দেশের বাজারে সোনার দাম আরও বেড়েছে; গড়েছে নতুন রেকর্ড। ভরি এখন প্রায় দুই লাখ টাকা।
শনিবার সবচেয়ে ভালো মানের (২২ ক্যারেট) সোনার দাম ভরিতে ২ হাজার ১৯৩ টাকা বাড়ানোর পর নতুন রেকর্ড হয়েছে। রবিবার থেকে এই মানের প্রতিভরি সোনা ১ লাখ ৯৭ হাজার ৫৭৬ টাকায় বিক্রি হবে।
বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনই সোনার দাম এত উচ্চতায় উঠেনি।
অন্যান্য মানের সোনার দরও প্রায় একই হারে বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে দেশের স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস)।
সবশেষ গত ২৯ সেপ্টেম্বর ২২ ক্যারেট মানের সোনার দাম ভরিতে ২ হাজার ৪১৪ টাকা বাড়ানো হয়। ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে এই মানের প্রতিভরি সোনা ১ লাখ ৯৫ হাজার ৩৮৪ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল।
তার আগে কয়েক দফা বাড়ানোয় দেশের বাজারে সোনার ভরি রেকর্ড গড়ার পর ২৭ সেপ্টেম্বর ভরিতে ১ হাজার ৮৯০ টাকা কমানোর ঘোষণা দেয় বাজুস। এতে ভরি নামে ১ লাখ ৯২ হাজার ৯৬৯ টাকায়।
এর আগে ২৩ সেপ্টেম্বর এই মানের সোনার দাম ভরিতে ৩ হাজার ৬৬২ টাকা বাড়ানো হয়।
তার আগে টানা আট দফায় সবচেয়ে ভালো মানের (২২ ক্যারেট) সোনার ভরি ১৮ হাজার টাকার বেশি বাড়ানোর পর ১৭ সেপ্টেম্বর ১ হাজার ৪৭০ টাকা কমিয়েছিল বাজুস।
১৮ সেপ্টেম্বর থেকে এই মানের সোনা ১ লাখ ৮৮ হাজার ১৫২ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল। দুই দিন না যেতেই ২০ সেপ্টেম্বর সোনার দাম ফের বাড়ানো হয়; ভরিতে বাড়ে ১ হাজার ১৫০ টাকা।
২১ সেপ্টেম্বর ২২ ক্যারেটের প্রতিভরি সোনা ১ লাখ ৮৯ হাজার ৩০৭ টাকায় বিক্রি হয়। একদিন পর ২২ সেপ্টেম্বর আরও ১ হাজার ৮৯০ টাকা বাড়ানো হয়।
গত মাসের প্রথম দিন ১ সেপ্টেম্বর ২২ ক্যারেট সোনার দাম ভরিতে ১ হাজার ৪৭০ টাকা বাড়ানো হয়। ৩ সেপ্টেম্বর বাড়ানো হয় ৩ হাজার ৪৪ টাকা। তার আগে গত ৩০ আগস্ট ভরিতে ১ হাজার ৬৬৮ টাকা বাড়ানো হয়। ২৬ আগস্ট বাড়ানো হয়েছিল ১ হাজার ৫০ টাকা।
এর আগে প্রায় এক মাস দেশের বাজারে মূল্যবান এই ধাতুর দাম একই জায়গায় স্থির ছিল।
বাজুসের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, সেপ্টেম্বর মাস জুড়ে অস্থির ছিল দেশের সোনার বাজার। পুরো মাসে মোট ১২ বার দাম সমন্বয় করেছে বাজুস। এর মধ্যে ১০ বারই বেড়েছে দাম, কমেছে মাত্র দুইবার।
সেপ্টেম্বর মাসে ২২ ক্যারেট মানের প্রতিভরি সোনার দাম বেড়েছে ২১ হাজার ৬৬ টাকা।
চলতি বছর (২০২৫ সাল) এখন পর্যন্ত মোট ৬০ বার স্বর্ণের দাম সমন্বয় হয়েছে। এর মধ্যে ৪২ বার বেড়েছে, আর কমেছে মাত্র ১৮ বার। গত বছর (২০২৪ সাল) পুরো সময়ে দাম সমন্বয় হয়েছিল ৬২ বার।
আন্তর্জাতিক বাজারে রেকর্ড গড়ার পর দেশের বাজারেও মূল্যবান এই দাতুর দাম বাড়ানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা।
গত ২০ আগস্ট থেকে বিশ্ববাজারে সোনার দাম টানা বাড়ছে। সেই দামের সঙ্গে সমন্বয় করে বাজুসও দেশের বাজারে এই ধাতুর দাম বাড়িয়ে চলেছে। মাঝে দুই দিন নিম্মমুখী হওয়ায় দেশের বাজারেও কিছুটা কমানো হয়।
বাজুস সাধারণত রাত ৯টার দিকে সোনার দাম বাড়ানো-কমানোর ঘোষণা দিয়ে থাকে। পরের দিন থেকে সারা দেশে সেই দরে সোনা বিক্রি হয়।
তবে মাঝে-মধ্যে দিনে দুই বারও সোনার দাম বাড়ানো-কমানোর ঘোষণা দিয়ে থাকে সংগঠনটি।
শনিবার রাত ঠিক ৯টায় সোনার দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেয় বাজুস। দাম বাড়ানোর ব্যাখ্যায় সংগঠনটির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, স্থানীয় বাজারে তেজাবি স্বর্ণের (পিওর গোল্ড) মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে সোনার নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে।
বাজুসের ঘোষণা অনুযায়ী, রবিবার থেকে দেশের বাজারে হলমার্ক করা প্রতিভরি (১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম) ২২ ক্যারেট মানের সোনা ১ লাখ ৯৭ হাজার ৫৭৬ টাকায় বিক্রি হবে। ২১ ক্যারেটের প্রতিভরি সোনা বিক্রি হবে ১ লাখ ৮৮ হাজার ৫৯৫ টাকায়। ১৮ ক্যারেটের ১ লাখ ৬১ হাজার ৬৫১ টাকায় এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতিভরি সোনা ১ লাখ ৩৪ হাজার ২৫৩ টাকায় বিক্রি হবে।
শনিবার পর্যন্ত দেশের বাজারে ২২ ক্যারেট মানের প্রতিভরি সোনা ১ লাখ ৯৫ হাজার ৩৮৪ টাকায় বিক্রি হয়। ২১ ক্যারেটের সোনা বিক্রি হয় ১ লাখ ৮৬ হাজার ৪৯৬ টাকায়। এছাড়া ১৮ ক্যারেটের ১ লাখ ৫৯ হাজার ৮৫৫ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতিভরি সোনা ১ লাখ ৩২ হাজার ৭২৫ টাকায় বিক্রি হয়।
হিসাব বলছে, পাঁচ দিনের ব্যবধানে প্রতিভরি ২২ ক্যারেটের সোনার দাম বাড়ছে ২ হাজার ১৯৩ টাকা। ২১ ক্যারেটের বাড়ছে ২ হাজার ১০০ টাকা। এছাড়া ১৮ ক্যারেটে ১ হাজার ৭৯৬ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতিভরি সোনার দাম বাড়ছে ১ হাজার ৫২৭ টাকা।
বিশ্ববাজারেও নতুন রেকর্ড
বিশ্ববাজারেও সোনার দাম নতুন রেকর্ড গড়েছে; অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে প্রতি আউন্স (৩১.১০৩৪৭৬৮ গ্রাম) সোনার দাম প্রায় ৩ হাজার ৯০০ ডলারে উঠেছে।
শনিবার রাত সাড়ে ৯টায় বিশ্ববাজারে প্রতি আউন্স সোনার দাম ছিল ৩ হাজার ৮৮৬ ডলার ৮০ সেন্ট।
গত ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে বাজুস যখন দেশের বাজারে সানার দাম কমানোর ঘোষণা দেয় তখন প্রতি আউন্স সোনার দাম ছিল ৩ হাজার ৮২৬ ডলার ৫৮ সেন্ট।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত ২ এপ্রিল বিভিন্ন দেশের ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপ করার পর সোনার দাম হু হু করে বাড়ছিল। ২২ এপ্রিল প্রতি আউন্স সোনার দাম ৩ হাজার ৫০০ ডলার ছাড়ায়।
এরপর আন্তর্জাতিক বাজারে সোনার দর ৩ হাজার ৫০০ ডলারের নিচে লেনদেন হচ্ছিল। আগস্টের মাঝামাঝি সময় থেকে বাড়তে থাকে এই ধাতুর দর।