বিসিবি নির্বাচনে ১৭৭ জন কাউন্সিলরের তালিকায় বাদ দেওয়া হয়েছে অনেক প্রভাবশালীর মনোনয়ন। তাদের অন্যতম সাবেক পরিচালক ও ক্রিকেট সংগঠক লোকমান হোসেন ভূঁইয়া (নাখালপাড়া ক্রিকেটার্স), বিসিবির সাবেক মিডিয়া ও আম্পায়ার্স কমিটির চেয়ারম্যান ইফতেখার রহমান মিঠু এবং বিপিএল ফ্র্যাঞ্চাইজি ফরচুন বরিশালের মালিক মিজানুর রহমান (গুলশান ক্রিকেট ক্লাব)।
প্রভাবশালী ক্লাব সংগঠকদের নাম বাদ পড়ায় ক্রিকেট অঙ্গনে শুরু হয় নানা আলোচনা। আবার ওল্ড ডিওএইচএস ক্রিকেট ক্লাব থেকে মনোনীত তামিম ইকবালের কাউন্সিলর মনোনয়ন নিয়েও আপত্তি জমা পড়েছে। খসড়া ভোটার তালিকার ওপর আপত্তি গ্রহণের দিনে মোট আপত্তি জমা পড়েছে প্রায় ৩০টা। এর শুনানি হবে আজ।
জেলা ও বিভাগীয় কোটার মনোনয়ন না পাওয়া কাউন্সিলর প্রার্থীরা এবং ক্যাটাগরি ২-এর সেই ১৫ ক্লাবের প্রতিনিধিদের অনেকে কাল গিয়েছিলেন বিসিবিতে। নির্ধারিত সময়ে প্রার্থীরা গিয়ে দেখেন, কমিশনের তিন সদস্যের কেউই উপস্থিত নেই!
সভাপতি পদে আমিনুল ইসলামের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করবেন তামিম ইকবাল। অথচ ওল্ড ডিওএইচএস ক্লাবের হয়ে তামিম ইকবালের কাউন্সিলরশিপের বিরুদ্ধে আপত্তি জানিয়েছেন সাবেক ক্রিকেটার হালিম শাহ। তবে হালিম শাহ বলেছেন, এ রকম কোনো চিঠিই নাকি তিনি নির্বাচন কমিশনে দেননি! এজন্যই ইফতেখার রহমান মিঠু বলেছেন, ‘‘সম্ভবত কমিশনারদের প্রতিনিধি হিসেবে একজন সেক্রেটারি আপত্তি পত্রগুলো গ্রহণ করেছেন। মোট ৩০টি আপত্তি জমা পড়েছে।প্রায় ৪০ বছর ক্রিকেটে আছি। এমন কিছু কখনও দেখিনি।’’
সাবেক পরিচালক লোকমান হোসেন ভূঁইয়া প্রায় এক ঘণ্টা বিসিবি ভবনে অপেক্ষা করেও কমিশনের কাউকে না পেয়ে বাধ্য হন আপত্তিপত্র জাতীয় পরিচয়পত্রসহ দুজন সিআইডি কর্মকর্তার হাতে জমা দিতে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে জ্যেষ্ঠ এ সংগঠক বলেন, ‘‘সাত বছর পর বোর্ডে এসে কমিশনের সঙ্গে দেখা করার ইচ্ছা ছিল, কিন্তু কাউকেই পাইনি। নির্বাচন নিয়ে যা হচ্ছে, তা পুরোপুরি নিয়মের বাইরে। তফসিলে কোথাও লেখা ছিল না সশরীরে এসে প্রমাণ দিতে হবে। অথচ আমাকে বলা হলো আপত্তি প্রমাণ করতে হলে সামনাসামনি আসতে হবে। এটা বড় ধরনের অনিয়ম। আমি নিজে পরিচালক নির্বাচন করেছি, জানি নিয়ম কী।’’
বিসিবির সাবেক সভাপতি ফারুক আহমেদের কাউন্সিলর ফরম বিসিবিতে জমা পড়েছিল ২২ সেপ্টেম্বর নির্ধারিত সময়ের ঘণ্টা দুয়েক পর। নির্ধারিত সময়ের পর ফরম জমা পড়ায় তাঁর কাউন্সিলরশিপ নিয়েও ৮-১০টি আপত্তি জমা পড়েছে বলে জানা গেছে।
নির্বাচনের জন্য বিসিবিতে কাউন্সিলের নাম জমা দেয়ার শেষ সময় ছিল ১৭ সেপ্টেম্বর। প্রায় বেশিরভাগ জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থা থেকে বিসিবিতে মনোনীত কাউন্সিলরদের নামও জমা পড়ে। তবে সেই তালিকার অনেকে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের অনুমোদিত অ্যাডহক কমিটির বাইরের ছিলেন। এ নিয়ে নিজের স্বাক্ষর করা চিঠি দিয়ে অ্যাডহক কমিটিতে থাকাদের কাউন্সিলর করতে বলেন আমিনুল ইসলাম বুলবুল।
রিট করা হলে বুলবুলের চিঠির কার্যকারিতা ১৫ দিনের জন্য স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট। যদিও একটু পরই সেটা স্থগিত করেন আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত। এমন অবস্থায় ২৩ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় ১৭৭ জন কাউন্সিলরের নাম প্রকাশ করে বিসিবির নির্বাচন কমিশন। যেখানে ৬ জেলা ও ১৫ ক্লাবের কোনো প্রতিনিধি নেই। সবমিলিয়ে বিসিবির নির্বাচন ক্রমশই বিতর্কিত হয়ে পড়ছে।
এই নির্বাচন নিয়ে ক্রিকেটার্স ওয়ালফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (কোয়াব) সভাপতি মিঠুন নিজের ফেইসবুক পেজে লিখেছেন, ‘‘বিসিবি নির্বাচন ঘিরে যা যা হচ্ছে, এসব কখনোই কাম্য নয়। এটা বাংলাদেশ ক্রিকেট ও ক্রিকেটারদের ভবিষ্যতের ব্যাপার। আমরা চাই, বিসিবি নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হোক।’’