ঢাকার নিউমার্কেট থানায় করা হকার শাহজাহান আলী হত্যা মামলায় সাবেক সেনা কর্মকর্তা মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসানকে আট দিন পুলিশের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের (রিমান্ড) অনুমতি দিয়েছে আদালত।
শুক্রবার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত এ আদেশ দেন।
এদিন রাতে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেলের এক বার্তায় জানানো হয়, ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান (অব.) ব্যক্তিগত নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার আশংকায় সেনাবাহিনীর আশ্রয় গ্রহণ করলে গত ১৫ আগস্ট দিবাগত রাতে সেনাবাহিনীর সদস্যরা তাকে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেন। এর প্রেক্ষিতে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
তবে এর আগে ডিএমপির মিডিয়া সেলের আরেক বার্তায় জানানো হয়েছিল, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ঢাকার খিলক্ষেত এলাকা থেকে এনটিএমসির সাবেক মহাপরিচালক জিয়াউল আহসানকে নিউমার্কেট থানার মামলায় গতকাল গভীর রাতে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
শুক্রবার বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে ডিএমপির রমনা বিভাগের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “জিয়াউল আহসান বর্তমানে ডিএমপির গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) হেফাজতে রাখা হয়েছিল। এখন তাকে আদালতে নেওয়া হচ্ছে।”
আলোচিত মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসানকে আদালতে হাজির করে ১০ দিন হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার আবেদন করে পুলিশ। তবে জিয়াউল আহসানের আইনজীবী নাজমুন নাহার রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন।
উভয় পক্ষের শুনানি নিয়ে জিয়াউল আহসানকে আট দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দেয় আদালত।
এর আগে গ্রেপ্তার সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানকেও এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। ডিবি পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তাদের দুজনেরও ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত।
২০২২ সাল থেকে গত ১৩ আগস্ট চাকরিচ্যুত হওয়ার পর্যন্ত জিয়াউল আহসান এনটিএমসির মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন। এর আগে তিনি ওই কোম্পানির পরিচালক ছিলেন। এছাড়া তিনি র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখার পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
শুক্রবার আদালতের শুনানিতে বাদীপক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ উল্লাহ খান বলেন, এই জিয়াউল আহসান গুম–খুনের নায়ক। তিনি জেনোসাইডের সঙ্গে যুক্ত। ‘আয়নাঘর’ এর জনকও তিনি। দীর্ঘ দিন ধরে আওয়ামী লীগ সরকারের ফ্যাসিস্ট হয়ে ওঠার ক্রীড়ানক হিসেবে তিনি কাজ করেছেন। তিনি মানবতাবিরোধী অপরাধে যুক্ত। সদ্য সাবেক এই সেনা কর্মকর্তা ২০১২ সালের পর থেকে এক যুগ ধরে ভিন্ন রাজনৈতিক মতাবলম্বীসহ বিভিন্ন ব্যক্তিকে অপহরণ ও গুমের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
তবে জিয়াউল আহসানের আইনজীবী নাজমুন নাহার আদালতকে বলেন, তার মক্কেল কখনও ডিজিএফআইয়ে (প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তর) কর্মরত ছিলেন না। তিনি ‘আয়নাঘর’ বানাননি। ফেইসবুকে তাকে নিয়ে ট্রায়াল করা হচ্ছে।
গত ৭ আগস্ট বাসা থেকে জিয়াউল আহসানকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাওয়া হয় বলে দাবি করেন তার আইনজীবী।
শুনানির এক পর্যায়ে জিয়াউল আহসান আদালতকে বলেন, “আমাকে ৭ আগস্ট বাসা থেকে নিয়ে গেছে। আমি আয়নাঘরে ছিলাম। আমি কোনও আয়নাঘর বানাইনি।
“আমার হার্টের ৭০ ভাগ ব্লকড। আমাকে স্বেচ্ছায় অবসর দেওয়া হয়েছে। আমি কখনও ধানমন্ডিতে যাইনি। এনটিএমসি কেবল ডিজিটালি গোয়েন্দা তথ্য সরবরাহ করেছে। আমার নামে আগে কখনও মামলা হয়নি।”
গণঅভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়। এরপর গত ১৩ আগস্ট মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসানকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়ার কথা জানায় আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)।