Beta
শনিবার, ১২ জুলাই, ২০২৫
Beta
শনিবার, ১২ জুলাই, ২০২৫

রাশিয়ায় মোদী, চটেছেন জেলেনস্কি

Modi_Putin_Zelensky
[publishpress_authors_box]

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর রাশিয়া সফরের কড়া সমালোচনা করেছেন দেশটির সঙ্গে যুদ্ধরত ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি।

ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীকে মস্কোতে দেখে হতাশা প্রকাশ করে জেলেনস্কি বলেছেন, শান্তি প্রচেষ্টার জন্য একটি ‘ধ্বংসাত্মক আঘাত”।

মোদীর সফরের দিন সোমবারই কিয়েভের একটি শিশু হাসপাতালে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় রাশিয়া, যার প্রেক্ষাপটে জেলেনস্কির এই ক্ষোভ।

নরেন্দ্র মোদী সোমবার সকালে মস্কোর বাইরের শহরতলীতে রুশ প্রেসিডেন্টের বাসভবন নভো-ওগারিওভোতে ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে দেখা করেন। ওই সময় ইউক্রেনের বিভিন্ন শহরে বৃষ্টির মতো রুশ ক্ষেপণাস্ত্র বর্ষণ হচ্ছিল।

প্রায় আড়াই বছর আগে পুতিন ইউক্রেনে অভিযান শুরুর পর এই প্রথম রাশিয়া সফরে গেলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রঅ। দুদিনের সফরের প্রথম দিনে প্রকাশিত বিভিন্ন ছবি এবং ভিডিওতে দেখা যায়, দুই নেতা আলিঙ্গন করছেন, চা পান করছেন, বৈদ্যুতিক গাড়িতে চড়েছেন এবং একটি ঘোড়ার শো দেখছেন।

জেলেনস্কি সোমবার এক্সে এক পোস্টে বলেন, “বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের নেতাকে এমন একটি দিনে মস্কোতে বিশ্বের সবচেয়ে রক্তাক্ত অপরাধীকে আলিঙ্গন করতে দেখা ভীষণ হতাশাজনক এবং শান্তি প্রচেষ্টার জন্য একটি বিধ্বংসী আঘাত।”

সোমবার সকালে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভসহ নিপ্রো, ক্রিভি রিহ, স্লোভিয়ানস্ক ও ক্রামাতোরস্ক এর মতো জনবহুল শহরগুলোতে রাশিয়া বৃষ্টির মতো ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়।

এই হামলায় কিয়েভে তিন শিশুসহ ২৭ জন নিহত হয়। কিয়েভের ওখমাদিত হাসপাতালে ২ জন নিহত এবং অন্তত ১৬ জন আহত হয়।

হাসপাতালটি ইউক্রেনের বৃহত্তম শিশু চিকিৎসা কেন্দ্র এবং সারাদেশ থেকে গুরুতর অসুস্থ শিশুরা এখানে চিকিৎসা নিতে আসে।

তবে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দাবি, তাদের বাহিনী “ইউক্রেনের সামরিক শিল্প স্থাপনা এবং ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনীর বিমান ঘাঁটিতে” সুনির্দিষ্টভাবে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলা করেছে।

প্রমাণ সরবরাহ না করেই রুশ মন্ত্রণালয়ের আরও দাবি, হাসপাতালে হামলার যেসব ছবি ও ভিডিও প্রচার করা হচ্ছে তা ইউক্রেনের নিজের ছোড়া বিমান প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্রের বিস্ফোরণে ঘটেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ওয়াশিংটনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ন্যাটো শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজন করার একদিন আগে রাশিয়া ইউক্রেনে এই ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো। ওই সম্মেলনে আজ কিয়েভের জন্য ন্যাটো জোটের সামরিক, রাজনৈতিক এবং আর্থিক সহায়তার বিষয়ে নতুন ঘোষণা আসবে।

