আড়াই বছরের বেশি সময় ধরে রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ লড়ছে ইউক্রেন। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে শুরু হওয়া এই যুদ্ধে শেষ হওয়ার কোনও লক্ষণই নেই।
ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটতে পারে- এমন আশাবাদ থাকলেও ট্রাম্পের জয়ের পর সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র ব্যবহার করে রাশিয়ার অভ্যন্তরে ইউক্রেনের হামলা এবং এর জবাবে ইউক্রেনে রাশিয়ার নতুন ধরনের হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় উল্টো যুদ্ধের তীব্রতা আরও বাড়ার ইঙ্গিত মিলছে।
এমন পরিস্থিতিতে এই যুদ্ধ শেষ করার সম্ভাব্য পথ খুঁজে পাওয়ার কথা জানিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি।
তার মতে, ইউক্রেনের যেসব অঞ্চল এখনও রাশিয়া দখল করতে পারেনি সেগুলো পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর অধীনে নেওয়া গেলে এই যুদ্ধ শেষ হতে পারে।
বিবিসি জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার স্কাই নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে যুদ্ধ বন্ধে সম্ভাব্য এই উপায় সম্পর্কে ধারণা দেন জেলেনিস্ক।
তিনি অবশ্য প্রথমে ইউক্রেনের পুরো সীমানাসহ ন্যাটোর সদস্য পদ চেয়েছেন। এরপর তার বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে থাকা অঞ্চলকে ন্যাটোর প্রতিরক্ষার আওতায় নেওয়ার কথা বলেন।
জেলেনস্কির মতে, তার বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে থাকা ইউক্রেনকে ‘ন্যাটো ছাতার নিচে’ নেওয়া এবং যুদ্ধের ‘উত্তপ্ত পর্বের’ সমাপ্তি টানার চেষ্টা করা উচিৎ।
তাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, তিনি ন্যাটোর সদস্যপদ গ্রহণ করবেন কি-না। তবে তা হবে কেবলমাত্র তার বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে থাকা অঞ্চলগুলো নিয়ে।
জবাবে জেলেনস্কি বলেন, তিনি রাজি আছেন। তবে প্রথমে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সীমান্তসহ সমগ্র ইউক্রেনকে ন্যাটো সদস্যপদ দিলেই তিনি তা মানবেন।
জেলেনস্কি বলেন সেই স্বীকৃতি পেলে ইউক্রেন পরে ‘কূটনৈতিক উপায়ে’ রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণাধীন অঞ্চল ফেরত পাওয়ার জন্য আলোচনার চেষ্টা করতে পারবে।
তবে প্রস্তাবটি শুধুই অনুমানমূলক। জেলেনস্কি যেমন উল্লেখ করেছেন, কেউ এখনও এই ধরনের প্রস্তাব দেয়নি। ন্যাটো কখনও এমন পদক্ষেপ বিবেচনা করে দেখবে কিনা তা নিয়েও সংশয় রয়েছে।
জেলেনস্কি বলেন, “ইউক্রেন কখনোই এ ধরনের প্রস্তাব বিবেচনা করেনি, কারণ আনুষ্ঠানিকভাবে কেউ আমাদের এমন প্রস্তাব দেয়নি।”
তিনি বলেন, বর্তমানে রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে থাকা অংশগুলো সহই পুরো ইউক্রেনকে ন্যাটোর সদস্যপদ দিতে হবে।
“আপনি শুধু দেশের একটি অংশকে আমন্ত্রণ জানাতে পারেন না। কারণ এর মধ্য দিয়ে শুধু ওই অংশকেই ইউক্রেনের বলে এবং বাকি অংশকে রাশিয়ার বলে স্বীকৃতি দেওয়া হয়ে যাবে।”
জেলেনস্কি আরও বলেন, অনেকেই যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিচ্ছেন। তবে রাশিয়ার পুনরায় আক্রমণ প্রতিরোধের কোনও ব্যবস্থা না থাকলে যুদ্ধবিরতি অত্যন্ত বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে।
তিনি বলেন, শুধুমাত্র ন্যাটো সদস্যপদই রাশিয়ার পুনঃআক্রমণ ঠেকানোর গ্যারান্টি দিতে পারে।
জেলেনস্কি এর আগে বলেছিলেন, তিনি মনে করেন ইউক্রেনের মিত্ররা পর্যাপ্ত সংকল্প দেখালে আগামী বছরে যুদ্ধ শেষ হতে পারে।
বেশ কিছু প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তথাকথিত পশ্চিম জার্মান মডেল— একটি বিভক্ত দেশকে ন্যাটো সদস্যপদ দেওয়া— নিয়ে পশ্চিমা মহলে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে আলোচনা চলছে৷ কিন্তু আনুষ্ঠানিক কোনও প্রস্তাব এখনও আসেনি।
এ ছাড়া রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এখনও ইউক্রেনকে সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার ইচ্ছা ত্যাগ করার কোনও ইঙ্গিতও দেননি।
তিনি যে ইউক্রেনের কোনও অংশকে ন্যাটোতে যোগদানের অনুমতি দিতে রাজি হবেন তারও সম্ভাবনা নেই। ন্যাটোর নিজে থেকে কোনও পদক্ষেপ নেওয়ার সম্ভাবনারও ইঙ্গিত মেলেনি।