Beta
মঙ্গলবার, ২১ অক্টোবর, ২০২৫
Beta
মঙ্গলবার, ২১ অক্টোবর, ২০২৫

জুলাই সনদের প্রশংসা কানাডার, গণতান্ত্রিক উত্তরণে পাশে থাকার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত

১৭ অক্টোবর বিকাল ৫টায় জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’ স্বাক্ষরের আনুষ্ঠানিকতা সারা হয়। ফাইল ছবি : বাসস
১৭ অক্টোবর বিকাল ৫টায় জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’ স্বাক্ষরের আনুষ্ঠানিকতা সারা হয়। ফাইল ছবি : বাসস
[publishpress_authors_box]

শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক উত্তরণের পথে এগিয়ে যাওয়ায় বাংলাদেশের প্রতি দৃঢ় সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছে কানাডা।

বাসস জানিয়েছে, বাংলাদেশে নিযুক্ত কানাডার হাই কমিশনার অজিত সিং সোমবার হাই কমিশনের অফিশিয়াল ফেইসবুক পেইজে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে এই সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছেন।

তিনি বলেছেন, “অবাধ, সুষ্ঠু, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের মাধ্যমে একটি শান্তিপূর্ণ রূপান্তরের দিকে এগিয়ে যাওয়ায় কানাডা বাংলাদেশের পাশে রয়েছে।”

অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছরেরও বেশি সময়ের ঐকমত্যের পর রাজনৈতিক দলগুলো ‘জুলাই জাতীয় সনদ’-এ স্বাক্ষর করেছে। এই ঐতিহাসিক মুহূর্তটির সাক্ষী থাকা কানাডিয়ান হাই কমিশনারসহ অন্য কূটনীতিকরা একে বাংলাদেশের রাজনৈতিক যাত্রার একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

‘জুলাই জাতীয় সনদ’ স্বাক্ষরের প্রশংসা করে অজিত সিং বলেন, “মূল গণতান্ত্রিক সংস্কারগুলো বাস্তবায়নের রূপরেখা ‘জুলাই সনদ’-এ দেওয়া হয়েছে, যা জাতীয় ঐক্য, জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছ শাসনকে এগিয়ে নিতে বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতৃত্বের সম্মিলিত প্রতিশ্রুতিকে তুলে ধরে।”

গত শুক্রবার ১৭ অক্টোবর বিকাল ৫টায় জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’ স্বাক্ষরের আনুষ্ঠানিকতা সারা হয়। সংলাপে অংশ নেওয়া অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের নেতাদের পাশাপাশি প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্যরাও এই রাজনৈতিক সমঝোতার দলিলে স্বাক্ষর করেছেন।

স্বাক্ষরের পরপরই প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’ এ স্বাক্ষর ঐক্যের ধ্বনিকে প্রতীকায়িত করেছে, যা জাতিকে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের পথে দিকনির্দেশনা দেবে।

তিনি আশা প্রকাশ করেন, আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে একটি সুষ্ঠু ও উৎসবমুখর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবং রাজনৈতিক অংশীদারদের মধ্যে বিদ্যমান সম্প্রীতি বজায় থাকবে।

প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, রাজনৈতিক দল ও ঐকমত্য কমিশন ‘অসম্ভবকে সম্ভব’ করেছে। সারা বিশ্বের কাছে এটি ‘উদাহরণ হয়ে থাকবে’।

অভ্যুত্থানের বিজয় উল্লাস; সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে জুলাই মাসে শুরু হয়েছিল শিক্ষার্থীদের যে আন্দোলন, আওয়ামী লীগ সরকারের দমন অভিযানে রক্তাক্ত পথ পেরিয়ে তা রূপ নেয় অভ্যুত্থানে। তাতে ৫ আগস্ট পতন ঘটে শেখ হাসিনার। উল্লাসে ফেটে পড়ে গোটা দেশ; জনতার ঢল উঠে পড়ে গণভবনের ছাদে মোবাইল টাওয়ারেও। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
অভ্যুত্থানের বিজয় উল্লাস; সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে জুলাই মাসে শুরু হয়েছিল শিক্ষার্থীদের যে আন্দোলন, আওয়ামী লীগ সরকারের দমন অভিযানে রক্তাক্ত পথ পেরিয়ে তা রূপ নেয় অভ্যুত্থানে। তাতে ৫ আগস্ট পতন ঘটে শেখ হাসিনার। উল্লাসে ফেটে পড়ে গোটা দেশ; জনতার ঢল উঠে পড়ে গণভবনের ছাদে মোবাইল টাওয়ারেও। ছবি : সকাল সন্ধ্যা