এদিকে সোমবারের আতিথেয়তার জন্য পুতিনকে এক্সে এক পোস্টে ধন্যবাদ জানিয়েছেন মোদী। পোস্টে মোদী বলেন, “আগামীকালও আমাদের আলোচনার জন্য অপেক্ষা করছি, যার মধ্য দিয়ে ভারত ও রাশিয়ার বন্ধুত্বের বন্ধন আরও দৃঢ় হবে।”

পুতিনের সঙ্গে মঙ্গলবারও ক্রেমলিনে মোদীর আনুষ্ঠানিক আলোচনা হবে। মোদীর এই সফর চীনের উপর রাশিয়ার গভীর নির্ভরতা সত্ত্বেও নয়াদিল্লি ও মস্কো যে কাছাকাছি রয়েছে তারই প্রমাণ। এ ছাড়া রাশিয়াকে একঘরে করতে পশ্চিমাদের প্রচেষ্টায় সর্বশেষ গর্ত হিসেবে দেখা হচ্ছে।

মস্কোর সঙ্গে ভারতের দীর্ঘদিনের সম্পর্ক রয়েছে এবং নয়াদিল্লি সামরিক সরঞ্জামের জন্যও ক্রেমলিনের উপর অনেক বেশি নির্ভরশীল। পশ্চিমাদের হাজারো নিষেধাজ্ঞার মুখে ভারত রাশিয়ার কাছ থেকে অপরিশোধিত তেল কেনা বাড়িয়ে পুতিনকেও অর্থনৈতিকভাবে টিকে থাকতে সহায়তা করছে।

সফরের আগে মোদী তার কার্যালয় থেকে এক বিবৃতিতে বলেন, “আমার বন্ধু পুতিনের সঙ্গে আমাদের দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার সমস্ত দিক পর্যালোচনা করা হবে এবং আমরা বিভিন্ন আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক ইস্যুতে দৃষ্টিভঙ্গি শেয়ার করব। আমরা একটি শান্তিপূর্ণ ও স্থিতিশীল অঞ্চলের জন্য সহায়ক ভূমিকা পালন করতে চাই।”

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র সোমবার এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে বলেছেন, রাশিয়ার সঙ্গে তাদের সম্পর্কের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র ভারতের কাছে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বলেছেন, “আমি প্রধানমন্ত্রী মোদীর সরকারি মন্তব্যের দিকে খেয়াল রাখব যে, তিনি কী বিষয়ে কথা বলেছেন। তবে আমি রাশিয়ার সঙ্গে তাদের সম্পর্কের বিষয়ে ভারতের কাছে আমাদের উদ্বেগ সরাসরি স্পষ্ট করে দিয়েছি।

“আমরা আশা করব যে, ভারত এবং অন্য কোনও দেশ যখন রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত হবে, তখন রাশিয়াও জাতিসংঘের সনদের প্রতি সম্মান দেখাবে। ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতাকে রাশিয়ার সম্মান করা উচিৎ।”

ভারত ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধ করার এবং শান্তি পুনরুদ্ধারের আহ্বান জানালেও জাতিসংঘে ইউক্রেনের পক্ষের প্রস্তাবগুলোতে ভোটদান থেকে বিরত থেকেছে। ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার নিন্দা করা থেকেও বিরত রয়েছে।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল জানান, প্রধানত জ্বালানি সহযোগিতার ফলস্বরুপ দুই দেশের মধ্যে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে প্রায় ৬৫ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য হয়। তবে এই অর্থের বেশিরভাগই রাশিয়ার দিকে প্রবাহিত হয়েছে।

সফরের আগে মোদী বলেন, পুতিনের সঙ্গে তার আলোচনায় বাণিজ্য ভারসাম্যহীনতা কমানো একটি প্রধান বিষয় হবে।

গত মাসে ভারতের জাতীয় নির্বাচনে বিরল তৃতীয় মেয়াদে জয়ী হওয়ার পর এটি মোদীর প্রথম দ্বিপাক্ষিক সফর।

রুশ রাষ্ট্রপতির সহযোগী ইউরি উশাকভ বলেছেন, ক্রেমলিনও মোদীর সফরকে অনেক গুরুত্ব দিয়ে দেখছে।

তথ্যসূত্র : সিএনএন

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত