দীর্ঘদিনের সীমান্ত বিরোধসহ নানা টানাপোড়েনের পর এখন চীন ও ভারতের মধ্যে আস্থার সম্পর্ক আরও গভীর হচ্ছে।
চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী রবিবার বন্দরনগরী তিয়ানজিনে সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশন (এসসিও) সম্মেলনের ফাঁকে এক বৈঠকে এ অভিমত ব্যক্ত করেন। সাত বছরের মধ্যে এবারই প্রথম চীন সফর করছেন মোদী।
বৈঠকে শি মোদীকে বলেন, চীন ভারতের প্রতিদ্বন্দ্বী নয়, অংশীদার হওয়া উচিত। মোদী বলেন, এখন দুই দেশের মধ্যে একটি ‘শান্তি ও স্থিতিশীলতার পরিবেশ’ তৈরি হয়েছে।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনসহ বিশ্বের ২০টিরও বেশি দেশের শীর্ষ নেতা এ সম্মেলনে অংশ নিয়েছেন। তবে এ বছরের সম্মেলনে প্রাধান্য বিস্তার করে আছে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বিভিন্ন দেশের বাণিজ্যযুদ্ধ।
রাশিয়ার তেল কেনা অব্যাহত রাখার শাস্তি হিসেবে ভারতীয় পণ্যের ওপর কঠোর শুল্ক আরোপ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এদিকে ইউক্রেনের সঙ্গে চলমান যুদ্ধের কারণে অবরোধের হুমকির মুখে আছেন পুতিন।
ভারত ও চীন, দেশ দুটি শুধু জনবহুলই নয়, বিশ্বের বড় অর্থনীতিও। যুক্তরাষ্ট্র-ভারত সম্পর্ক ক্রমাগত বৈরী হওয়ার প্রেক্ষাপটে শির ঘনিষ্ঠ হচ্ছেন মোদী।
ইতোমধ্যে ভারত ও চীনের মধ্যে আবারও ফ্লাইট শুরুর ঘোষণা দিয়েছেন মোদী, যা ২০২০ সালে হিমালয় সীমান্তে দুই দেশের সেনাদের মধ্যে সংঘর্ষের পর স্থগিত রাখা হয়েছিল। যদিও কবে থেকে এই ফ্লাইট আবার শুরু হবে সে সম্পর্কে কিছু জানাননি তিনি।
বৈঠক শেষে একটি কৌশলগত লক্ষ্য ও দীর্ঘমেয়াদী দৃষ্টিকোণ থেকে দুই দেশের সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করে শি বলেন, সেটাই হবে ‘মিত্র হিসেবে উভয় দেশের জন্য সঠিক কাজ’।
নানা বৈরিতার মধ্যে সাত বছর পর মোদীর চীন সফর বেইজিং আয়োজিত এই সম্মেলনের উচ্চতাই বাড়িয়ে দিয়েছে। গত বছর কাজাখস্তানে অনুষ্ঠিত এসসিও সম্মেলন এড়িয়ে গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু এখন শুল্ক নিয়ে ওয়াশিংটনের সঙ্গে সম্পর্ক বৈরিতার দিকে গড়ানোর মধ্যে তিয়ানজিনে হাজির হলেন মোদী।
বেইজিং ও দিল্লির উত্তেজনা প্রশমনের পদক্ষেপ চীনকে ঠেকাতে যুক্তরাষ্ট্রের নানা প্রচেষ্টাকে অকার্যকর করে দিতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
এই সম্মেলনকে কেন্দ্র করে তিয়ানজিন শহর ছেয়ে গেছে ইংরেজি, রুশ ও চীনা ভাষায় ব্যানারে।
এবারের সম্মেলনস্থলটি বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে ঐতিহাসিকতাকে গুরুত্ব দিয়েছে চীন। এই বন্দর নগরী ১৯ শতকে ঔপনিবেশিক শক্তি চালু করেছিল, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপান তা দখলও করেছিল।
এই সম্মেলন শেষে বেইজিংয়ে সামরিক প্যারেডে পুতিন, ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান এবং পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফসহ বিভিন্ন নেতার থাকার কথা রয়েছে।
তথ্যসূত্র : বিবিসি