Beta
বৃহস্পতিবার, ২১ আগস্ট, ২০২৫
Beta
বৃহস্পতিবার, ২১ আগস্ট, ২০২৫
যুক্তরাষ্ট্রের বার্ষিক মানবাধিকার প্রতিবেদন

উদ্বেগ থাকলেও বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি স্থিতিশীল

USA
[publishpress_authors_box]

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ২০২৪ সালের বার্ষিক মানবাধিকার প্রতিবেদনে বাংলাদেশের একটি অস্থির ও ঘটনাবহুল বছরের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। 

মঙ্গলবার প্রকাশিত এই প্রতিবেদনে গত বছরের প্রথমার্ধে সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে ব্যাপক দমন-পীড়ন, নির্বিচার হত্যা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় কঠোর বিধি-নিষেধের অভিযোগের বিষয়গুলো উঠে এসেছে।

বছরের মাঝামাঝি ছাত্র আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে সহিংসতায় শত শত মানুষের মৃত্যু ঘটে। ওই বছর ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর ৮ আগস্ট নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়।

সরকারের পরিবর্তনের পর মানবাধিকার পরিস্থিতি কিছুটা স্থিতিশীল হলেও নানা উদ্বেগ রয়ে গেছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

এতে বলা হয়েছে, জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে ছাত্র আন্দোলনকেন্দ্রিক সহিংসতায় অনেকের প্রাণহানি ঘটে। স্থানীয় মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি (এইচআরএসএস) জানিয়েছে, তখন অন্তত ৯৮৬ জন নিহত হয়। এদের মধ্যে শিশু, ছাত্র, রাজনৈতিক কর্মী ও শ্রমিকও ছিলেন। 

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এসব ঘটনার তদন্ত শুরু করে এবং জাতিসংঘের সহায়তায় অভিযুক্তদের বিচারের আওতায় আনার উদ্যোগ নিয়েছে।

সাবেক সরকারের আমলে জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত সাংবাদিক ও সাধারণ নাগরিকদের উপর সাইবার নিরাপত্তা আইন (সিএসএ), ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন (ডিএসএ) ও তথ্যপ্রযুক্তি আইন (আইসিটি) ব্যবহার করে ব্যাপক দমন-পীড়নের অভিযোগ উঠে। আগস্ট পর্যন্ত ৫ হাজার ৮১৮টি মামলা বিচারাধীন ছিল। 

সাংবাদিকদের ওপর হামলা, গ্রেপ্তার ও হয়রানির ঘটনা ঘটেছে। দেশীয় মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্র (এএসকে) জানিয়েছে, জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত ৩৮৮ জন সাংবাদিক ১১৫টি ঘটনায় ভুক্তভোগী হন।

অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় বসে এসব আইনের আওতায় দায়ের করা মামলা প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয় এবং আটক ব্যক্তিদের মুক্তির ব্যবস্থা নেয়।

প্রতিবেদন বলছে, শ্রমিকদের সংগঠিত হওয়া ও ধর্মঘটের অধিকার থাকলেও বাস্তবে নানা আইনি ও প্রশাসনিক বাধা ছিল। রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে (ইপিজেড) ইউনিয়ন কার্যত নিষিদ্ধ ছিল। সেখানে কেবল ‘ওয়ার্কার ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন’ চালু। ন্যূনতম মজুরি অনেক ক্ষেত্রে জীবনধারণের জন্য অপর্যাপ্ত। ওভারটাইমের সীমা প্রায়শই লঙ্ঘিত এবং গার্মেন্ট ও নির্মাণ শিল্পে কর্মস্থলের নিরাপত্তাহীনতা প্রকট।

জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ৪৭৫ জন শ্রমিক কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। সেপ্টেম্বর মাসে চট্টগ্রামের একটি জাহাজ ভাঙা কারখানায় বয়লার বিস্ফোরণে সাতজন নিহত হন।

গুম ও নির্বিচার আটক প্রসঙ্গে প্রতিবেদনে বলা হয়, সাবেক সরকারের আমলে বিরোধী দলের নেতাকর্মীসহ অনেককে গুমের অভিযোগ উঠে। জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত এইচআরএসএস তিনটি গুমের ঘটনা নথিভুক্ত করে। সরকারের পরিবর্তনের পর বহু নিখোঁজ ব্যক্তি গোপন বন্দিশালা থেকে মুক্তি পান। কেউ কেউ আট বছর পর্যন্ত সেখানে ছিলেন।

অন্তর্বর্তী সরকার আগস্টে ‘বাংলাদেশ কমিশন অন এনফোর্সড ডিসঅ্যাপিয়ারেন্স’ গঠন করে। এটি ১ হাজার ৬০০টি অভিযোগ গ্রহণ করেছে এবং ঢাকার আশপাশে আটটি গোপন বন্দীশালা শনাক্ত করেছে।

সাবেক সরকারের সময়ে নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে রিমান্ডে নির্যাতনের অভিযোগ ছিল ব্যাপক। লোহার রড দিয়ে পেটানো, ইলেকট্রিক শক, যৌন সহিংসতা, এমনকি হত্যা। জানুয়ারিতে ঢাকায় পুলিশ হেফাজতে থাকা এক ব্যক্তির মৃত্যুর ঘটনায় ছয় পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা হয়। অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে নতুন করে রিমান্ডে নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া যায়নি বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

প্রতিবেদনে জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল (ইউএনএফপিএ) জানিয়েছে, বাংলাদেশে ১৮ বছরের আগে ৫১ শতাংশ মেয়ের বিয়ে হয়। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ১৫ বছরের নিচে মেয়েদের বিয়ের হার বেড়ে ৮ দশমিক ২ শতাংশ হয়েছে। গ্রামীণ এলাকায় শিশু বিবাহের হার বেশি।

বাংলাদেশে ২০১৭ সালের পর থেকে ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী অবস্থান করছে। ২০২৪ সালের জুন থেকে অক্টোবরের মধ্যে রাখাইন রাজ্যের সহিংসতা থেকে আরও ৬৪ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করে। তবে তাদের আনুষ্ঠানিকভাবে শরণার্থী স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। ডিসেম্বর শেষে ভাসানচরে ৩৬ হাজার ৫৯৩ জন রোহিঙ্গা বসবাস করছিল।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাবেক সরকার প্রবাসী সমালোচক, সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মীদের ভয় দেখাতে বা প্রতিশোধ নিতে দেশের বাইরে চাপ প্রয়োগ করত। অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে এ ধরনের ঘটনার রিপোর্ট পাওয়া যায়নি।

২০২৪ সালের বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি ছিল চরম উত্থান-পতনের মধ্যে। বছরের প্রথম আট মাসে রাজনৈতিক দমন-পীড়ন, গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ, গুম ও হত্যার অভিযোগ প্রাধান্য পেলেও আগস্টের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন আসে। তবে বিচারহীনতার সংস্কৃতি, শ্রমিক অধিকার লঙ্ঘন ও রোহিঙ্গা সংকটসহ বহু চ্যালেঞ্জ এখনও অমীমাংসিত রয়ে গেছে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত