মিরপুরের কালো মাটির উইকেট থেকে চট্টগ্রামের ব্যাটিং সহায়ক পিচ। এই পরিবর্তন তাহলে ধরতে পারেননি বাংলাদেশ ব্যাটাররা। অথচ উইন্ডিজ ব্যাটাররা ঠিকই মানিয়ে নিয়েছেন বৈপরিত্যের সঙ্গে। তাই দিন শেষে সাফল্য ধরা দিয়েছে তাদের। ব্যাটিং সাফল্য দেখালেন সফরকারীরা আর বাংলাদেশ ব্যাটাররা সেই পুরোনো রোগে পা পিছলে পড়লেন। তাতে উইন্ডিজের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচে ১৬ রানে হেরেছে বাংলাদেশ।
ক্যারিবিয়ানদের করা ৩ উইকেটে ১৬৫ রানের জবাবে ১৯.৪ ওভারে ১৪৯ রানে অলআউট হয় স্বাগতিকরা। ভালো উইকেটে খেলার অভ্যাসের ব্যাপারটি স্পষ্ট হলো আবারও। ক্যারিবিয়ানরা টি-টোয়েন্টিতে একাদশে শক্তি বাড়িয়েছেন। টি-টোয়েন্টির স্পেশালিস্টরা যোগ দিয়েছে তাদের হয়ে। সারা বিশ্ব জুড়েই নানা প্রিমিয়ার লিগে ভালো উইকেটে খেলে তারা। চট্টগ্রামের উইকেটে সেই অভ্যাস কাজে লাগালেন ক্যারিবিয়ানরা।
টপঅর্ডাররা ধরে খেলেছেন। মিডলঅর্ডাররা পরের দিকে নেমে ঝড় তুলেছেন। মিরপুরের কালো মাটির স্পিনিং উইকেটে ঠিক মানিয়ে উঠতে পারেননি তারা। চট্টগ্রামের ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে নিজেদের সামর্থ্য দেখালেন ক্যারিবিয়ানরা।
অথচ বাংলাদেশ ব্যাটাররা মিরপুরে সবশেষ ম্যাচে ভালো রান তুলেছেন। সেই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারেননি চট্টগ্রামে। টপঅর্ডারের সবাই বড় রান করতে ব্যর্থ। তাওহিদ হৃদয় ২৫ বলে ২৮ রান করে মুখ লুকিয়েছেন কোন রকম। বাকিরা বিদায় নিয়েছেন সিঙ্গেল ডিজিটে। দলে থাকা তানজিদ তামিম করেছেন ১৫ রান। সাইফ হাসান ৮, লিটন দাস ৫, শামীম হোসেন ১ ও নুরুল হাসান সোহান ৫ রান করে ভুল শটের মাশুল দিয়েছেন।
তানজিম হাসান সাকিব ২৭ বলে ৩৩ ও নাসুম আহমেদ ১৩ বলে ২০ করে কিছুটা লড়াই ফিরিয়ে দেন। দুজনই ৩টি করে চার ও ১ টি ছক্কা হাঁকান। ৭৭ রানে ৬ উইকেট পড়ার পর এই জুটিতে লড়াই করে বাংলাদেশ। দুজনের জুটি ছিল ৪০ রানের। ওয়ানডেতে ভালো ফর্মে থাকা রিশাদের ওপর ভরসা ছিল। কিন্তু ৩ বলে ৬ রান করে ফেরা এই ব্যাটারও হতাশ করেছেন। শেষদিকে ৮ বলে ১০ রান করা তাসকিন ও ৮ বলে ১১ রান করা মোস্তাফিজ ২০ রানের জুটি গড়ে হারের ব্যবধান কমান।
শেষ ওভারে তিন ছক্কায় দেড়শ পার উইন্ডিজের
তানজিম সাকিবের শেষ ওভারটিকে টার্গেট করেছিলেন রভম্যান পাওয়েল। সুযোগ মতো হাঁকালেন তিনটি ছক্কা। টানা তিন ছক্কায় উইন্ডিজের রান ১৪০ থেকে এক লাফে ১৬০ ছাড়িয়ে গেল। পাওয়েলের ২৮ বলে ৪ ছক্কা ও ১ চারে ৪৪ রানের ঝড়ো ইনিংসে সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে ৩ উইকেটে ১৬৫ রান করেছে উইন্ডিজ।
চট্টগ্রামের ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে রান আরও বেশি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বাংলাদেশ বোলারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে শুরুতে দ্রুত রান তুলতে ব্যর্থ হয় ক্যারিবিয়ানরা। তবে মাঝের ওভারে রানের গতি বাড়াতে সক্ষম হয় তারা। ১২ ওভারের দিকে ৮০ রানের আশেপাশে থাকা সফরকারীরা শেষ ৮ ওভারে নিয়েছে আরও ৮০ রান।
পাওয়েলের সঙ্গে শেই হোপের জুটিতেই শেষ ওভারগুলোতে রানের দেখা পেয়েছে উইন্ডিজ। ১৩তম ওভারে জোড়া উইকেট হারাতে হয় ক্যারিবিয়ানদের। ব্র্যান্ডন কিং ৩৬ বলে ৩৩ রানে ফিরেন তাসকিনের বলে বড় শট নিতে গিয়ে সাকিবের ক্যাচে পরিণত হয়ে। এক বল পরেই শারফেন রাদারফোর্ড উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন।
তাসকিনের হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা তৈরি হলেও শেষ পর্যন্ত সুযোগটা নিতে পারেননি এই পেসার। পরে অবশ্য আর উইকেটও পায়নি বাংলাদেশ। শেই হোপ ও পাওয়েল জুটিতেই এল ৮৩ রান। পাওয়েলের ৪৪ রানের পাশাপাশি হোপ ২৮ বলে ৪ ছক্কা ও ১ চারে ৪৬ রান করে অপরাজিত ছিলেন। ওপেনিংয়ে আলিক আথানেজ ২৭ বলে ৩৪ রান করেছেন।
বাংলাদেশের হয়ে তাসকিন ৩৬ রানে দুটি, রিশাদ ৪০ রানে ১টি উইকেট নেন। নাসুম আহমেদ ৪ ওভারে মাত্র ১৫ এবং মোস্তাফিজুর রহমান ২ ওভারে ২৪ রান দিয়ে কিপটে বোলিং করেছেন।
খুলনায় আজ জাতীয় ক্রিকেট লিগের ম্যাচ চলাকালীন হৃদরোগে আক্রান্ত হন বরিশাল বিভাগীয় ক্রিকেট দলের ফিজিও হাসান আহমেদ। এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান তিনি।
হাসান আহমেদের প্রতি সম্মান জানিয়ে বাংলাদেশ দল আজ কালো বাহুবন্ধনী পরে খেলেছে। ম্যাচ শুরুর আগে পালন করা হয় ১ মিনিট নীরবতাও।
বাংলাদেশের একাদশ: লিটন দাস (অধিনায়ক), তানজিদ হাসান, সাইফ হাসান, তাওহিদ হৃদয়, নুরুল হাসান, শামীম হোসেন, রিশাদ হোসেন, তানজিম হাসান, নাসুম আহমেদ, তাসকিন আহমেদ ও মোস্তাফিজুর রহমান।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের একাদশ: ব্র্যান্ডন কিং, অ্যালিক অ্যাথানেজ, শাই হোপ (অধিনায়ক), শেরফান রাদারফোর্ড, রোস্টন চেজ, রোভম্যান পাওয়েল, জেসন হোল্ডার, রোমারিও শেফার্ড, আকিল হোসেন, খারি পিয়ের ও জেডেন সিলস।



