Beta
মঙ্গলবার, ৭ অক্টোবর, ২০২৫
Beta
মঙ্গলবার, ৭ অক্টোবর, ২০২৫

যুগপৎ শোক ও বিনোদন!

bd vs pal
[publishpress_authors_box]

মাত্র ২৪ ঘণ্টা পেরিয়েছে। রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় শিশু মৃত্যুর মিছিল চলছে। হাসপাতালে নরকযন্ত্রণায় কাতারাচ্ছে কত শিশু। আগুনে পোড়া কত কোমলমতির দেহাবশেষ চেনার উপায় নেই। স্বজনের আহাজারিতে ভারি হয়ে উঠেছে পরিবেশ। এই খবর আর আগুনে পোড়া শরীরগুলোর মর্মন্তুদ ছবিগুলো দেশের মানুষের মরমে আঘাত করেছে। সবার কাছেই এ যেন আত্মজ হারানোর শোক।

এই উপলব্ধি থেকেই সরকার আজকের (২২ জুলাই) দিনটিকে রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করে। কিন্তু বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) যেন এই রাষ্ট্রের বাইরের কোনও সংগঠন। কাজকর্মে মনে হচ্ছে, কর্মকর্তাদের হৃদয়ে এতটুকু বিঁধেনি এই ঘটনা। হয়নি এতটুকু রক্তরক্ষণও। এই শোকের দিনে তারা মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিায়ামে চালিয়েছে বাংলাদেশ-পাকিস্তান ম্যাচ। এমন মানবিক বিপর্যয়ের পর আজকের দিনে ম্যাচটি কি স্থগিত রাখা যেত না?    

এ প্রসঙ্গে বিসিবি পরিচালক ইফতেখার মিঠু বলেন, “আমরা তো ভয়ে ছিলাম যে, এমন একটা ট্রাজেডির পর গ্যালারিতে দর্শক উপস্থিতি হয় কিনা! কিন্তু ম্যাচে দেখলাম মানুষ এসেছে। আমরা একবার ভেবেছিলাম ম্যাচটা পেছানো যায় কিনা, কিন্তু সবকিছু আগে থেকে সেট হয়ে থাকায় পেছানোর প্রক্রিয়াটা জটিল ছিল। সে কারণে হয়ে ওঠেনি। এখানে টিভি রাইটস, বিজ্ঞাপন রাইটস, টিকিট অনলাইনে প্লেস করা- সব কিছু রিশিডিউল করার ব্যাপার ছিল। সেটা সত্যিই জটিল। তাই হয়ে ওঠেনি।”

মিঠুর কথা ধরলে মনে হয়, মানবতার চেয়ে তাদের ক্রিকেট আয়োজনই ছিল মুখ্য। অথচ জীবন না থাকলে এই জগত সংসারে সবই মিছে।

ক্রিকেটবিশ্বে এ পর্যন্ত ১১টি বড় ম্যাচ স্থগিত হয়েছে শুধু সন্ত্রাসী হামলার ভয়ে। মনে পড়ে, ১৯৯৬ বিশ্বকাপে বোমা হামলা হয়েছিল শ্রীলঙ্কার কেন্দ্রীয় ব্যাংকে, মারা গিয়েছিল ৯০ জন। সেই ভয়ে অস্ট্রেলিয়া ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ কলম্বোতে ম্যাচ খেলতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল। ক্রিকেট ইতিহাসে এরকম ম্যাচ স্থগিত হওয়ার আরও ঘটনা আছে, যেগুলো প্রমাণ করে আগে জীবনের ট্র্যাজেডির চেয়ে খেলা বড় নয়।

ক্রিকইনফোর ক্রীড়া সাংবাদিক মোহাম্মদ ইসাম ব্যাপারটাকে ক্রিকেটারদের মানসিকতার ওপর ছেড়ে দিয়েছেন, “এরকম পরিস্থিতিতে ম্যাচ পেছানো বা রিশিডিউল করার ব্যাপারটা ক্রিকেটারদের কাছ থেকে প্রথমে আসে। কারণ এমন ঘটনায় মানসিকতা খেলার মতো থাকে না, আবেগ কাজ করে। যেমন ক্রাইস্টচার্চে যখন বাংলাদেশ দল বন্দুক হামলার শিকার হয় তখন নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটাররাই সিরিজটি খেলতে চায়নি। এরপর বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা।”

এই ক্রীড়া সাংবাদিক মনে করেন ক্রিকেটাররাই উদ্যোগী হতে পারতেন, “ক্রিকেটারদের থেকেই প্রথমত ব্যাপারটি (খেলা না খেলা) আসে। তবে ম্যাচ পেছানোর ব্যাপারটা হতে পারতো। পাকিস্তানকে জানালেন ওরাও রাজি না হয়ে পারত না কারণ তারাও দেখেছে এই দুর্ঘটনা কতটা হৃদয়বিদারক ছিল।”

কিন্তু এই মানবিক বিপর্যয় আমাদের ক্রিকেট হৃদয়কে ওভাবে ছুঁয়ে যেতে পারেনি বলেই শোক আর বিনোদন একাকার হয়ে গেল!

আরও পড়ুন

সর্বাধিক পঠিত