Beta
সোমবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
Beta
সোমবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

ব্যাটিং ব্যর্থতায় এশিয়া কাপ ফাইনাল হাতছাড়া

শামীমের বিদায়ে ফাইনালের দৌড় থেকেও বিদায় নিতে হয় বাংলাদেশকে। ছবি : ক্রিকইনফো
শামীমের বিদায়ে ফাইনালের দৌড় থেকেও বিদায় নিতে হয় বাংলাদেশকে। ছবি : ক্রিকইনফো
[publishpress_authors_box]

ইনিংসের তখনও এক বল বাকি। টিভি স্ক্রিনে এল লিটন দাসের মুখ। হতাশ, ব্যাথিত ও সব হারানোর ছবি তার ‍মুখাবয়বে স্পষ্ট। দলের জন্য শেষে কিছুই করতে পারলেন না। ইনজুরির কারণে টানা দুটি ম্যাচ সাইডলাইনে বসে থাকতে হলো তাকে। বাইরে থেকেই এশিয়া কাপের অভিযানের ইতি দেখলেন লিটন।

পাকিস্তানের বিপক্ষে মাত্র ১১ রানে হেরে ফাইনালে ওঠার স্বপ্ন শেষ হয় বাংলাদেশের। পাকিস্তানের দেওয়া ১৩৬ রানের লক্ষ্য ছুঁতে পারেনি তারা। থামতে হয়েছে ৯ উইকেটে ১২৪ রানে। ইনিংসের শুরুর চার ব্যাটারের চারজনই ব্যর্থ হওয়ায় রান তাড়ায় পেরে উঠেনি বাংলাদেশ।

তানজিদ তামিম একাদশে ছিলেন না। পারভেজ হোসেন ইমন তার জায়গায় নিজেকে মেলে ধরতে ব্যর্থ। প্রথম ওভারেই বড় শট নেওয়ার চেষ্টায় কোন রান করার আগেই ফিরলেন। ইমনের অহেতুক ব্যাট চালানো দেখলেন কিন্তু তা থেকে শিক্ষা নিলেন কই তাওহিদ হৃদয়।

শাহিন শাহ আফ্রিদির পায়ের বলে ক্রস ব্যাটে খেলতে গিয়ে মিস টাইমে ক্যাচ তুলে দেন ডিপ থার্ড ম্যানে। পরে ব্যাটিংয়ে পজিশনে উপরের দিকে সুযোগ পাওয়া মেহেদী হাসান ১০ বলে মাত্র ১১ রান করেছেন। আর গত ম্যাচে ৬৯ রান করা সাইফও এদিনে ১৫ বলে ১৮ রানের বেশি করতে পারেননি।

শুরুর চার ব্যাটারের ব্যর্থতায় প্রভাব পড়ে বাংলাদেমের রান তাড়ায়। মিডলঅর্ডারে সোহান ও শামীম ছোট ইনিংসগুলো যথেষ্ট ছিল না। শেষ পর্যন্ত ইনিংস শেষের তিন ওভার আগে শামীমের ২৫ বলে ৩০ রানে ফেরা বাংলাদেশের স্বপ্ন শেষ করে দেয়। তানজিম ১০, রিশাদ ১৬ রান করেও দলকে জেতাতে ব্যর্থ হন।

তবে এর আগেই মাত্র ১৩৬ রান তাড়া করার পথ তৈরি করা যেতো। অধিনায়কের আর্মব্যান্ড হাতে পরা জাকের আলি পারতেন। ৯ বলে ৫ রান করে তার বিদায় পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের ইনিংসের সবচেয়ে দৃষ্টিকটু আউট। সাইম আইয়ুবের বলটিতে উইকেট ছেড়ে মারতে চলেছিলেন জাকের।

দেখলেন বল অফস্ট্যাম্পের অনেক বাইরে। অথচ ওই বলে শক্তি দেখিয়ে টেনে মারতে গিয়ে বল তুলে দিলেন আকাশে। বড় শট খেলার পজিশন হারিয়েছিলেন, ব্যাটের টাইমিংও হবে না তা সাধারণ ক্রিকেট দর্শকও ব্যাট করতে গিয়ে তখন বুঝে যাবেন! অথচ জাকের পরিক্ষীত ব্যাটার হয়েও ভুল করলেন। তার ভুলেই ১৪তম ওভারেও জয়ের সুযোগ থাকা বাংলাদেশ নিজেদের পথ কঠিন করে তোলে। পরে আর সেই পথ পাড়ি দেওয়া হয়নি।

বাংলাদেশ বিদায় নেওয়ায় আগামী রবিবার ফাইনালে ভারতের মুখোমুখি হবে পাকিস্তান। ২০১৭ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালের পর এই প্রথম আরেকটি বড় টুর্নামেন্টের ফাইনালে মুখোমুখি হতে যাচ্ছে দুই দল। তবে এশিয়া কাপে এই প্রথম।  

শামীমের বিদায়ের স্বপ্ন ধূসর

অনভিজ্ঞ ব্যাটিং লাইনে অভিজ্ঞতা ছিল শুধু নুরুল হাসান সোহানের। দুই বিশ্বকাপে খেলা এই ব্যাটার অবশ্য অভিজ্ঞতার ঝুলি মেলে ধরতে ব্যর্থ। এর আগে মেহেদি হাসানের ১১, জাকের আলির ৯ বলে ৫। অধিনায়ক হয়ে প্রয়োজনের সময় কি করলেন তা একমাত্র এই ব্যাটারই বলতে পারবেন।

ভরসা ছিল শামীম হোসেনের ওপর। তার ব্যাটে ২৫ বলে ২ ছক্কায় চলে এসেছিল ৩০ রান। শেষ তিন ওভারে চল্লিশের বেশি রান থাকলেও জয়ের স্বপ্ন দেখছিল বাংলাদেশ। সঙ্গে ব্যাটিংয়ে ভালো হাত পাকানো তানজিম হাসান সাকিবের ১০ রান খুব কার্যকর মনে হচ্ছিল বাংলাদেশের জন্য। কিন্তু ১৭ তম ওভারে শামীমের বিদায়ে সব শেষ হয়ে গেল যেন। শাহিন শাহ আফ্রিদির স্লোয়ারে রিভার্স শট খেলতে গিয়ে পয়েন্টে ক্যাচ তুলে দেন শামীম।

পাওয়ার-প্লেতে বাংলাদেশ হারাল ৩ উইকেট

লক্ষ্য কেবল ১৩৬ রান। সেটাই কঠিন হয়ে গেল বাংলাদেশের জন্য। পাওয়ার প্লে-তে ৩ উইকেট হারিয়েছে জাকের আলীর দল। সাইফ হাসান ১৮, পারভেজ হোসেন ০ আর তাওহিদ হৃদয় ফিরেছেন ৫ রানে।

দুই উইকেট শাহিন শাহ আফ্রিদির। প্রথম ওভারেই তিনি ফিরিয়েছিলেন ইমনকে। ১০ বলে ৫ করে হৃদয়ও ফেরেন আফ্রিদির বলে। গত দুই ম্যাচে অসাধারণ খেলা সাইফ হাসান ১৫ বলে ১৮৮ করে হারিস রউফের বলে ক্যাচ দেন সাইম আইয়ুবকে। ৬ ওভারে ৩ উইকেটে ৩৬ করেছে বাংলাদেশ।

ফাইনালে উঠতে বাংলাদেশের চাই ১৩৬ রান

১১তম ওভারেও ৫০ রান করতে পারেনি পাকিস্তান। সেখান থেকে সেমিফাইনালে পরিণত হওয়া ম্যাচটিতে তারা পেল ১৩৫ রানের পুঁজি। তিন তিনটি ক্যাচ ছাড়ার মূল্যই দিয়েছে বাংলাদেশ।

শূন্য রানে জীবন পেয়ে ১৫ বলে ২৫ রান করেছেন মোহাম্মদ নওয়াজ। দুবার ক্যাচ তুলেও ১ ও ২ রানে জীবন পাওয়া শাহিন আফ্রিদি করেছেন ১৯ রান। পাকিস্তানের হয়ে সবচেয়ে বেশি ৩১ রান হারিসের। তাতে স্কোরটা ১৩০ পার হয় পাকিস্তানের। মোস্তাফিজুর রহমান শেষ ওভারে দেন ১১ রান। ২৮ রানে ৩ উইকেট নেন তাসকিন আহমেদ।

তাসকিন আহমেদ ২৮ রানে নিয়েছেন ৩ উইকেট। তৃতীয় বাংলাদেশি হিসেবে টি-টোয়েন্টিতে ১০০ উইকেটের মাইলফলকে রেখেছেন পা। ছবি : ক্রিকইনফো

পাকিস্তান: ২০ ওভারে ১৩৫/৮ (হারিস ৩১, নওয়াজ ২৫, আফ্রিদি ১৯, সালমান ১৯, ফাহিম ১৪*, ফখর ১৩; তাসকিন ৩/২৮, রিশাদ ২/১৮, মেহেদী ২/২৮, মোস্তাফিজ ১/৩৩)।

তাসকিনের ১০০, সাইমের চতুর্থ ০

আগের ম্যাচে ছিলেন বিশ্রামে। আজ পাকিস্তানের বিপক্ষে বাঁচা-মরার ম্যাচে ফিরেছেন তাসকিন আহমেদ। আর প্রথম ওভারেই ফিরিয়েছেন পাকিস্তানের ওপেনার সাহিবজাদা ফারহানকে। তার অফস্টাম্পের বাইরের বলে স্কয়ার ড্রাইভ করতে গিয়ে রিশাদ হোসেনের তালুবন্দী হন ফারহান।

টি-টোয়েন্টিতে এটা তাসকিনের ১০০তম উইকেট। তৃতীয় বাংলাদেশি হিসেবে এই কীর্তি তাসকিনের। মোস্তাফিজুর রহমানের উইকেট ১৫০ আর সাকিব আল হাসানের ১৪৯টি।

ফারহান ফেরার পরের ওভারে শেখ মেহেদীর বলে রিশাদকে ক্যাচ দিয়েই আউট হন সাইম আইয়ুব। এবারের এশিয়া কাপে এ নিয়ে চার ম্যাচে ০ রানে আউট হলেন সাইম।

৩ ওভারে ২ উইকেটে ৯ রান করেছে পাকিস্তান। সালমান ০ ও ফখর জামান ব্যাট করছেন ৫ রানে।

তিন পরিবর্তন নিয়ে বোলিংয়ে বাংলাদেশ

এশিয়া কাপে শিরোপার স্বপ্ন নিয়ে খেলতে গেছে বাংলাদেশ। এজন্য আগে পৌঁছাতে হবে ফাইনালে। সেই অভিযানে আজ (বৃহস্পতিবার) পাকিস্তানের বিপক্ষে টস জিতে বোলিং নিয়েছেন জাকের আলী।

চোটের জন্য ভারতের বিপক্ষে খেলতে পারেননি লিটন দাস। তার জায়গায় নেতৃত্ব দেন জাকের আলী। আজ বাঁচা-মরার ম্যাচেও খেলছেন না তিনি। বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন জাকের। ভারত ম্বাযাচ থেকে বাদ পড়েছেন নাসুম আহমেদ, মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন ও তানজিদ হাসান। দলে ফিরেছেন মেহেদী হাসান, নুরুল হাসান ও তাসকিন আহমেদ। পাকিস্তান খেলছে আগের ম্যাচের একাদশ নিয়েই।

পাকিস্তানের বিপক্ষেও খেলেননি লিটন দাস, নেতৃত্বে ছিলেন জাকের আলী। ছবি : এসিসি

আগের ম্যাচে বাংলাদেশকে হারিয়ে ফাইনাল নিশ্চিত করে ফেলেছে ভারত। তাতে বাদ পড়ে গেছে শ্রীলঙ্কাও। আজ বাংলাদেশ-পাকিস্তানের ম্যাচটা তাই অলিখিত সেমিফাইনাল। ম্যাচটা অবশ্য বাংলাদেশ খেলছে ক্লান্তি নিয়েই। ভারত ম্যাচ শেষের ২৪ ঘণ্টা না যেতেই টানা দ্বিতীয় ম্যাচ খেলতে হচ্ছে তাদের। এশিয়া কাপ সুপার ফোরে টানা দুই ম্যাচ সূচিতে নেই আর কারও।

পাকিস্তানের বিপক্ষে ২৫টি টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের জয় কেবল ৫টি। তবে সবশেষ তিন ম্যাচের দুটি জিতেছে বাংলাদেশ, যা আজ আত্মবিশ্বাস জোগাবে নিঃসন্দেহে।

বাংলাদেশ একাদশ : সাইফ হাসান, পারভেজ হোসেন, তাওহিদ হৃদয়, জাকের আলী (অধিনায়ক), শামীম হোসেন, নুরুল হাসান, রিশাদ হোসেন, মেহেদী হাসান, তানজিম হাসান, তাসকিন আহমেদ ও মোস্তাফিজুর রহমান।

পাকিস্তান একাদশ : সাবিজাদা ফারহান, ফখর জামান, সাইম আইয়ুব, হুসেইন তালাত, মোহাম্মদ নওয়াজ, সালমান আগা (অধিনায়ক), ফাহিম আশরাফ, মোহাম্মদ হারিস (উইকেটকিপার), শাহিন শাহ আফ্রিদি, হারিস রউফ ও আবরার আহমেদ।

আরও পড়ুন

সর্বাধিক পঠিত