্যা স্মৃতি ফাউন্ডেশন’ গঠনের কথা জানান।

ব্যাংক খাতে সংস্কার, পুলিশ কমিশন গঠন, ন্যায়পাল নিয়োগসহ নানা ক্ষেত্রে সংস্কারের পরিকল্পনা তুলে ধরে বলেন, প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পূর্ণ করে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজন করা হবে।

“এর লক্ষ্য হবে দুর্নীতি, লুটপাট ও গণহত্যার বিরুদ্ধে একটি জবাবদিহিতামূলক রাজনৈতিক বন্দোবস্তের সূচনা।”

সাংবিধানিক নিয়মের বাইরে গিয়ে গঠিত এই সরকার নির্বাচন কবে করবে, সেই প্রশ্ন ঘুরপাক খাওয়ার মধ্যে সে বিষয়টি নিজেই তোলেন ড. ইউনূস।

তিনি বলেন, “একটা বিষয় সবার জানতে আগ্রহ- কখন আমাদের সরকার বিদায় নেবে? এটার জবাব আপনাদের কাছে, যে কখন আপনারা আমাদের বিদায় দেবেন?”

শান্তিতে নোবেলজয়ী এই বাংলাদেশি বলেন, “আমরা কেউ দেশ শাসনের মানুষ নই। নিজ নিজ পেশায় আমরা আনন্দ পাই। দেশের সংকটকালে ছাত্রদের আহ্বানে আমরা দায়িত্ব নিয়েছি। আমরা সমস্ত শক্তি দিয়ে দায়িত্ব পালন করব।

“কখন নির্বাচন হবে, তা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। আমাদের সিদ্ধান্ত না। দেশবাসীকে ঠিক করতে হবে, কখন আপনারা আমাদের ছেড়ে দেবেন। আমরা ছাত্রদের আহ্বানে এসেছি। তারা আমাদের প্রাথমিক নিয়োগকর্তা। জনসাধারণ আমাদের নিয়োগ সমর্থন করেছে। তারা যখনই বলবে, আমরা চলে যাব।”

বাংলাদেশের সংবিধানে এক সময় নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ছিল। সেই সরকারের দায়িত্ব ছিল তিন মাসের মধ্যে নির্বাচনের আয়োজন করা। কিন্তু ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যাওয়ার পর সংবিধান থেকে সেই ব্যবস্থা বাদ পড়ে।

কিন্তু এবার সরকারের বিদায় এবং সংসদ বিলুপ্তির ঘটনাটি আন্দোলনের কারণে হওয়ায় সাংবিধানিক শূন্যতা পূরণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়েছে।

এই আন্দোলন যে জনপ্রত্যাশা তৈরি করেছে, তা পূরণে অন্তরর্বর্তী সরকারকে সময় দেওয়ার আহ্বান জানান ড. ইউনূস।

তিনি বলেন, “আমরা ক্রমাগতভােব সবাইকে বিষয়টি স্মরণ করিয়ে যাব, যাতে হঠাৎ করে এই প্রশ্ন উত্থাপিত না হয় যে আমরা কখন যাব? তারা যখন বলবে আমরা চলে যাব।

“আমরা সংস্কারের অংশ হিসাবে নির্বাচন কমিশনকেও সংস্কার করব। কমিশনকে যে কোনও সময় আদর্শ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত রাখব।”

ড. ইউনূস জানান, তার সরকারের লক্ষ্য হচ্ছে উদার, গণতান্ত্রিক, বৈষম্যহীন, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়া।

“আমরা এক পরিবার। আমােদর এক লক্ষ্য। কোনও ভেদােভদ যেন আমাদের স্বপ্নকে ব্যাহত করতে না পারে, সেজন্য আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।”

গত ৮ আগস্ট দায়িত্ব নেওয়ার পর দ্বিতীয় সপ্তাহ পেরিয়ে দ্বিতীয়বার জাতির উদ্দেশে ভাষণ নিয়ে আসেন ড. ইউনূস। বরাবরের মতো এদিনও গ্রামীণ চেকের ফতুয়া ও কটি পরে ছিলেন গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. ইউনূস।

‘ফ্যাসিবাদে ধ্বংস’ বাংলাদেশ

আওয়ামী লীগের দেড় দশকের শাসনে বাংলাদেশে সব প্রতিষ্ঠান ধ্বংস হয়ে গেছে দাবি করে দেশ পুনর্গঠনে সবার সহযোগিতা চেয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস।

তিনি বলেন, “লক্ষ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে এবং লক্ষ লক্ষ মা-বোনের আত্মদানের বিনিময়ে যে বাংলাদেশ আমরা পেয়েছিলাম, তা ফ্যাসিবাদ এবং স্বৈরাচারের হাতে ধ্বংস হয়ে গেছে।

“আপনারা দেখেছেন, আমাদের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে তারা কীভাবে শেষ করেছে। দেশের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে গেছে দুর্নীতি। এমন এক দেশে আমাদের দেশ রূপান্তরিত হয়েছে, যেখানে স্বৈরাচারের পিয়নও দুর্নীতির মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার সম্পদ করার মতো অকল্পনীয় কাজ করে গেছে নির্বিবাদে।”

তিনি বলেন, “শিক্ষা খাতকে পঙ্গু করে দিয়েছে, ব্যাংকিং ও শেয়ারবাজার খাতে লুটপাট, প্রকল্প ব্যয়ে বিশ্ব রেকর্ড, অবাধ সম্পদ পাচার, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাকে নিজ দলের পুতুলে রূপান্তর, বাক স্বাধীনতা হরণ, মানবাধিকার হরণ এসবই হিমশৈলের অগ্রভাগ মাত্র।

“ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে ফ্যাসিবাদী সরকার খর্ব করেছে জনগণের সাংবিধানিক ক্ষমতা ও অধিকার। দুঃশাসন, দুর্নীতি, অন্যায়-অবিচার নিপীড়ন, বিচারের নামে প্রহসনের মাধ্যম জনসুরক্ষা বিপন্ন করেছে। জনগণকে নির্যাতন, বঞ্চনা ও বৈষম্যের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। নতুন প্রজন্মের মানুষসহ কোটি কোটি মানুষের ভোটাধিকারকে বছরের পর বছর হরণ করেছে। মানুষের এগিয়ে যাওয়ার পথে সব ধরনের প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে স্বৈরাচার তার নিজের, পরিবারের ও দলের কিছু মানুষের হাতে দেশের মালিকানা তুলে নিয়েছে।”

এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেয়ে বৈষম্যহীন, শোষণহীন, কল্যাণময় এবং মুক্ত বাতাসের রাষ্ট্রের স্বপ্ন নিয়ে ছাত্র-জনতা আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল মন্তব্য করে ড. ইউনূস বলেন, “আমি তাদের সেই স্বপ্নপূরণে অঙ্গীকারবদ্ধ। সবাইকে এই শুভলগ্নে তাদের স্বপ্নপূরণে সমস্ত শক্তি নিয়ে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছি।

“গণরোষের মুখে ফ্যাসিবাদী সরকারপ্রধান দেশ ত্যাগ করার পর আমরা এমন একটি দেশ গড়তে চাই, যেখানে প্রতিটি নাগরিকের মানবাধিকার থাকবে পুরোপুরি সুরক্ষিত। আমাদের লক্ষ্য একটিই। উদার, গণতান্ত্রিক, বৈষম্যহীন, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ।”

কোন কোন খাতে সংস্কার

ভাষণে বিভিন্ন খাতে সংস্কারের পরিকল্পনা তুলে ধরেন ড. ইউনূস।

ব্যাংক কমিশন গঠন : ব্যাংক খাতে দীর্ঘমেয়াদী সংস্কারের জন্য ব্যাংক কমিশন গঠন করা হবে। এই খাতে দক্ষ জনবল নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। আর্থিক খাতে সার্বিক পরিস্থিতি এবং সংস্কার বিষয়ে একটি রূপকল্প তৈরি করা হবে, যা দ্রুত জনসম্মুখে প্রকাশ করা হবে। পুঁজিবাজার, পরিবহন খাতসহ যেসব ক্ষেত্রে চরম বিশৃঙ্খলা বিরাজ করছে, তা নিরসনে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

বিচার বিভাগ : বিচার বিভাগকে দুর্নীতি ও দলীয় প্রভাবমুক্ত করতে কার্যক্রম শুরু হয়েছে। একটি সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম, খুন, অপহরণ এবং আয়নাঘর তৈরির মতো সব অপকর্মের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা হবে। এসব অপকর্মের সঙ্গে জড়িত সকলের বিচার নিশ্চিত করা হবে। তালিকা প্রস্তুত করে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করা হবে। দুর্নীতি ও সম্পদ পাচারের বিচার করা হবে।

পুলিশ কমিশন : আইনশৃঙ্খলার ক্ষেত্রে জনমুখী ও দলীয় প্রভাবমুক্ত ও জবাবদিহিমূলক কাঠামো সৃষ্টির লক্ষ্যে পুলিশ কমিশন গঠন করা হবে। জাতিসংঘের তদন্ত প্রতিবেদন, দায়িত্বপ্রাপ্ত সব সংস্থা ও জনগণের সাথে মতবিনিময়ের মাধ্যমে কমিশনের নেতৃত্বে প্রয়োজনীয় সংস্কার করা হবে। বাংলাদেশকে আর কোনও দিন কেউ যেন কোনও পুলিশি রাষ্ট্রে পরিণত না করতে পারে তার ব্যবস্থা নেওয়া হবে, আশ্বাস দিয়েছেন ড. ইউনূস।

অবাধ তথ্য প্রবাহ : তথ্যের অবাধ প্রবাহ ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হবে। এ লক্ষ্যে বিদ্যমান আইনি ও অন্যান্য বাধা অপসারণ করা হবে। মত প্রকাশের স্বাধীনতা বাধাগ্রস্ত করে এমন সব আইনের নিপীড়নমূলক ধারা সংশোধন করা হবে। বিদেশি সংবাদকর্মীদের এদেশে আসার ওপর অলিখিত নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়েছে।

শিক্ষা : শিক্ষাক্ষেত্রে পূর্ণাঙ্গ সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হবে। শিক্ষার্থীদের জন্য সৃজনশীল, নিরাপদ ও ভীতিমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করা সরকারের অঙ্গীকার। পাঠ্যক্রমকেও যুগোপযোগী করার কাজও দ্রুত শুরু করা হবে।

দুর্নীতির শ্বেতপত্র, ন্যায়পাল : গত ১৫ বছরের দুর্নীতি, অর্থ পাচার ও জনস্বার্থবিরোধী চুক্তি, প্রকল্পের নামে লুটপাটের তথ্য নিয়ে একটি শ্বেতপত্র প্রণয়নের জন্য ইতোমধ্যে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে সংবিধানের ৭৭ অনুচ্ছেদে প্রতিশ্রুত ন্যায়পাল নিয়োগে অধ্যাদেশ প্রণয়ন করা হবে। উপদেষ্টাদের সম্পদের তথ্য প্রকাশ করা হবে। পর্যায়ক্রমে সরকারের কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রেও তা নিয়মিত এবং বাধ্যতামূলক করা হবে।

কৃষি-স্বাস্থ্য-পরিবেশ : কৃষক যেন তার উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য পায়, তা নিশ্চিত করা হবে। স্বাস্থ্য খাতে প্রয়োজনীয় সংস্কার করা হবে। এই খাতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে জবাবদিহির আওতায় আনা হবে। হাসপাতালগুলোকে আধুনিকায়নের উদ্যোগ নেওয়া হবে এবং সেখানে চিকিৎসকসহ বিশেষজ্ঞদের নিয়মিত উপস্থিতি নিশ্চিত করা হবে। প্রকৃতি ধ্বংসকারী উন্নয়ন করা হবে না। শুধু জিডিপি একটি দেশের উন্নয়নের মাপকাঠি  হতে পারে না। কেননা নদী-নালা, খাল-বিল, পাহাড়, বন, মাটি আর বাতাস ধ্বংস আর দূষিত করে, যে উন্নয়ন হয় তা দীর্ঘ মেয়াদী টেকসই নয়। জলবায়ু পরিবর্তন রোধ করতে এবং আগামী প্রজন্মের জন্য সুস্থ একটি পৃথিবী রেখে যেতে কার্বন নিঃসরণ শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনার বিকল্প নেই। পরিবেশ ও জলবায়ু রক্ষায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে এই কার্যক্রমে তরুণ সম্প্রদায়কে সম্পৃক্ত করা হবে।

বন্যা নিয়ন্ত্রণ : বন্যাকবলিত এলাকার মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে সরকারের সঠিক সহায়তা দেওয়ার জন্য সরকারের যত কার্যক্রম আছে, তা সচল করা হয়েছে। বন্যা পরবর্তী কার্যক্রম নেওয়া হয়েছে এবং ভবিষ্যতে বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য করণীয় কী, তা স্থির করার জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

পররাষ্ট্র নীতি : সব রাষ্ট্রের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখা হবে। পররাষ্ট্র নীতির ভিত্তি হবে- পারস্পরিক আস্থা, বিশ্বাস ও সহযোগিতা। মানবাধিকার আইনসহ সব আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি শ্রদ্ধা থাকবে। গুম বিষয়ক আন্তর্জাতিক চুক্তির পক্ষরাষ্ট্র হওয়াসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। রোহিঙ্গা সমস্যার বাস্তবসম্মত সমাধানের লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে কাজ করে যাবে সরকার।

প্রবাসী : বিদেশগামী এবং প্রত্যাবর্তনকারী প্রত্যেক প্রবাসী শ্রমিককে মর্যাদা ও সম্মানের সঙ্গে দেশে আসা এবং যাওয়া নিশ্চিত করা হবে। রেমিটেন্স অফিসিয়াল চ্যানেলে দেশে পাঠানোর আহ্বান। কী কী ব্যবস্থা নিলে অফিসিয়াল চ্যানেলে অর্থ পাঠানো সহজ হবে, সেই পরামর্শ নেওয়া হবে প্রবাসীদের কাছে।

‘জুলাই গণহত্যা স্মৃতি ফাউন্ডেশন’ গঠন

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নিহতদের স্মরণে অতি দ্রুত ‘জুলাই গণহত্যা স্মৃতি ফাউন্ডেশন’ নামে একটি ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস।

এই প্রক্রিয়া শেষ পর্যায়ে এসেছে জানিয়ে তিনি বলেন, “আপনাদের সবার এবং বিদেশে অবস্থানরত ভাই-বোনদের অনুদান এই প্রতিষ্ঠানে পাঠানোর জন্য অনুরোধ করছি। আমি ব্যক্তিগতভাবে এই প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান পদ গ্রহণ করেছি।”

ড. ইউনূস আরও বলেন, “আমরা ইতোমধ্যে ছাত্র-জনতার বিপ্লবকে নস্যাৎ করতে যে শত শত মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা দায়ের করা হয়েছিল, তার অধিকাংশ প্রত্যাহার করেছি এবং আটক ছাত্র-জনতার মুক্তিলাভের ব্যবস্থা করেছি।

“পর্যায়ক্রমে মিথ্যা ও গায়েবি সকল মামলার ক্ষেত্রে অনুরূপ ব্যবস্থা গ্রহণ করে মানুষকে দুঃসহ ভোগান্তি থেকে মুক্ত করা হবে। ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে গণ-অভ্যুত্থানে সব শহীদের পরিবারকে পুনর্বাসন করা হবে। আহত সব শিক্ষার্থী ও জনতার চিকিৎসার সম্পূর্ণ ব্যয় সরকার বহন করবে।”

ড. ইউনূস বলেন, “দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী, পুলিশ বিজিবি, র‌্যাবকে গুম, নির্যাতনের কাজে লাগিয়ে তাদের কলঙ্কিত করা হয়েছে। তারা দেশের গৌরব। তাদেরও কিছু অতি উৎসাহী সদস্যের কারণে পুরো বাহিনীকে আমরা কলঙ্কিত দেখতে চাই না।

“আমরা অপরাধীদের চিহ্নিত করতে চাই এবং তাদের শাস্তি দিতে চাই। যেন ভবিষ্যতে কারও হুকুমে দেশপ্রেমিক কোনও বাহিনীর, পুলিশের, র‌্যাবের কোনও সদস্য হত্যাকাণ্ড, গুম ও অত্যাচারে জড়িত হওয়ার সাহস না করে।”

যারা গুম হয়েছে, হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে, তাদের তালিকা প্রস্তুত করতে নির্দেশ দেওয়ার কথাও বলেন তিনি।

