দেশের চলমান পরিস্থিতিতে জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে রাজনৈতিক দলগুলোকে বৈঠকে ডেকেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। পাশাপাশি ছাত্র আন্দোলনের নেতা এবং ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গেও আলোচনা করবেন তিনি।
বাংলাদেশ-ভারত কূটনৈতিক সম্পর্কে টানাপড়েনের মধ্যে হিন্দু ধর্মীয় নেতা চিন্ময় ব্রহ্মচারীকে গ্রেপ্তারের পর উত্তেজনা আরও বাড়ার মধ্যে এই সিদ্ধান্ত তিনি নেন বলে বাসস জানিয়েছে।
রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদ সংস্থাটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “দেশের বাইরে, বিশেষ করে ভারতীয় গণমাধ্যমে বাংলাদেশকে নিয়ে যে অপতথ্য ছড়ানো হচ্ছে, তার বিরুদ্ধে জাতীয় ঐক্য তৈরির লক্ষ্যে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস আগামীকাল (বুধবার) সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করবেন।”
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানান। তিনি বলেন, তার আগে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন প্রধান উপদেষ্টা। বৃহস্পতিবার বৈঠক করবেন ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে।
“প্রধান উপদেষ্টা সবার সঙ্গে সংলাপের আহ্বান করেছেন। তাদের সঙ্গে তিনি বসবেন। বৈঠকের উদ্দেশ্য জাতীয় ঐক্য। তিনি জাতীয় ঐক্যের ডাক দেবেন,” বলেন প্রেস সচিব।
ঢাকার ফরেইন সার্ভিস একাডেমিতে এই সংবাদ সম্মেলনে প্রেস সচিবের সঙ্গে উপ প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার ও অপূর্ব জাহাঙ্গীরও ছিলেন।
ভারতের আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাই কমিশনে হামলার প্রেক্ষাপটে ঢাকায় দেশটির রাষ্ট্রদূত প্রণয় ভার্মাকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলবের পরপরই এই সংবাদ সম্মেলন হয়।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা ক্ষমতা ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেওয়ার পর থেকে ঢাকা-দিল্লি কূটনৈতিক সম্পর্কে টানাপড়েন চলছে।
এরপর গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন সম্প্রতি স্বীকারও করেছিলেন, দুই দেশের সম্পর্ক স্বাভাবিত মাত্রায় নেই।
এরমধ্যে গত ২৫ নভেম্বর হিন্দু সাধু চিন্ময় ব্রহ্মচারীকে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় গ্রেপ্তার করার পর উত্তেজনা আরও বাড়ে। দুই দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পাল্টাপাল্টি বিবৃতির পর তা রাজপথে বিক্ষোভেও গড়িয়েছে।
সোমবার ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলায় এমনই এক বিক্ষোভ থেকে বাংলাদেশ মিশনে হামলা হয়। হামলাকারীরা দূতাবাসে ভাংচুর চালানোর পাশাপাশি বাংলাদেশের পতাকাও পোড়ায়।
সেই ঘটনা নিয়ে বাংলাদেশে ক্ষোভ-বিক্ষোভের মধ্যে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার উদ্যোগ নিলেন ড. ইউনূস।
জাতীয় ঐক্য গঠনের গুরুত্ব তুলে ধরে শফিকুল আলম বলেন, “বাংলাদেশকে নিয়ে অপতথ্য ছড়ানোর একটা প্রয়াস আমরা দেখছি এবং অনেকাংশে ভারতীয় গণমাধ্যম ব্যাপকভাবে এই কাজটি করছে।
“এটার জন্য জাতীয়ভাবে ঐক্য তৈরি করে আমাদেরকে বলতে হবে, তোমরা দেখ আমাদের এখানে প্রকৃতপক্ষে কী হচ্ছে?”
“অপপ্রচার বন্ধে জাতীয় ঐক্যটা খুব জরুরি। অপতথ্য ছড়ানোর সাথে দেশের ইমেজের প্রশ্ন জড়িত। তাই আমাদের পত্রিকাগুলোকে বলব, আপনারা এই ভয়াবহ তথ্য সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রকৃত ঘটনা তুলে ধরুন,” বলেন তিনি।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে অপতথ্য বন্ধে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সেদেশের সরকারের কাছে সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে কি না- এ প্রশ্নের উত্তরে প্রেস সচিব বলেন, “আগস্টের শেষের দিকে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কথা হয়, সেখানে অধ্যাপক ইউনূস ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে বলেছিলেন ভারতীয় সাংবাদিকদের বাংলাদেশে আসার ক্ষেত্রে উৎসাহিত করুন, তারা বাংলাদেশে এসে দেখুক প্রকৃত ঘটনা কী বা সংখ্যালঘু নির্যাতন হয়েছে কি না বা আদৌ এমন ঘটনা ঘটছে কি না?
“ভারতীয় সাংবাদিকরা নির্দিষ্ট কিছু জায়গা থেকে তথ্য নিচ্ছে, সেখান থেকে তারা ভুল তথ্য পাচ্ছে। তারা তথ্য পাচ্ছে তাদের লাইকিংয়ে (পছন্দে) যারা পড়ছেন, সেটা হতে তথ্য নিচ্ছেন। অনেক ক্ষেত্রে নাম ছাড়া তথ্য নিচ্ছেন। আবার তারা বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ থেকেও তথ্য নিচ্ছেন।”
বাংলাদেশ নিয়ে অপতথ্য চালানোর কারণেই আগরতলায় বাংলাদেশ মিশনে হামলার ঘটনাটি ঘটেছে দাবি করে শফিকুল বলেন, “এটার জন্য দায় চাপাব ভারতীয় গণমাধ্যমকে। এ গণমাধ্যম কোনও তথ্য নিশ্চিত হওয়া ছাড়া মিথ্যা অপতথ্য ছড়াচ্ছে। তারা আগেই নির্ধারণ করে দিচ্ছে, বাংলাদেশে কী হচ্ছে? ফলে ভারতীয় জনগণ সহিংসতা করছে।”
শুধু ভারতেরই নয়, আন্তর্জাতিক সব সংবাদমাধ্যমকেও বাংলাদেশ পরিস্থিতি দেখার আমন্ত্রণ জানান প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব।
তিনি বলেন, “অপতথ্য প্রচারের বিরুদ্ধে আমাদের নাগরিক সমাজ, রাজনৈতিক দল, প্রবাসী সবাই মিলে সোচ্চার হওয়া উচিৎ। অপতথ্য ছড়ানোর মাধ্যমে আমাদের পুরো জাতিকে একটা কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর চেষ্টা চলছে।”