Beta
মঙ্গলবার, ১২ আগস্ট, ২০২৫
Beta
মঙ্গলবার, ১২ আগস্ট, ২০২৫

যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউর মধ্যে চুক্তি, এড়ানো গেল বাণিজ্যযুদ্ধ

EU
[publishpress_authors_box]

দীর্ঘ আলোচনার পর যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) বাণিজ্য চুক্তিতে রাজি হয়েছে। ফলে ১ আগস্ট থেকে যে উচ্চ শুল্ক কার্যকর হওয়ার কথা ছিল, তা এড়ানো সম্ভব হয়েছে। পাশাপাশি এড়ানো গেছে একটি সম্ভাব্য ট্রান্সআটলান্টিক বাণিজ্যযুদ্ধ।

এই চুক্তির মাধ্যমে অধিকাংশ ইউরোপীয় পণ্যের ওপর ১৫ শতাংশ শুল্ক নির্ধারণ করা হয়েছে। রবিবার স্কটল্যান্ডে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লিয়েনের মধ্যে এক বৈঠকের পর এ চুক্তি হয়।

ট্রাম্প স্কটল্যান্ডে তার টার্নবেরি গলফ রিসোর্টে সাংবাদিকদের বলেন, “এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ এক আলোচনার ফল। আমার মনে হয়, এটি উভয় পক্ষের জন্যই দারুণ হবে।” তিনি একে “এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় চুক্তি” বলে উল্লেখ করেন।

ভন ডার লিয়েন বলেন, এই চুক্তি “স্থিতিশীলতা” নিয়ে আসবে, যা “আটলান্টিকের দুই পাড়ের ব্যবসাগুলোর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ”।

চুক্তি স্বাক্ষরের কয়েক দিনের মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্র ইইউর পণ্যের ওপর ৩০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করতে যাচ্ছিল। এটি ট্রাম্প প্রশাসনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য চুক্তি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এর আগে তিনি জাপান, যুক্তরাজ্য, ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনাম ও ফিলিপাইনের সঙ্গে প্রাথমিক চুক্তি এবং চীনের সঙ্গে ৯০ দিনের বাণিজ্য বিরতি ঘোষণা করেছিলেন।

ইইউ যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার। গত বছর দুই অঞ্চলের মধ্যে পণ্য ও সেবার মোট বাণিজ্য প্রায় ২ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছায়।

চুক্তি অনুযায়ী ইউরোপীয় রপ্তানি পণ্যের ওপর ১৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে। এর মধ্যে অটোমোবাইলও রয়েছে।

ইউরোপের গাড়ি শিল্পের জন্য এই ১৫ শতাংশ শুল্ক কিছুটা স্বস্তির খবর। কারণ এপ্রিল থেকে তাদের ওপর আগের আড়াই শতাংশ শুল্কের সঙ্গে ২৫ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক কার্যকর ছিল।

তবে কিছু নির্দিষ্ট পণ্য যেমন বিমানযন্ত্রাংশ, সেমিকন্ডাক্টর যন্ত্রপাতি, কিছু রাসায়নিক এবং কৃষিপণ্য পুরোপুরি শুল্কমুক্ত থাকবে।

ট্রাম্প আরও জানান, ইউরোপীয় ইউনিয়ন যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রায় ৭৫০ বিলিয়ন ডলারের জ্বালানি কেনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। পাশাপাশি তারা যুক্তরাষ্ট্রে ৬০০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ এবং সামরিক সরঞ্জাম কেনার বড় অর্ডার দেবে বলেও জানান।

তিনি বলেন, “আমরা ইউরোপের সব দেশের দুয়ার উন্মুক্ত করেছি।” তবে ঘোষণা অনুযায়ী অনেক তথ্যই এখনও পরিষ্কার নয়।

আইএনজি রিসার্চের গ্লোবাল হেড অব ম্যাক্রো কার্সটেন ব্রেজেস্কি এক বিবৃতিতে বলেন, “আজকের চুক্তির সবচেয়ে বড় সীমাবদ্ধতা হলো, এখনও কোনও লিখিত দলিল নেই। আগামী কয়েক ঘণ্টা ও দিনে হয়তো বিষয়টি আরও স্পষ্ট হবে। তাই এখনই চূড়ান্ত মূল্যায়ন করা উচিত নয়।”

ইউরোপীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে ট্রাম্পের কয়েক মাসের টানাপোড়েনের পর এই অগ্রগতি এসেছে। কারণ ট্রাম্প বহুবার ইইউকে অন্যায্য বাণিজ্যচর্চার জন্য দোষারোপ করেছেন।

আলোচনা শুরুর ঠিক আগে ট্রাম্প বলেন, “বর্তমান বাণিজ্যিক ব্যবস্থাটি একেবারে একপাক্ষিক ও যুক্তরাষ্ট্রের জন্য খুবই অন্যায্য।”

উরসুলা ভন ডার লিয়েন রবিবার বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের মিলিত অর্থনৈতিক শক্তি “কোটি কোটি মানুষ ও ট্রিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য” নিয়ে গঠিত।

তিনি ট্রাম্পকে একজন “কঠোর” আলোচক বলেও উল্লেখ করেন। আর এর জবাবে ট্রাম্প বলেন, “আমি ন্যায়সঙ্গত।”

বাণিজ্য সংঘাত এড়ানো গেল

জুলাইয়ের শুরুতে আলোচনা ভেস্তে যাওয়ার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছালে তখন ট্রাম্প হুমকি দেন, ইইউ জাপানের সঙ্গে সদ্য চুক্তি করা ১৫ শতাংশ শুল্ক সমতুল্য না করলে তিনি ৩০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করবেন।

সমঝোতা না হলে কী হতে পারে তা আঁচ করে ইউরোপীয় কমিশন একটি দীর্ঘ প্রতিশোধমূলক শুল্ক তালিকা প্রস্তুত করেছিল। এতে গরুর মাংস, বিয়ার, বোয়িং বিমানের যন্ত্রাংশ ও গাড়ির যন্ত্রাংশের মতো নানা পণ্য অন্তর্ভুক্ত ছিল।

জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ ম্যার্জ চুক্তিটিকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, “এই চুক্তির মাধ্যমে একটি বাণিজ্য সংঘাত এড়ানো সম্ভব হয়েছে, যা জার্মানির রপ্তানিনির্ভর অর্থনীতির ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারত। বিশেষ করে গাড়ি শিল্পে, যেখানে বিদ্যমান ২৭ দশমিক ৫ শতাংশ শুল্ক এখন প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে।”

ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি বলেন, “চুক্তি হওয়া একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ। তবে এর বিস্তারিত না দেখে চূড়ান্ত মূল্যায়ন করা যাবে না।”

অন্যান্য ইউরোপীয় আইনপ্রণেতারা অবশ্য চুক্তি নিয়ে সমালোচনামূলক মন্তব্য করেছেন।

ডেনমার্কের এমপি রাসমুস জারলোভ বলেন, “এখানে উদযাপনের মতো কিছু নেই। প্রায় সবকিছুই ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্র, দুই জায়গাতেই আরও ব্যয়বহুল হয়ে উঠবে। আর আমরা সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হব। হোয়াইট হাউজের অর্থনৈতিক অজ্ঞতা পশ্চিমাদের ওপর বড় ক্ষতি ডেকে আনছে।”

ট্রাম্প ইউরোপে থাকবেন মঙ্গলবার পর্যন্ত। সোমবার তিনি যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সঙ্গে বৈঠক করবেন। সেখানে বাণিজ্যই একটি প্রধান আলোচ্য বিষয় হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য বাণিজ্য কাঠামোর একটি খসড়া মে মাসে প্রকাশিত হয়েছিল। তবে তাতে অনেক বিষয় এখনও অস্পষ্ট।

মঙ্গলবার ট্রাম্প অ্যাবারডিনে পরিবারের তত্ত্বাবধানে নির্মিত তৃতীয় গলফ কোর্স উদ্বোধন করবেন। তারপর ওই দিনই ওয়াশিংটনের উদ্দেশে যাত্রা করবেন।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত