আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে খুব আলোচিত ছিল রাতের আঁধারে নির্বাচন। এবার বিসিবির নির্বাচনেও ফিরে আসল বিষয়টি। গত শুক্রবার রাতেই বিসিবি নির্বাচনের মূল অংশের ভোটাভুটি হয়ে গেছে বলে খবর প্রচার হয়েছে।
গত শুক্রবার ঢাকার একটি পাঁচ তারকা হোটেলে এই ভোট গ্রহণ হয়েছে বলে খবর প্রকাশ করেছে একটি জাতীয় দৈনিক। পরবর্তীতে সূত্র থেকে এর সত্যতা নিশ্চিত হয়েছে সকাল সন্ধ্যা। এই ভোট গ্রহণে ক্লাব ক্যাটাগরির ২২ থেকে ২৬ জন ভোটার অংশ নিয়েছেন। তারা ওই দিন রাতে ই-ভোট দিয়েছেন। ই-মেইলে ব্যালট গ্রহণ করে তা ডাউনলোড করে পছন্দের প্রার্থীর নামের পাশে চিহ্ন দিয়ে সেই ডকুমেন্ট স্ক্যান করে ফিরতি মেইলে ভোট দিয়েছেন উপস্তিত কাউন্সলিররা।
শুক্রবারের এই ভোটাভুটির পরই নির্বাচন বর্জন করার ঘোষণা দিয়েছেন আরও কয়েকজন কাউন্সিলর। তাদের মধ্যে লুৎফর রহমান বাদল আছেন। লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জ ক্লাব থেকে প্রার্থী হওয়া এই কাউন্সিলর জানিয়েছেন নির্বাচন বর্জনের কারণ পরবর্তীতে জানাবেন।
কিন্তু তার সঙ্গে আরও তিন জন প্রার্থীও ক্লাব ক্যাটাগরি থেকে নির্বাচিত হতে যাওয়া মোট ১২ জনের তালিকার বাইরে পড়ে গেছেন। তারা হলেন রাকিব উদ্দিন, আহসানুর রহমান মল্লিক রনি ও মেজর (অব.) ইমরোজ। আগের দুজন অসন্তুষ্টি না জানালেও তৃতীয়জন প্রধান নির্বাচন কমিশনার বরাবর চিঠি মারফত জানিয়ে দেন এই ভোট প্রক্রিয়া থেকে তিনিও সরে দাঁড়ালেন।
এদিকে প্রকাশ্যে না বললেও বিসিবি নির্বাচনের এমন প্রক্রিয়ার কারণে শনিবার সংবাদ সম্মেলন করে ক্লাব মালিকদের একটি পক্ষ বিসিবি নির্বাচনের এই নাটকের প্রতিবাদ জানিয়ে লিগ বর্জনের হুমকি দিয়েছে।
ক্যাটাগরি ২ থেকে নির্বাচিত হয়ে যাওয়া প্রার্থীরা হলেন – ফারুক আহমেদ, ইশতিয়াক সাদেক, আদনান রহমান দীপন, ফায়াজুর রহমান, আবুল বাশার, আমজাদ হোসেন, শাহনিয়ান তানিম, মোহাম্মদ মোকছেদুল কামাল, মোহাম্মদ ফয়জুর রহমান ভূঞা. এম নাজমুল ইসলাম, মো; মনজুর আলম, মেহরাব আলম চৌধুরী।
এদিকে পুনরায় তফসিল গঠন ও নির্বাচন পেছানোসহ তিন দফা দাবিতে শনিবার সংবাদ সম্মেলন করেছিল ৪৮টি ক্লাবের সংগঠকরা। একই দাবিতে তারা এবার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে স্মারকলিপি পাঠিয়েছে। আজ (রবিবার) দুপুরে ঢাকা ক্রিকেট ক্লাব সংগঠকদের পক্ষে বিসিবির কাউন্সিলর মো. রফিকুল ইসলাম বাবু স্বাক্ষরিত ওই চিঠি পাঠানো হয়।
তাদের দাবি– বিসিবি’র বর্তমান নির্বাহী পর্ষদের সময় বাড়িয়ে নির্বাচনের পুনঃতফসিলসহ কাউন্সিলরশিপ বিতর্ক এড়াতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া, বিকল্প হিসেবে অ্যাডহক কমিটির কাছে দায়িত্ব দেওয়া ও পুনঃনির্ধারিত সময়ে নতুন নির্বাচন কমিশনের তত্ত্বাবধানে ভোটগ্রহণ করা।
চিঠিতে লেখা হয়েছে, ‘‘সবচেয়ে বিতর্কিত ব্যক্তিকে বিসিবি’র নির্বাহী পর্ষদে ফিরিয়ে আনতে মরিয়া চেষ্টা চলছে। যা গঠনতন্ত্র ৯ ও ১০ ধারার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। দেশের ক্রিকেটে সবচেয়ে বড় অবদান ঢাকার প্রিমিয়ার, প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় বিভাগ ক্লাবগুলোর। ক্লাব সংগঠকরা টুর্নামেন্টগুলো চালাতে বাৎসরিক অন্তত শত কোটি টাকা খরচ করে থাকে। বিনিময়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দেশের ক্রিকেটে অবদান রাখতে চান তারা। সে রাস্তাটাই এবার রুদ্ধ হয়ে গেছে। এ অবস্থায় ঢাকার ক্লাবগুলো উপায় না দেখে আসন্ন টুর্নামেন্টগুলো থেকে নিজেদের সরিয়ে নেওয়ার চিন্তা করছে সক্রিয়ভাবে।’’
এদিকে নির্বাচনে তৃতীয় বিভাগ বাছাই ক্রিকেট থেকে উঠে আসা ১৫টি ক্লাবের কাউন্সিলরের নাম চূড়ান্ত ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তির কার্যক্রম স্থগিত করে হাইকোর্ট যে আদেশ দিয়েছিলেন, তা স্থগিত করা হয়েছে আজ ।হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত চেয়ে নাখালপাড়া ক্রিকেটার্সে রকরা আবেদনের শুনানি নিয়ে আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি ফারাহ মাহবুব আজ এ আদেশ দেন। এজন্য ১৫টি ক্লাবের কাউন্সিলররা বিসিবির আগামীকালের নির্বাচনে ভোট দিতে পারবেন বলে জানিয়েছেন বোর্ডের আইনজীবী মাহিন এম রহমান।
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)’র পরিচালনা পর্ষদের নির্বাচনে অনুষ্ঠিত হতে কোন বাধা নেই বলেও জানিয়েছে আদালত। সাধারণ পরিষদে কাউন্সিলর মনোনয়ন নিয়ে বোর্ড সভাপতি আমিনুল ইসলামের ১৮ সেপ্টেম্বরের চিঠির কার্যকারিতা স্থগিত করে হাইকোর্ট যে আদেশ দিয়েছিলেন, তা স্থগিতই থাকছে। আজ চেম্বার জজ আদালতে বিচারপতি ফারাহ মাহমুবের বেঞ্চ এই রায় দেন।