আবেগঘন মুহূর্তই তৈরি হয়েছিল সিলেটে। জাকের আলীর খেলা দেখতে প্রেসবক্সে এসেছিলেন তার বোন শাকিলা ববি। ৩৪ বলে ৬৮ রানের ইনিংসের পর সংবাদ সম্মেলনে পেশাদার সাংবাদিক হিসেবে প্রশ্নও করেছিলেন ববি।
আজ (শুক্রবার) সেই বড় বোনকে জাকের আলীর বিশেষ সাক্ষাৎকার নেওয়ার ব্যবস্থা করে দেয় খোদ বিসিবি। সেখানেও আবেগি হয়ে পড়ছিলেন দুই ভাই বোন। প্রথমেই ববি জানতে চান, ‘‘জাকের আল অনিক ন্যাশনাল টিমে আসলেন কেমন লাগছে?’’
জাকের আলীর জবাব, ‘‘আসলে ফিলিংসটা তো অনেক ভালো, আলহামদুলিল্লাহ। সবার স্বপ্ন থাকে জাতীয় দলের হয়ে খেলা। ছোটবেলা থেকেই ইচ্ছা ছিল জাতীয় দলের হয়ে খেলব। ম্যাচ জিতাব। আলহামদুলিল্লাহ। ভালো লাগছে।’’
ববির পরের প্রশ্ন, ‘‘যেহেতু ন্যাশনাল টিমের কন্ডিশনটা আপনার কাছে একপ্রকার নতুন (আগে এশিয়ান গেমস তিনটা ম্যাচ খেলেছেন)। তারপরও এই হোম কন্ডিশনে মানিয়ে নিতে কেমন লাগছে?’’
জবাবে বোনকে জাকের জানালেন, ‘‘জাতীয় দলের পরিবেশটা আমার কাছে খুব ভালো লেগেছে, বিশেষ করে প্রথম দিন আমাকে যেভাবে সবাই ওয়েলকাম করেছে। এই জিনিসটা আমার কাছে স্পেশাল ছিল। আমার কাছে মনে হয়েছে, আমি স্পেশাল কেউ এসেছি। জিনিসটা আমার কাছে খুবই ভালো লেগেছে। সবাই আমাকে যেভাবে বরণ করে নিয়েছে, জিনিসটা আমার কাছে আসলেই স্পেশাল ছিল।’’
এরপর পারিবারিক একটা প্রশ্ন করেন ববি, ‘‘আপনার বাবা নেই। উনার কিন্তু স্বপ্ন ছিল যে আপনি ন্যাশনাল টিমে খেলবেন, উনি মাঠে বসে থাকবেন। এখন উনি নেই (মারা গেছেন) আর আপনি জাতীয় দলে। এই বিষয়টা নিয়ে যদি কিছু বলেন?’’
আবেগী প্রশ্নে নিজেকে সামলে নেন জাকের। তবে পেশাদারদের মতই বলেন,‘‘আসলে সবার ভূমিকা ছিল। বাবার ভূমিকা ছিল, ভাইয়ের ভূমিকা ছিল, আপনারও ভূমিকা ছিল। আপনি অনেক কষ্ট করেছেন। আমাকে প্র্যাকটিসে নিয়ে গেছেন। আসলে কারও ভূমিকা ছাড়ার মত উপায় নাই। সবারই স্বপ্ন ছিল যে আমাকে এই জায়গাটায় দেখা। এখন আমার দায়িত্ব আমি এই জিনিসটা কীভাবে আরও সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি। নিজের দেশকে জেতাতে পারি। আমার মনে হয় এখন কাজটা আরও বেড়েছে।’’
ববির পরের প্রশ্ন,‘‘হবিগঞ্জের মানুষ কিন্তু আপনার নামে অনেক ক্রেজি। বরাবরই ছিল। আমার মনে হয় হবিগঞ্জের মানুষের অনেক দোয়া আছে আপনার জন্য।’’
নিজের শহরের মানুষদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান জাকের, ‘‘হ্যাঁ, হবিগঞ্জের সবাই ছোটবেলা থেকে আমার জন্য দোয়া করত। সবাই চাইত আমি যেন জাতীয় দলে খেলি। যখনই যেতাম, ঈদে (বিশেষ করে) সবাই জানতে চাইত কবে জাতীয় দলে খেলবি। সবাইকে বলতাম ধৈর্য ধরেন। আমার জন্য দোয়া করেন। ইনশাল্লাহ খেলব।’’
এরপর মাইক্রোফোন নিজের হাতে নেন জাকের। উল্টো প্রশ্ন করেন বোনকে,‘‘এবার আমি একটা প্রশ্ন করি। আমাকে ভাই হিসেবে জাতীয় দলে খেলতে দেখে আপনার কেমন লাগছে?’’
সাংবাদিক হয়ে ভাইয়ের প্রশ্নের জবাবে ববি বলেন,‘‘এই অনুভূতি আসলে ভাষায় প্রকাশ করার মত না। অনেক দিন যাবত চাইছিলাম সেই ছোটবেলা থেকে। এটা অনেক আসলে ভালো লাগার মুহূর্ত। মনে হয় এটা আপনিও ভালো বুঝবেন। কারণ আপনি জানেন যে আমাদের ইচ্ছাটা আসলে কতটুক প্রখর ছিল। প্রেস বক্সে বসে চোখ দিয়ে পানি আসছিল। বাসায় আমাদের সবাই কান্না করছিল, আপনাকে টিভিতে খেলতে দেখে।’’
এরপর বোনকে আলিঙ্গন করে সাক্ষাৎকার পর্ব শেষ করেন জাকের।