Beta
বৃহস্পতিবার, ২১ আগস্ট, ২০২৫
Beta
বৃহস্পতিবার, ২১ আগস্ট, ২০২৫

প্লট বরাদ্দে দুর্নীতি মামলায় শেখ হাসিনা-পুতুলের নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

শেখ হাসিনা ও মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল।
শেখ হাসিনা ও মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল।
[publishpress_authors_box]

রাজউকের প্লট বরাদ্দে দুর্নীতির অভিযোগে করা এক মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলসহ ১৮ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আদেশ দিয়েছে আদালত।

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দেওয়া অভিযোগপত্র গ্রহণ করে বৃহস্পতিবার ঢাকার মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ জাকির হোসেন গালিবের আদালত এ আদেশ দিয়েছে।

আদালতে দুদকের প্রসিকিউশন বিভাগের সহকারী পরিচালক আমিনুল ইসলাম এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, “আজকে ১৮ আসামির বিরুদ্ধে চার্জশিট গ্রহণ করেছেন আদালত। তারা পলাতক থাকায় তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। আগামী ৪ মে গ্রেপ্তার সংক্রান্ত তামিল প্রতিবেদন দাখিলের তারিখ ধার্য করেছেন আদালত।”

দেড় দশ ধরে প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারে থাকা আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে এর আগে গণহত্যা, গুম ও শাপলা চত্বরে হত্যার অভিযোগে করা তিন মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গ্রেপ্তারি পরোয়ানা করে। দুর্নীতি মামলায় এই প্রথম শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তারের আদেশ দিল আদালত।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্টে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর জানা যায় যে তার পরিবারের ছয় সদস্যকে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের ১০ কাঠার ছয়টি প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল।

আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে সেখানেই আছেন শেখ হাসিনা। তার মেয়ে পুতুলও আছেন ভারতে, যিনি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আঞ্চলিক পরিচালক, তার দপ্তরও ভারতের রাজধানী নয়া দিল্লিতে। শেখ হাসিনার পরিবারের অন্য সদস্যরাও বিদেশে। তার বোন শেখ রেহানা আছেন যুক্তরাজ্যে, ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় আছেন যুক্তরাষ্ট্রে।

শেখ হাসিনাকে ফেরত পেতে অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে ভারত সরকারকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আইনজীবীরা বলছেন, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের যে আসামি প্রত্যর্পণ চুক্তি রয়েছে, তার আওতায় শেখ হাসিনাকে ফেরানো সম্ভব। তবে কার্যত পুরো বিষয়টি নির্ভর করছে ভারত সরকারের ওপর। নয়া দিল্লি যদি না চায়, তাহলে শেখ হাসিনাকে ফেরত আনা সম্ভবপর হবে না বলেই কূটনীতিক অঙ্গনে আলোচনা রয়েছে।

সম্প্রতি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে বহু প্রতীক্ষিত বৈঠক করেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ব্যাংককে বিমসটেক সম্মেলনের ফাঁকে ওই বৈঠকে তিনি দ্বিপক্ষীয় নানা বিষয়ে আলোচনার পাশাপাশি গণহত্যার অভিযোগে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠানোর অনুরোধ জানান বলে বাসস জানিয়েছে।

দুদকের এ মামলায় আরও যাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আদেশ দেওয়া হয়েছে তাদের মধ্যে আছেন জাতীয় গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম সরকার, জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব পুরবী গোলদার, অতিরিক্ত সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন ও সচিব মো. শহীদ উল্লা খন্দকার।

আছেন রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) সাবেক চেয়ারম্যানের পিএ মো. আনিছুর রহমান মিঞা, রাজউকের সাবেক সদস্য মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, কবির আল আসাদ, তন্ময় দাস, মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন, মেজর (ইঞ্জি.) সামসুদ্দীন আহমদ চৌধুরী (অব.), মো. নুরুল ইসলাম, পরিচালক শেখ শাহিনুল ইসলাম, উপ-পরিচালক মো. হাফিজুর রহমান, হাবিবুর রহমান, মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন ও শরীফ আহমেদ।

গত ১২ জানুয়ারি দুদকের সহকারী পরিচালক আফনান জান্নাত কেয়া বাদী হয়ে মামলাটি করেন।

মামলার এজাহারে বলা হয়, ধানমন্ডিতে নিজের ও পরিবারের অন্য সদস্যদের মালিকানায় রাজউকের এখতিয়ারাধীন এলাকায় বাড়ি বা ফ্ল্যাট বা আবাসন সুবিধা থাকার পরও তা গোপন করে পূর্বাচল নতুন শহর আবাসন প্রকল্পে প্লট বরাদ্দ সংক্রান্ত আইন, বিধি ও নীতিমালা ও আইনানুগ পদ্ধতি লঙ্ঘন করে মা শেখ হাসিনার ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন সায়মা ওয়াজেদ পুতুল। শেখ হাসিনা সরকারের সর্বোচ্চ পদাধিকারী ও পাবলিক সার্ভেন্ট হিসেবে বহাল থাকা অবস্থায় তার ওপর অর্পিত ক্ষমতার অপব্যবহার করে অপরাধজনক বিশ্বাসভঙ্গ করে প্রকল্পের বরাদ্দ বিষয়ক দায়িত্বপ্রাপ্ত গণকর্মচারীদের প্রভাবিত করেছেন।

ক্ষমতার অপব্যবহার করে আইনসম্মত পারিশ্রমিক না হওয়া সত্ত্বেও, আইনমতে বরাদ্দ পাওয়ার যোগ্য না হওয়া সত্ত্বেও পরস্পর যোগসাজশে নিজেরা লাভবান হয়ে ও অন্যকে লাভবান করার উদ্দেশ্যে পূর্বাচল আবাসন প্রকল্পের ২৭নং সেক্টরের ২০৩নং রাস্তার ১৭ নম্বর প্লট সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের নামে বরাদ্দ দিয়েছেন।

সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের প্লটের বাস্তব দখলসহ রেজিস্ট্রি মূলে প্লট গ্রহণ করেন। প্রতারণামূলক অবৈধ পারিতোষিক দেওয়া ও নেওয়া এবং অপরাধজনক বিশ্বাস ভঙ্গ ও বেআইনি অনুগ্রহ প্রদর্শনের মাধ্যমে আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে দণ্ডবিধি ও দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনে দণ্ডযোগ্য অপরাধ করেছেন।

সম্প্রতি মামলাটি তদন্ত করে শেখ হাসিনা, পুতুলসহ ১৮ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা আফনান জান্নাত কেয়া।

দুদক বলছে, শেখ হাসিনা ক্ষমতার অপব্যবহার ও অনিয়মের মাধ্যমে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে নিজের নামে ১০ কাঠার একটি প্লট বরাদ্দ নেন। এ অভিযোগে তাকে প্রধান আসামি করে একটি মামলা হয়েছে। একই প্রকল্পে তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের নামে ১০ কাঠার আরেকটি প্লট বরাদ্দ দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এই অভিযোগে জয়কে প্রধান আসামি ও শেখ হাসিনাকে সহযোগী আসামি করে আরেকটি মামলা করা হয়।

পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে প্লট বরাদ্দে অনিয়মের অভিযোগে মোট ছয়টি মামলায় আসামি করা হয়েছে শেখ হাসিনাকে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত