এশিয়া কাপের ইতিহাসে প্রথমবার ভারত-পাকিস্তান ফাইনাল। সেখানে গত দুই ম্যাচে পাকিস্তানকে নাস্তানাবুদ করে আসা ভারত দু’বার পড়ল কোনঠাসা অবস্থানে। অথচ ভারতের ওই অবস্থার সুবিধা নিতে পারল না পাকিস্তান। টানা তৃতীয়বার পাকিস্তানকে হারিয়ে টুর্নামেন্টের চ্যাম্পিয়ন হয়ে গেল ভারত। ৫ উইকেটের জয়ে নবমবার এশিয়া কাপের চ্যাম্পিয়ন তারা।
নিজেদের ব্যাটিং ইনিংসের মতো ভারতের ব্যাটিং ইনিংসেও দুর্দান্ত শুরু পেয়েছিল পাকিস্তান। ৭ রানে টুর্নামেন্টের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর অভিষেক শর্মাকে ফেরাতে পেরেছে তারা। অভিষেক মাত্র ৫ রানে আউট হন। ১০ রানের মধ্যে সূর্যকুমার ও ২০ রানের মধ্যে শুভমান গিলকেও ফেরায় পাকিস্তান। তিন ওভারে শক্তিশালি ভারত ব্যাটিং লাইনের শুরুটা গুড়িয়ে দেন তারা।
অথচ পরের ৫৭ রানের জুটিতে ম্যাচে দাপট ধরে রাখার পথটা হারিয়ে ফেলে পাকিস্তান। তিলক ভার্মা ও সঞ্জু স্যামসন মিলে এই জুটিতে ভারতকে জয়ের পথে আনেন। ২১ বলে ২৪ করে ফেরেন সঞ্জু। চতুর্থ উইকেট হারালেও ভারত পথ হারায়নি শিভম দুবের ব্যাটে।
হারদিক পান্ডিয়ার অভাব মিটিয়ে দেওয়া ইনিংস খেলেন শিভম দুবে। তিলক ভার্মার সঙ্গে ৬০ রানের জুটিতে ভারতকে চ্যাম্পিয়ন স্বাদ এনে দেন শিভম। ২২ বলে ২টি করে ছক্কা ও চারে ৩৩ করেন। তিলক অপরাজিত ছিলেন ৪ ছক্কা ও ৩ চারে ৫৩ বলে ৬৯ রান করে।
সবশেষ ম্যাচের পর সংবাদ সম্মেলনে সূর্যকুমার যাদব বলেছিলেন ভারত-পাকিস্তান ম্যাচকে আর দ্বৈরথ বলা যায় না। কারণ পাকিস্তান ভারতকে হারাতেই পারে না। টি-টোয়েন্টিতে সবশেষ ২০২২ এশিয়া কাপে জিতেছিল পাকিস্তান। এরপর থেকে এই ফরম্যাটে তাদের ভারতের বিপক্ষে সাফল্য নেই। ওয়ানডেতে ব্যবধান আরও আগে থেকেই।
এত লড়াইয়ের পর এবারের এশিয়া কাপ ফাইনালে সূর্যকুমারকে জবাব দেওয়ার দারুণ সুযোগ তৈরি করেছিল পাকিস্তান। কিন্তু টি-টোয়েন্টির সেরাদের সঙ্গে শেষটায় আর পেরে উঠেনি “আনপ্রেডিক্টেবল’ তকমা পাওয়া দলটি। নিজেদের মতো খেলেই পাকিস্তান তৃতীয় এশিয়া কাপ জয়ের সুযোগ হারিয়েছে।
চমৎকার শুরুর পরও হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ল পাকিস্তান
১ উইকেটে ছিল ১১৩ রান। সেখান থেকে ১৪৬ রানে নেই বাকি ৯ উইকেট। মাত্র ৩৩ রানে ৯ উইকেটের পতন একমাত্র পাকিস্তানকে দিয়েই সম্ভব। এশিয়া কাপ ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে আগে ব্যাট করতে নেমে এমন কিছুই দেখালো পাকিস্তান। ১৯০ করার সম্ভাবনা জাগিয়ে তারা শেষমেষ ১৪৬ রান তুলেছে।
পাকিস্তানের জন্য শুরুটা অবিশ্বাস্য ছিল। কোন উইকেট না হারিয়ে বুমরাহ-কুলদ্বীপদের একের পর এক চার-ছক্কা হাঁকিয়ে যাচ্ছিলেন দুই ওপেনার। শাহিবজাদা ফারহান ও ফখর জামান মিলে ৯.৪ ওভারে তুলেছে ৮৪ রান। ফারহান ৩৮ বলে ৫ চার ও ৩ ছক্কায় ৫৭ রানে ফেরার পর থেকে মড়ক শুরু।
এরপর আর সেই মড়ক থামাতে পারেনি পাকিস্তান ব্যাটাররা। মিডলঅর্ডার ও লোয়ার মিডলঅর্ডারদের চরম ব্যাটিং ব্যর্থতায় দেড়শ’র আগে আটকে গেল পাকিস্তান। ফখর ৩৫ বলে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৪৬ রান করেন। ১১ বলে ১৪ করেন সাইম আইয়ুব।
বাকি ব্যাটাররা সবাই এক অঙ্কের ঘরে রান তুলে ফিরেছেন। কুলদ্বীপ যাদব নিজের শেষ ওভারে নিয়েছেন তিন উইকেট। মোট ৩০ রানে ৪ উইকেট তার। এছাড়া দুটি করে উইকেট নেন বরুন, বুমরাহ ও অক্ষর প্যাটেল।
ফাইনালে হারদিককে পাচ্ছে না ভারত ব্যাটিংয়ে পাকিস্তান
ব্যাট ও বল হাতে ভারতের জন্য দারুণ গুরুত্বপূর্ণ ক্রিকেটার হারদিক পান্ডিয়া। অথচ পাকিস্তানের বিপক্ষে এশিয়া কাপ ইতিহাসে প্রথম ফাইনালে তাকে পাচ্ছে না ভারত। হারদিককে ছাড়া ফাইনালে টস জিতে ভারত আগে বল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
ফাইনালের লড়াইয়ে দুই দলের একাদশে দুই রকম আক্রমণ সাজিয়েছে। পাকিস্তান খেলছে তিন স্পেটশালিস্ট পেসার নিয়ে। ওদিকে ভারত জাসপ্রিত বুমরাহ ছাড়া আর কোন স্পেশালিস্ট পেসারকে খেলাচ্ছে না। হারদিক না থাকায় দলে ঢুকেছেন রিঙ্কু সিং। তবে বাড়তি পেসার রাখা হয়নি একাদশে।
পাকিস্তান : শাহিবজাদা ফারহান, ফখর জামান, সাইম আইয়ুব, সালমান আগা (অধিনায়ক), হুসেইন তালাত, মোহাম্মদ হারিস, শাহিন শাহ আফ্রিদি, মোহাম্মদ নাওয়াজ, ফাহিম আশরাফ, হারিস রউফ, আবরার আহমেদ।
ভারত : অভিষেক শর্মা, শুভমান গিল, সূর্যকুমার যাদব (অধিনায়ক), তিলক ভার্মা, সঞ্জু স্যামসন, শিভম দুবে, রিঙ্কু সিং, অক্ষর প্যাটেল, কুলদ্বীপ যাদব, বরুন চক্রবর্তী, জসপ্রিত বুমরাহ।