সেপ্টেম্বরেও প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স কমেনি। তাতে অর্থ বছরের তিন মাস না যেতেই সোয়া ৭ বিলিয়ন (৭.২৫ কোটি) প্রবাসী আয় এসেছে দেশে।
বাংলাদেশ ব্যাংক রবিবার রেমিটেন্সের সাপ্তাহিক যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যায়, ২০২৫-২৬ অর্থ বছরের তৃতীয় মাস সেপ্টেম্বরের প্রথম ২৭ দিনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানরত বাংলাদেশিরা ২৩৪ কোটি ২০ লাখ (২.৩৪ বিলিয়ন) ডলার দেশে পাঠিয়েছেন।
এই অঙ্ক গত বছরের সেপ্টেম্বরের একই সময়ের চেয়ে ১১ দশমিক ৬৩ শতাংশ বেশি।
২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরের ২৭ দিনে ২০৯ কোটি ৮০ লাখ (২.১০ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। আর পুরো মাসে এসেছিল ২৪০ কোটি ৪১ লাখ (২.৪০ বিলিয়ন) ডলার।
সব মিলিয়ে চলতি অর্থ বছরের দুই মাস ২৭ দিনে (১ জুলাই থেকে ২৭ সেপ্টেম্বর) প্রবাসীরা ৭২৪ কোটি ২০ লাখ (৭.২৪ বিলিয়ন) ডলার দেশে পাঠিয়েছেন।
যা গত অর্থ বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৬ দশমিক ২০ শতাংশ বেশি। ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের দুই মাস ২৭ দিনে ৬২৩ কোটি ২০ লাখ (৬.২৩ বিলিয়ন) ডলার এসেছিল দেশে।
রেমিটেন্সে প্রতি ডলারে এখন ১২২ টাকা দিচ্ছে ব্যাংকগুলো। সে হিসাবে টাকার অঙ্কে সেপ্টেম্বরের ২৭ দিনে ২৮ হাজার ৫৭২ কোটি টাকা রেমিটেন্স এসেছে। প্রতিদিনে গড়ে এসেছে ৮ কোটি ৬৭ লাখ ডলার বা ১ হাজার ৫৮ কোটি টাকা।
মাসের বাকি ৩ দিন (২৮ থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর) এই হারে এলে মাস শেষে রেমিটেন্সের অঙ্ক ২৬০ কোটি (২.৬০ বিলিয়ন) ডলার হবে।
একক মাসের হিসাবে সবচেয়ে বেশি রেমিটেন্স এসেছিল গত মার্চ মাসে; রোজা ও ঈদ সামনে রেখে ওই মাসে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে ৩২৯ কোটি ৫৬ লাখ (৩.২৯ বিলিয়ন) ডলার রেমিটেন্স আসে দেশে।
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৯৬ কোটি ৯৫ লাখ (২.৯৬ বিলিয়ন) ডলার আসে মে মাসে। তৃতীয় সর্বোচ্চ ২৮২ কোটি ২৫ লাখ (২.৮২ বিলিয়ন) ডলার আসে জুনে।
দেশের অর্থনীতির প্রধান সূচকগুলোর মধ্যে এখন রেমিটেন্সই সবচেয়ে ভালো অবস্থানে আছে, যা সঙ্কটে পড়া অর্থনীতির চাকা ঘুরিয়ে যাচ্ছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস দুদিন আগেই যুক্তরাষ্ট্রে এক অনুষ্ঠানে বলেন, “জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স দেশের অর্থনীতিকে বাঁচিয়ে রেখেছে।”
রিজার্ভ বাড়ছে
রেমিটেন্সের ওপর ভর করে অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ সূচক বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ নিয়ে উদ্বেগ কেটে গেছে।
এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) আমদানি বিল পরিশোধের পরও রিজার্ভ রয়েছে স্বস্তিদায়ক অবস্থায়।
গত ৭ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভ থেকে আকুর জুলাই-আগস্ট মেয়াদের ১৫০ কোটি (১.৫০ বিলিয়ন) ডলার আমদানি বিল পরিশোধের পর বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়ায় ২৫ দশমিক ৩০ বিলিয়ন ডলার। গ্রস বা মোট হিসাবে তা ছিল ৩০ দশমিক শূন্য চার বিলিয়ন ডলার।
গত তিন সপ্তাহে সেই রিজার্ভ বেশ খানিকটা বেড়েছে। গত সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ বেড়ে হয়েছে ২৬ দশমিক ৪০ বিলিয়ন ডলার। গ্রস হিসাবে হয়েছে ৩১ দশমিক ২৭ বিলিয়ন ডলার।
আকুর দেনা শোধের আগে বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ ছিল ২৬ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন ডলার। গ্রস হিসাবে ছিল ৩১ দশমিক ৭৫ বিলিয়ন ডলার।
আকুর সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মেয়াদের বিল শোধ করতে হবে নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে। তার আগে রিজার্ভ আরও বাড়বে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা।
অর্থনীতির সামর্থ্য প্রকাশের গুরুত্বপূর্ণ সূচক রিজার্ভ নিয়ে বাংলাদেশে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা চলছে আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ সময় থেকেই। অভ্যুত্থানের পর গত বছর অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিলেও উদ্বেগ কাটছিল না।
তবে বছর পার হওয়ার পর প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স, রপ্তানি আয় এবং বিশ্ব ব্যাংক, আইএমএফ ও এডিবিসহ অন্যান্য দাতা সংস্থার বাজেট সহায়তার ঋণে রিজার্ভ স্বস্তির জায়গায় এসেছে।
এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে ডলার কেনার কারণেও রিজার্ভ বেড়েছে। গত দুই মাসে প্রায় ২ বিলিয়ন ডলার কেনা হয়েছে।
সবশেষ গত জুলাই মাসের আমদানির যে তথ্য প্রকাশ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক, তাতে দেখা যায় যে ওই মাসে পণ্য আমদানিতে বাংলাদেশের ৬ দশমিক ২৭ বিলিয়ন ডলার খরচ হয়েছে।
সে হিসাবে বর্তমানের ২৬ দশমিক ৩৫ বিলিয়ন ডলার তাৎক্ষণিক ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ দিয়ে চার মাসের বেশি সময়ের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব হবে।
আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী, একটি দেশের কাছে অন্তত তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সমপরিমাণ বিদেশি মুদ্রা মজুদ থাকতে হয়।
আকু হলো এশিয়ার কয়েকটি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মধ্যকার একটি আন্তঃআঞ্চলিক লেনদেন নিষ্পত্তি ব্যবস্থা। এর মাধ্যমে এশিয়ার নয়টি দেশের মধ্যে যেসব আমদানি-রপ্তানি হয়, তার মূল্য প্রতি দুই মাস পরপর নিষ্পত্তি করা হয়।
আকুর সদস্য দেশগুলো হচ্ছে বাংলাদেশ, ভারত, ইরান, নেপাল, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার, ভুটান ও মালদ্বীপ। এর মধ্যে ভারত পরিশোধ করা অর্থের তুলনায় অন্য দেশগুলো থেকে বেশি পরিমাণে ডলার আয় করে। অন্যদিকে বেশিরভাগ দেশকেই আয়ের তুলনায় আমদানি ব্যয় হিসাবে অতিরিক্ত ডলার খরচ করতে হয়।