বাসস জানিয়েছে, কূটনৈতিক পর্যবেক্ষকরা জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষরের এই উদ্যোগকে বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক পালাবদলের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে প্রশংসা করেছেন।

তারা জোর দিয়ে বলেছেন, অন্তর্ভুক্তিমূলক অংশগ্রহণ এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতি অঙ্গীকার জনগণের আস্থা জোরদার এবং দীর্ঘস্থায়ী স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করবে।

বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের উন্নয়ন সহযোগী কানাডা শাসনব্যবস্থা, শিক্ষা, লিঙ্গ সমতা ও মানবাধিকারসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজ করছে।

হাই কমিশনের এই অঙ্গীকার বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ও সুশাসন গড়ে তুলতে কানাডার অব্যাহত সহায়তারই প্রতিফলন।

বিডিনিউজ জানিয়েছে, রাষ্ট্র সংস্কারের উদ্যোগে যেসব রাজনৈতিক দল ও জোট জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দীর্ঘ সংলাপ পর্বে অংশ নিয়েছিল, তার মধ্যে ২৪টি দল শুক্রবার জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের উপস্থিতিতে এ সনদে সই করে।

চব্বিশের অভ্যুত্থান বাংলাদেশে পরিবর্তনের যে আকাঙ্ক্ষা এবং সংস্কারের যে সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে, তা কাজে লাগাতেই গত বছরের শেষে এই সনদ করার দাবি তুলেছিলেন জুলাই আন্দোলনের প্রথম সারির নেতারা।

তাদের গঠিত দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ঐকমত্যের সংলাপে অংশ নিলেও শেষ পর্যন্ত এই অনুষ্ঠানে অংশ নেয়নি। জুলাই সনদ বাস্তবায়নের আইনি ভিত্তি ‘স্পষ্ট’ না হওয়ার যুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠান বর্জন করে দলটি।

ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন দল গণফোরামের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সুব্রত চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক ডা. মো. মিজানুর রহমান অনুষ্ঠানে গেলেও সনদে সই করেননি চূড়ান্ত সনদের কিছু বিষয় নিয়ে মতভিন্নতার কারণে। একদিন বাদে রোববার দুপুরে জাতীয় সংসদের এলডি হলে গণফোরামের পক্ষে তারা সনদে স্বাক্ষর করেছেন।

এছাড়া ইতিহাস ‘সঠিকভাবে না আসা’ এবং সংবিধানের মূলনীতি পরিবর্তন নিয়ে আপত্তির কারণে বাম ধারার চারটি দল- বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), বাসদ (মার্ক্সবাদী) ও বাংলাদেশ জাসদ সনদে সই করেনি।

শুক্রবার সনদে সই করতে গণফোরামের অস্বীকৃতি জানানোর কারণ সম্পর্কে দলটির সাধারণ সম্পাদক বলেছিলেন, সংবিধানের ১৫০–এর ২ অনুচ্ছেদ (স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র) সংশোধন করে সংবিধানের পঞ্চম, ষষ্ঠ ও সপ্তম তফসিলে বাদ রাখার বিষয়টি স্পষ্ট করার চূড়ান্ত কপি না পাওয়ায় তারা স্বাক্ষর করেননি।

সনদে সই করার পর প্রধান উপদেষ্টা বলেন, রাজনৈতিক দল ও ঐকমত্য কমিশন ‘অসম্ভবকে সম্ভব’ করেছে। সারা বিশ্বের কাছে এটি ‘উদাহরণ হয়ে থাকবে’। ছবি : পিআইডি
সনদে সই করার পর প্রধান উপদেষ্টা বলেন, রাজনৈতিক দল ও ঐকমত্য কমিশন ‘অসম্ভবকে সম্ভব’ করেছে। সারা বিশ্বের কাছে এটি ‘উদাহরণ হয়ে থাকবে’। ছবি : পিআইডি

চূড়ান্ত কপি পাওয়ায় রোববার সনদে সই করার কথা জানিয়ে সুব্রত চৌধুরী বলেন, “আমরা বলেছিলাম সংবিধানের ১৫০–এর ২ অনুচ্ছেদ সংশোধন করে এবং প্রক্লেমেশন অব ইনডিপেনডেন্টস যাতে রাখে। এটা না থাকলে আমাদের বাংলাদেশের অস্তিত্ব এবং মুক্তিযুদ্ধ প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যাবে।

“আমরা আজকে আনন্দিত যে ঐকমত্য কমিশন বলেছে, তারা ১৫০-এর ২ অনুচ্ছেদ পুরোপুরি বাতিল না করে ৭ তফসিল বহাল রাখবে। এজন্য আমরা স্বাক্ষর করছি।”

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত