Beta
সোমবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
Beta
সোমবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
ফিলিস্তিনকে বিভিন্ন দেশের স্বীকৃতি

ট্রাম্পের সমর্থন নিয়ে জবাব দিতে তৈরি হচ্ছেন নেতানিয়াহু

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।
[publishpress_authors_box]

ইউরোপ, আমেরিকার যে দেশগুলো এতদিন ইসরায়েলের পাশে ছিল, সেগুলো এখন ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসাবে স্বীকৃতি দিচ্ছে। বিষয়টি মেনে নেওয়া ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর জন্য বেশ কঠিনই।

এর মধ্য দিয়ে সন্ত্রাসবাদকে পুরস্কৃত করা হচ্ছে-তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া এই বাক্যেই সীমাবদ্ধ রেখেছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী।

তবে আরও কঠোর প্রতিক্রিয়া দেখানোর প্রস্তুতি তিনি নিচ্ছেন, তবে তা এখন নয়, দেখাবেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করার পর।

গাজা অভিযানে সায় দিয়ে যাওয়া ট্রাম্প এখনও ইসরায়েলের পক্ষেই অকুণ্ঠ সমর্থন নিয়ে রয়েছেন। জাপান ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার কথা ভাবছিল, তা ঠেকিয়েও দেন। কিন্তু ঠেকাতে পারেননি পশ্চিমা দুনিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের পুরনো মিত্র যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্সকে।

ফ্রান্স বাদে অন্য তিনটি দেশ ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়েই ফেলেছে। এখন ফ্রান্সও আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়ে ফেললে নিরাপত্তা পরিষদের ভেটো ক্ষমতাধর রাষ্ট্রের মধ্যে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়া প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্র একা হয়ে পড়বে।

রবিবার যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে পর্তুগালও স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসাবে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেয়। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের মূল পর্ব শুরুর আগে ফ্রান্সও দেবে বলে জানিয়েছে।

দুই বছর ধরে গাজায় অভিযান চালিয়ে অর্ধ লক্ষাধিক মানুষের মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়িয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সব মহলেই সমালোচনায় রয়েছেন নেতানিয়াহু।

এখন নতুন প্রেক্ষাপট তৈরি হওয়ায় রবিবার মন্ত্রিসভার সাপ্তাহিক বৈঠকে তিনি বলেন, জাতিসংঘ এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক ফোরামে ইসরায়েলকে নিয়ে যে অপপ্রচার চলছে, তার বিরুদ্ধে এবং সেই সঙ্গে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের আহ্বানের বিরুদ্ধেও লড়বে তার দেশ।

“আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় আগামী দিনগুলোতে এই বিষয়ে আমাদের কাছ থেকে শুনবে,” বলেন নেতানিয়াহু, যার মধ্য দিয়ে তিনি অধিকৃত পশ্চিম তীর ইসরায়েলে সংযুক্তি করার ইঙ্গিত দেন।

কী জবাব দিতে যাচ্ছেন, সে বিষয়ে এখনও প্রকাশ্যে কিছু বলেননি নেতানিয়াহু। তবে রবিবার সন্ধ্যায় একটি ভিডিও বিবৃতিতে তিনি বলেন, আগামী সপ্তাহে ওয়াশিংটনে ট্রাম্পের সঙ্গে দেখা করার পর ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া আসবে।

ট্রাম্পের সমর্থন ছাড়া ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া জানানোর দুই-একটি বিকল্প হয়ত আছে। কিন্তু ট্রাম্পের সমর্থন নিয়ে নেতানিয়াহু বুঝিয়ে দিতে চান, ওয়াশিংটনের ছাতার নিচে থেকে তিনি যে কোনও কিছু করতে পারেন।

একটি ইঙ্গিত এরই মধ্যে দিয়েছেন তিনি, তা হলো সবার আহ্বান উপেক্ষা করে ফিলিস্তিনিদের আবাস পশ্চিম তীরে ইহুদি বসতি দ্বিগুণ করা। আন্তর্জাতিক আইনে তা ‘অবৈধ’ হলেও তিনি বোঝাচ্ছেন যে এই পথেই চলবেন তিনি।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। ফাইল ছবি
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। ফাইল ছবি

কয়েক সপ্তাহ ধরে ইসরায়েল বলে আসছিল, পশ্চিমা দেশগুলোকে শুধু তাদের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির কারণে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিতে চাইছে।

জোর দিয়ে বলেছিল যে এই প্রতীকী পদক্ষেপ মাঠের বাস্তবতাকে পরিবর্তন করবে না। কিন্তু এখন তা ঘটে যাওয়ার পর ইসরায়েল ক্ষিপ্ত প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে।

নেতানিয়াহুর উগ্র ডানপন্থী মিত্ররা তাকে আগে বাড়তে চাপ দিচ্ছে। তারা সমগ্র পশ্চিম তীরকে ইসরায়েলে যুক্ত করতে বলছে।

অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোত্রিচ তো বলেছেনই, ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রতিক্রিয়া হতে পারে সমগ্র পশ্চিম তীর দখল করে নিয়ে ‘ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের মূর্খ ধারণা’টিকে চিরতরে কবর দেওয়া।

ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রী ইতামার বেন-ভির বলেছেন, তিনি ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে ভেঙে দিতে প্রস্তাব তুলবেন মন্ত্রিসভার পরবর্তী বৈঠকে।

যুক্তরাজ্য, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়াকে ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসাবে বিবেচনা করা হলেও এই বাস্তবতায় তেল আবিবের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া প্রশমনের কোনও জায়গা রাখেনি তারা। নেতানিয়াহুর দৃষ্টিভঙ্গী অনুসারে, ইসরায়েলের এখন একমাত্র যে দেশটি প্রয়োজন, তা হলো যুক্তরাষ্ট্র।

কিন্তু ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের প্রশ্নটি যদি ইসরায়েলের প্রতি মার্কিন সমর্থনের মাত্রা দেখিয়ে থাকে, তবে এটি অন্য জায়গায় ওয়াশিংটনের প্রভাবের সীমাবদ্ধতাও তুলে ধরে।

গত সপ্তাহে ইসরায়েল সফরের সময় যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেন যে তিনি ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিতে যাওয়া দেশগুলোর সঙ্গে কথা বলেছেন এবং তাদের বোঝানোর চেষ্টা করেছেন যে এই পদক্ষেপটি কার্যকরী হবে না।

টানা দুই বছর হামলা চালিয়ে গাজাকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে ইসরায়েল।
টানা দুই বছর হামলা চালিয়ে গাজাকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে ইসরায়েল।

কিন্তু জাপান বাদে আর কাউকে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার পথ থেকে সরানো যায়নি।

এই স্বীকৃতির লক্ষ্য দুটি- প্রায় দুই বছর দরে চলা গাজায় যুদ্ধ শেষ করা এবং দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানকে সমর্থন করা। কিন্তু উভয় লক্ষ্যই দূরবর্তী বলে মনে হচ্ছে, বিশেষ করে যখন ইসরায়েল গাজায় যুদ্ধের মাত্রা বাড়িয়ে দিচ্ছে এবং ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের ধারণাটিকে শেষ করার উদ্দেশ্য নিয়ে পশ্চিম তীরের বসতি সম্প্রসারিত করছে।

ইসরায়েলের সাবেক কূটনীতিক আলোন পিঙ্কাস মনে করেছেন, নেতানিয়াহু পশ্চিম তীরের বিশাল অংশ সংযুক্ত করার সম্ভাবনা আসলে খুব কম।

“এমনকি যদি তিনি সংযুক্ত করেনও, তবে তা হবে একটি প্রতীকী কিছু,” বলেন তিনি।

পিঙ্কাস বলেন, বিভিন্ন রাষ্ট্র যখন ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেবে বলে জানিয়েছিল, তখন ইসরায়েলের কাছে তাদের কাছ থেকে সময় নেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত সময় ছিল। দেশগুলোকে অন্য বিকল্প অনুসরণে রাজি করানোর সুযোগ ছিল।

“আপনারা একটি কূটনৈতিক প্রচারণার জন্য যথেষ্ট সময় পেয়েছিলেন, যার সাথে গাজায় মানবিক পরিস্থিতি সহজ করে ভালো বিশ্বাস ও সদিচ্ছা দেখানো যেত,” বলেন পিঙ্কাস, যা করতে ইসরায়েল ব্যর্থ হয়েছে।

ঘরেও স্বস্তিতে নেই নেতানিয়াহু। বিরোধীদলীয় নেতা ইয়ার লাপিদ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়া দেশগুলোর সমালোচনা যেমন করেছেন, তেমনি সমালোচনা করেছেন নেতানিয়াহুর।

“যে সরকার আমাদের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ নিরাপত্তা বিপর্যয় এনেছে, সেই একই সরকার এখন আমাদের উপর সবচেয়ে মারাত্মক কূটনৈতিক সংকটও নিয়ে আসছে,” বলেছেন তিনি।

তথ্যসূত্র : সিএনএন

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত