ডলারের বাজার যেন অস্থির না হয়, সেজন্য নিলামে কিনেই যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
সোমবার আরও ১৩ কোটি ডলার কেনা হয়েছে। ১২১ টাকা ৭৫ পয়সা দরে কেনা হয়েছে এই ডলার।
সব মিলিয়ে গত দুই মাসে কয়েক দফায় কেনা হলো ১৮৮ কোটি (১.৮৮ বিলিয়ন) ডলার।
তিন বছর আগে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর ডলারের বাজারে অস্থিরতা তৈরি হয়। ডলারের দাম ৮৫ টাকা থেকে বাড়তে বাড়তে ১২২ টাকায় গিয়ে ঠেকে।
ডলারের বাজারের অস্থিরতার আঁচে দেশে মুল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভ থেকে প্রচুর ডলার বিক্রিও করে দিয়েছিল।
মুদ্রাবাজারের বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করার পর ডলারের দর নিয়ন্ত্রণে রাখতে গত ১৩ জুলাই থেকে ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে নিলামের মাধ্যমে ডলার কেনা শুরু করে বাংলাদেশ ব্যাংক।
প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স ও রপ্তানি আয় বাড়ায় ডলারের সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় বাজার স্থিতিশীল রাখতে অর্থাৎ ডলারের দর যাতে আর কমে না যায়, এখন সেজন্যই ডলার কেনা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান।
তিনি সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, সোমবার ১২১ টাকা থেকে ১২১ টাকা ৭৫ পয়সা দরে ২৬ ব্যাংকের কাছ থেকে ১৩ কোটি ডলার কেনা হয়। আগের মতোই বাংলাদেশ ব্যাংকের ফরেন এক্সচেঞ্জ (এফএক্স) নিলাম কমিটির মাধ্যমে ‘মাল্টিপল প্রাইস অকশন’ পদ্ধতিতে এই ডলার কেনা হয়।
টাকার অবমূল্যায়ন ঠেকাতে এবং রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলোকে আমদানি বিল পরিশোধে সহায়তা দিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আগে ডলার বিক্রি করছিল, সেখানে এখন চলছে উল্টো প্রবাহ।
তার কারণ ব্যাখ্যা করে আরিফ খান বলেন, “ডলারের দর বেড়ে যাওয়া অর্থনীতির জন্য ভালো নয়, আবার কমে যাওয়াও ভালো নয়। তাই এ বাজারকে ঠিক রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিলামে ডলার কিনছে। তাতে ব্যাংকগুলোতে তারল্য প্রবাহ বাড়ছে।”
এর আগে সবশেষ ১৬ সেপ্টেম্বর একদিনেই ৩৫ কোটি ৩০ লাখ ডলার কিনেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
গত ১৩ জুলাই কিনেছিল ১৭ কোটি ১০ লাখ ডলার, এরপর ১৫ জুলাই ৩১ কোটি ৩০ লাখ ডলার, ২৩ জুলাই ১ কোটি ডলার কেনা হয়।
৭ আগস্ট কেনা হয় ৪ কোটি ৫০ লাখ ডলার। ১০ আগস্ট ৮ কোটি ৩০ লাখ ডলার, ১৫ আগস্ট ১৭ কোটি ৬০ লাখ ডলার, ২৯ আগস্ট ১৫ কোটি ডলার কেনে বাংলাদেশ ব্যাংক।
চলতি মাসের ২ সেপ্টেম্বর কেনা হয় ৪ কোটি ৭৫ লাখ ডলার। ৪ সেপ্টেম্বর ১৩ কোটি ৪০ লাখ ডলার কেনা হয়। ৯ সেপ্টেম্বর কেনা হয় ২৬ কোটি ৫০ লাখ ডলার।
গত ২০২৪-২৫ অর্থ বছর পর্যন্ত গত তিন বছরে বাংলাদেশ ব্যাংক বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ থেকে ২৫ বিলিয়নের বেশি ডলার বিক্রি করে, যা মূলত জ্বালানি, সার ও খাদ্য আমদানি বিল মেটাতে ব্যবহার হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক ডলার কেনায় রিজার্ভ বা বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয়ন বাড়ছে। এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) দেড় বিলিয়ন ডলার আমদানি বিল পরিশোধের পরও স্বস্তিদায়ক অবস্থায় রয়েছে রিজার্ভ।
গত ৭ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভ থেকে আকুর জুলাই-আগস্ট মেয়াদের ১৫০ কোটি (১.৫০ বিলিয়ন) ডলার আমদানি বিল পরিশোধের পর বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়িয়েছিল ২৫ দশমিক ৩০ বিলিয়ন ডলার, গ্রস বা মোট হিসাবে ৩০ দশমিক শূন্য চার বিলিয়ন ডলার।
গত দুই সপ্তাহে সেই রিজার্ভ বেশ খানিকটা বেড়েছে। গত সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ বেড়ে হয় ২৬ দশমিক ১৮ বিলিয়ন ডলার। গ্রস হিসাবে ৩১ দশমিক ০৯ বিলিয়ন ডলার।
ব্যাংকারা বলছেন, রেমিটেন্স ও রপ্তানির প্রবাহ বাড়ার পাশাপাশি নিলামে ডলার কেনাও রিজার্ভ বাড়াতে ভূমিকা রাখছে।