Beta
বুধবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৫
Beta
বুধবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৫

বাবার ‘পিঁয়াজ মোরশেদই’ বাংলাদেশের দ্বিতীয় গ্র্যান্ড মাস্টার

যযযযযযয
[publishpress_authors_box]

দাবার কিংবদন্তি ববি ফিশার একবার বলেছিলেন,  ‘‘অ্যা থ্রেট ইজ মোর পাওয়ারফুল দেন ইটস এক্সিকিউশন।’’ বাংলাদেশের গ্র্যান্ড মাস্টার জিয়াউর রহমান কথাটা মনে প্রাণে বিশ্বাস করতেন।

 সেই শৈশবেই তিনি পণ করেছিলেন গ্র্যান্ড মাস্টার হওয়ার। দাবায় তখন নিয়াজ মোরশেদের জয়জয়কার। তরুণদের আদর্শ হয়ে উঠেছিলেন বাংলাদেশের প্রথম এই গ্র্যান্ড মাস্টার। দিনাজপুরে জিয়াউর রহমানও আদর্শ মানতেন তাকে।  জিয়ার বয়সীরা ফুটবল, কাবাডি, ক্রিকেট খেললেও তিনি পরে থাকতেন দাবা বোর্ডে। ছেলেকে দাবা বোর্ড থেকে তোলা যাচ্ছিল না বলে বাবা পয়গাম উদ্দিন আহমেদ মজা করে ডাকতেন ‘পিঁয়াজ মোরশেদ’!

জিয়ার বাবাও ছিলেন দাবাড়ু। হয়েছিলেন বুয়েটের চ্যাম্পিয়ন, খেলেছেন জাতীয় দাবাতেও। তাই ছেলেকে বাঁধা দেননি। বাবার রসিকতায় জেদটা আরো বেড়ে গিয়েছিল জিয়ার। সেই জেদ, দাবার প্রতি ভালোবাসা, পরিশ্রম আর অধ্যবসায়ে ২০০২ সালে তিনিই হয়ে যান বাংলাদেশের দ্বিতীয় গ্র্যান্ড মাস্টার। নিয়াজ মোরশেদ, জিয়া ছাড়া বাংলাদেশ পেয়েছে আরও তিন গ্র্যান্ড মাস্টার রিফাত বিন সাত্তার (২০০৬), আবদুল্লাহ আল রাকিব (২০০৭) আর এনামুল হোসেন রাজীবকে (২০০৮)। 

৫ জনের মধ্যে আজ সবার আগে পৃথিবীর মায়া ছাড়লেন জিয়া। ৫০ বছর বয়সী এই দাবাড়ু লুটিয়ে পড়েছিলেন দাবার বোর্ডে। সেখান থেকে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকেরা জানান, জিয়া আর নেই।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক করা জিয়াউর রহমান দিনাজপুর থেকে এসে প্রথম স্কুল দাবায় অংশ নেন ১৯৮৪ সালে। সেবার তেমন কিছু করতে পারেননি, পরের বছর হন রানারআপ। চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন রিফাত বিন সাত্তার। এর পরের বছর জিয়াই চ্যাম্পিয়ন আর সাব জুনিয়রে রানারআপ। ১৯৮৭ সালে সাব জুনিয়র জেতার পর ’৮৮-তে হন জাতীয় চ্যাম্পিয়ন। নিয়াজ মোরশেদের সামনে চ্যাম্পিয়ন হওয়াটাকে বিশেষ পাওয়া মনে করতেন তিনি।

তখন দেশে নিয়মিত খেলতেন না নিয়াজ মোরশেদ, ব্যস্ত থাকতেন বিদেশের নানা টুর্নামেন্টে। তবে সেই টুর্নামেন্ট দেখতে এসে প্রশংসা করেছিলেন জিয়ার।

নিজের আদর্শ নিয়াজের সঙ্গে জিয়া প্রথম মুখোমুখি হন কলকাতার একটি ওপেন জিএম টুর্নামেন্টে। প্রথম দেখাতেই ড্র। ১৯৯৭ সালে নিয়াজকে প্রথম হারান ইউনাইটেড ইনস্যুরেন্স (জিএম) দাবায়। এর চার বছর আগেই ইন্টারন্যাশনাল মাস্টার হয়ে গিয়েছিলেন জিয়া। ১৯৯৯ সালে পান প্রথম জিএম নর্ম; বাংলাদেশের দাবাড়ুদের মধ্যে সর্বোচ্চ ২৫০০ রেটিংও সেই সময়। ২০০১ সালে পূর্ণ হয় দ্বিতীয় নর্মটা।

২০০৫ সালের অক্টোবরে জিয়ার রেটিং পৌঁছেছিল ২৫৭০-এ, যা এখনো বাংলাদেশের সর্বোচ্চ। সেখান থেকে নামতে নামতে জীবনের শেষ বেলায় রেটিং ২৪০০-এর ঘরে।

জিএম হওয়ার পর বেশ কিছুদিন কোনও লক্ষ্যই স্থির করতে পারেননি জিয়া। তখন একজন খুব ভালো কোচের তত্ত্বাবধান দরকার ছিল; কিন্তু সেটা ছিল না। সে সময় বিয়েও করে ফেলেন জিয়া। আর বিয়ে করার পর পায়ের নিচে মাটি শক্ত করতে প্রচুর টুর্নামেন্ট খেলা শুরু করেন জিয়া।  চ্যাম্পিয়ন হয়ে টাকা জমাতে চাইতেন তিনি। একটা রিয়েল এস্টেটে একটু একটু করে টাকা জমিয়ে মোহাম্মদপুরে কিনে ফেলেন একটা ফ্ল্যাটও। ২০০৫ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত দুর্দান্ত ফর্মে থেকে রেটিং ২৫৭০ হয়েছিল তার। ফর্মটা পড়ে যায় ২০১০-এ এসে, কোচিং নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ায়।

এরপরও ২০১২ সালে ভারতের নাগপুরে হওয়া আন্তর্জাতিক ওপেনে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন জিয়াউর রহমান। ২০১৮ সালে নয়াদিল্লিতে ১৮তম ওপেন আন্তর্জাতিক গ্র্যান্ড মাস্টার দাবায় হন রানার্স আপ। চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন বাংলাদেশ গেমসেও। জাতীয় চ্যাম্পিয়ন রেকর্ড ১৪বার। তবে জীবিকার তাগিদে ২০১০ সালে কোচিংয়ে যোগ দেওয়াটা নিজের রেটিং কমে যাওয়ার একটা কারণ বলে মনে করতেন তিনি। খেলার পাশাপাশি খেলোয়াড় তৈরির কাজ—একসঙ্গে দুটি কাজ সত্যিই চ্যালেঞ্জের।

দাবা ফেডারেশন উদ্যোগী না হলে এভাবেই  দাবাড়ুরা পেছাবে বলে শঙ্কা জানিয়েছিলেন জিয়া। কারণ স্থানীয় যেসব টুর্নামেন্ট হয়, সেগুলোতে চ্যাম্পিয়ন হলেও রেটিং বাড়ে না। জাতীয় দাবা খেলা আর তাতে চ্যাম্পিয়ন হলে লাভ কী! ভারতে যারা জাতীয় দলে খেলেন তারা ইউরোপে বছরে অন্তত তিনটি টুর্নামেন্ট ফ্রি খেলার সুযোগ পান, ফেডারেশনই ব্যবস্থা করে দেয়। রেটিং বেশি থাকলে বিশ্বকাপের মতো টুর্নামেন্টগুলোতে তুলনামূলক সহজ প্রতিপক্ষ পাওয়া যায়, তাতে ভালো করার সুযোগটাও বেড়ে যায়। ফেডারেশনকে এসব নিয়ে উদ্যোগী হওয়ার তাগিদ সবসময় দিয়ে এসেছেন জিয়া। তবে কাজ হয়নি। জিয়ার মৃত্যুটা হলো এই আফসোস নিয়েই। ছেলেকে বড় দাবাড়ু হতেও দেখে যেতে পারলেন না জিয়া।

১৮ বছরের একমাত্র ছেলে তাহসিন তাজওয়ার ভারতের মুম্বাই ওপেনের বয়সভিত্তিক বিভাগে হয়েছিল তৃতীয়। যুব গেমসে রানার আপ। সেই ছেলেকে বড় দাবাড়ু করার জিয়ার শেষ স্বপ্নটা পূরণ হবে কী?

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত