পাকিস্তান ও পাকিস্তান-শাসিত কাশ্মীরে প্রবল বর্ষা ও ভূমিধসের কারণে মৃতের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। এখন পর্যন্ত ৩২১ জনের মৃত্যুর খবর জানা গেছে দেশটির মিডিয়া সূত্রে।
অধিকাংশ মৃত্যু হয়েছে দেশটির উত্তর-পশ্চিমে পাহাড়ি এলাকায় অবস্থিত খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশে। সেখানে অন্তত ৭৪টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। উদ্ধার অভিযানের সময় একটি হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে পাঁচ জন ক্রু নিহত হয়।
আল জাজিরার ইসলামাবাদ রিপোর্টার কামাল হাইদার জানিয়েছেন, বিধ্বস্ত হেলিকপ্টারটি একটি সামরিক বিমান ছিল।
তিনি বলেন, “এটি পাকিস্তানি সামরিক হেলিকপ্টার। এটি উদ্ধার কাজে ব্যবহৃত হচ্ছিল। এমন হেলিকপ্টারগুলো দুর্গম এলাকায় মানুষকে সাহায্য করতে ব্যবহৃত হচ্ছে।”
পাকিস্তান-শাসিত কাশ্মীরে আরও নয়জন নিহত হয়েছেন। আর উত্তরের গিলগিট-বালটিস্তান অঞ্চলে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে।
পাকিস্তানের আবহাওয়া দপ্তরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, দেশের উত্তর-পশ্চিমে ২১ আগস্ট পর্যন্ত ভারী বর্ষা অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। ওই অঞ্চলের কিছু এলাকায় দুর্যোগ ঘোষণা করা হয়েছে।
বন্যা কবলিত বুনের জেলার স্থানীয় একজন বাসিন্দা সংবাদ সংস্থা এএফপিকে বলেন, “আমি একটি জোরালো শব্দ শুনেছি, যেন পাহাড় সরে যাচ্ছে। শব্দ শুনেই দৌড়ে বাইরে বের হই। দেখতে পাই পুরো এলাকা কেঁপে উঠছে। মনে হচ্ছিল পৃথিবীর শেষ সময় এসেছে। মাটি কাঁপাচ্ছিল। আর মনে হচ্ছিল মৃত্যু আমার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে।”
পাকিস্তানের দুর্যোগ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, উত্তরের পাকিস্তানের বিভিন্ন এলাকায় ভারি বর্ষা ও ভূমিধসের কারণে মৃতের সংখ্যা এখন অন্তত ৩২১ জনে পৌঁছেছে।
মৃত্যুর অধিকাংশ ঘটেছে খাইবার পাখতুনখোয়ায়। সেখানে ৩০৭ জনের মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়েছে। গিলগিট-বালটিস্তানে পাঁচজন এবং পাকিস্তান-শাসিত কাশ্মীরে নয়জন নিহত হয়েছেন। মৃতদের মধ্যে ১৫ জন নারী ও ১৩ জন শিশু রয়েছেন। অন্তত ২৩ জন আহত হয়েছেন।
প্রথমে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল, খাইবার পাখতুনখোয়ায় বুনের এলাকায় ২২৫ জন নিহত হয়েছেন।
বুনের জেলায় বন্যায় বহু মানুষ আহত হয়েছেন এবং জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে।
উদ্ধারকারী দল মনসেরা জেলার পাহাড়ি এলাকায় ফেঁসে থাকা ১ হাজার ৩০০ পর্যটককে উদ্ধার করেছে। স্থানীয় কর্মকর্তাদের তথ্য অনুযায়ী, ওই এলাকায় অনেক মানুষ নিখোঁজ রয়েছেন।
খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী আলী আমিন গদাপুর জানিয়েছেন, বাজাউর অঞ্চলের দিকে গেলে খারাপ আবহাওয়ার কারণে এম-১৭ হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়। বাজাউর আফগানিস্তানের সীমান্ত সংলগ্ন একটি অঞ্চল।
খাইবার পাখতুনখোয়ায় শোক দিবস ঘোষণা করা হয়েছে।
দক্ষিণ এশিয়ার মোট বাৎসরিক বর্ষার প্রায় তিন-চতুর্থাংশ বর্ষা জুন থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে হয়। এই সময়ে ভূমিধস ও বন্যা সাধারণ ঘটনা। চলতি বর্ষা মৌসুমে ৩০০-এর বেশি মানুষের মৃত্যু ঘটেছে।
পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশে গত জুলাইয়ে গত বছরের তুলনায় ৭৩ শতাংশ বেশি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। ওই মাসে মৃতের সংখ্যা পূর্ববর্তী পুরো বর্ষার চেয়েও বেশি ছিল।
বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আবহাওয়া প্রায়ই চরম রূপ নিচ্ছে এবং আরও শক্তিশালী হচ্ছে।
মৌসুমি বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমে আরও কয়েক ঘন্টার জন্য ভারি বর্ষার সতর্কতা জারি করা হয়েছে। জনগণকে “সতর্কতা” অবলম্বন করতে বলা হয়েছে।
প্রাদেশিক সরকার বুনের, বাজাউর, স্বাত, শাঙ্গলা, মনসেরা ও ব্যাট্টাগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলগুলোকে দুর্যোগ-প্রবণ এলাকা হিসেবে ঘোষণা করেছে।
ভারত-শাসিত কাশ্মীরে বন্যা
বার্ষিক বর্ষা দক্ষিণ এশিয়ার মোট বাৎসরিক বৃষ্টিপাতের ৭০–৮০ শতাংশ দেয়। এটি কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে ধ্বংসও বয়ে আনে।
ভারত-শাসিত কাশ্মীরে উদ্ধারকারী দল এখনও বালি ও ধ্বংসাবশেষের তলায় বেঁচে থাকা মানুষ খুঁজছে। ভারি বর্ণণের কারণে আকস্মিক বন্যায় অন্তত ৬০ জন নিহত এবং ২০০ নিখোঁজ।
চিসোটি গ্রামে প্রবল বন্যা ও কাদা ধস তুষারপাতের মতো ঢুকে পড়েছে। এই সময় গ্রামের বাসিন্দারা পাহাড়ে একটি ধর্মীয় স্থানের দিকে যাচ্ছিল।
হিমালয় অঞ্চল বন্যা ও ভূমিধসের জন্য পরিচিত। তবে বিজ্ঞানীরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এই ধরনের ঘটনাগুলো আরও শক্তিশালী এবং বেশি ঘনঘন ঘটছে।
তথ্যসূত্র : বিবিসি, ডন, আল জাজিরা।