ধৈর্য ধরার আহ্বান

বর্তমান পরিস্থিতিতে সবাইকে ধৈর্য ধরার পাশাপাশি জবরদস্তিমূলক কিছু না করতে সবার প্রতি আহ্বান জানান প্রধান উপদেষ্টা।

তিনি বলেন, “আমি শুধু বলব, আপনােদর একটু ধৈর্য ধরতে হবে। এখনই সব দাবি পূরণ করার জন্য জোর করা, প্রতিষ্ঠােন ঢুেক ব্যক্তিবিশেষকে হুমকির মধ্যে ফেলা, মামলা গ্রহণের জন্য চাপ সৃষ্টি করা, িবচােরর জন্য গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিেক আদালতে হামলা করে আগেই এক ধরনের িবচার করে ফেলার যে প্রবণতা, তা থেেক বের হতে হবে।

“ছাত্র-জনতার বিপ্লবের গৌরব ও সম্ভাবনা এসব কাজ ম্লান হয়ে যাবে। নতুন বাংলাদেশ গড়ার প্রচেষ্টাও এতে ব্যাহত হবে।”

রাতারাতি পরিস্থিতি বদলে দেওয়া যায় না- একথা বলে তিনি আশ্বাসের সুরে বলেন, “আমরা ইতোমধ্যে সংশোধনমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে আরম্ভ করেছি। তবে প্রশাসনকে গতিশীল রাখতে এবং একইসঙ্গে সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি অনুসরণ করে সঠিক সিদ্ধান্তে উপনীত হতে সময় প্রয়োজন। সেজন্য সকলকে ধৈর্য ধরার অনুরোধ জানাচ্ছি।”

দাবি-দাওয়া নিয়ে বিভিন্ন মহলের রাজপথে নামার প্রতিক্রিয়ায় ড. ইউনূস বলেন, “আমাদের দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে প্রতিদিন সচিবালয়ে, আমার অফিসের আশপাশে, শহরের বিভিন্ন স্থানে সমাবেশ করা হচ্ছে। গত ১৬ বছরের অনেক দুঃখ-কষ্ট আপনাদের জমা আছে, সেটা আমরা বুঝি। আমাদের যদি কাজ করতে না দেন, তাহলে এই দুঃখ ঘোচানোর সকল পথ বন্ধ হয়ে থাকবে।

“আপনাদের কাছে অনুরোধ, আমাদের কাজ করতে দিন। আপনাদের যা চাওয়া, তা লিখিতভাবে আমাদের দিয়ে যান। আইনসঙ্গতভাবে যা কিছু করার আছে, আমরা অবশ্যই তা করব। কিন্তু আমাদের ঘেরাও করে এই গুরুত্বপূর্ণ দিনগুলোকে আমাদের কাজে বাধা দেবেন না।”

রাষ্ট্রে কোন কোন ক্ষেত্রে সংস্কারের প্রয়োজন তা জানাতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান রেখে তিনি বলেন, “আমরা বিভিন্ন সংস্কােরর কাজ শুরু করেছি। দেশবাসীেক অনুরোধ করব, একটা আলোচনা শুরু করতে, আমরা সর্বনিম্ন কী কী কাজ সম্পূর্ণ করে যাব, কী কী কাজ মোটামুটি করে গেলে হবে। এই আলোচনার মাধ্যমে আমরা একটা দিক-নির্দেশনা পেতে পারি। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক আলোচনা থেকেই আসবে।

“এই দিক নির্দেশনা না পেলে আমরা দাতা সরকার এবং আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানসমূহের সঙ্গে আলোচনায় দৃঢ়তার সঙ্গে অগ্রসর হতে পারছি না।”

“নতুন বাংলােদশ গড়ার যে সুযোগ ছাত্র-জনতার রক্তের বিনিময়ে আমরা অর্জন করলাম, আমরা আমাদের মতানৈক্যের কারণে সেটা যেন হাতছাড়া না করে ফেলি, এটা আমরা নিশ্চিত করতে চাই। এ সুযোগ এবার হারিয়ে ফেললে আমরা পরাজিত হয়ে যাব,” বলেন ড. ইউনূস।  

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত