Beta
মঙ্গলবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
Beta
মঙ্গলবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

রপ্তানি বাড়ছে সেই রাশিয়ায়

রপ্তানি আদেশের কাজ গোছাতে কর্মব্যস্ত পোশাক শ্রমিকরা। ফাইল ছবি
রপ্তানি আদেশের কাজ গোছাতে কর্মব্যস্ত পোশাক শ্রমিকরা। ফাইল ছবি
[publishpress_authors_box]

বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের অপ্রচলিত বা নতুন বাজারের মধ্যে সবচেয়ে সম্ভাবনাময় বড় বাজার হিসেবে বিবেচনা করা হতো রাশিয়াকে। দেশটির মাধ্যমে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে স্বাধীন দেশগুলোর জোট কমনওয়েলথ অব ইন্ডিপেনডেন্ট স্টেটসের (সিআইএস) ১১টি দেশে তৈরি পোশাকসহ কয়েকটি পণ্য রপ্তানি করত বাংলাদেশ।

বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের নতুন বড় বাজার হওয়ার রাশিয়ার সেই সম্ভাবনা ধরা দিয়েছিল; বেশ আশাও জাগিয়েছিল।

২০২০-২১ অর্থ বছরে রাশিয়ায় ৬৬ কোটি ৫৩ লাখ ২০ হাজার ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছিল বাংলাদেশ, যা এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ। ২০২১-২২ অর্থ বছরে এই বাজারে ৬৩ কোটি ৮৩ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছিলেন রপ্তানিকারকরা।

২০২২-২৩ অর্থ বছরে রাশিয়ায় বাজারে পণ্য রপ্তানি থেকে ১ বিলিয়ন (১০০ কোটি) ডলার আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরেছিল সরকার। সেই লক্ষ্য পূরণের জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছিলেন তৈরি পোশাকসহ অন্যান্য খাতের রপ্তানিকারকরা। কিন্তু যুদ্ধের কারণে তা ধাক্কা খায়। শেষ পর্যন্ত ৪৬ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয় ওই অর্থ বছরে।

এরপর গত দুই আর্থিক বছরে (২০২৩-২৪ ও ২০২৪-২৫) দেশটি থেকে রপ্তানি আয় আরও কমে যায়। ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে আসে ৩৯ কোটি ৪৩ লাখ ডলার। গত ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে তা আরও কমে ৩৫ কোটি ৩৯ লাখ ডলারে নেমে আসে।

সাড়ে তিন বছর হয়ে গেছে; রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ থামেনি। তবে আশার কথা হচ্ছে- ভ্লাদিমির পুতিনের দেশ রাশিয়াতে বাংলাদেশের রপ্তানি আবার বাড়তে শুরু করেছে।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) গত সোমবার রপ্তানি আয়ের দেশভিত্তিক তথ্য প্রকাশ করেছে। তাতে দেখা যায়, চলতি ২০২৫-২৬ অর্থ বছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই-আগস্ট) দেশটিতে ৩ কোটি ৩৯ লাখ ২০ হাজার ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। এই অঙ্ক গত অর্থ বছরের একই সময়ের চেয়ে ৩৩ দশমিক ৬৫ শতাংশ বেশি।

২০২৩-২৪ অর্থ বছরের এই দুই মাসে রাশিয়ায় ২ কোটি ৫৩ লাখ ৮০ হাজার ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছিল বাংলাদেশ।

রাশিয়া থেকে মোট রপ্তানি আয়ের সিংহভাগই আসে বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাক থেকে। চলতি অর্থ বছরের জুলাই-আগস্ট সময়ে রাশিয়ায় পোশাক রপ্তানি থেকে ২ কোটি ৯৪ লাখ ৫০ হাজার ডলার আয় করেছেন এ খাতের রপ্তানিকারকরা, যা গত অর্থ বছরের একই সময়ের চেয়ে ৩০ দশমিক ২১ শতাংশ বেশি।

২০২৩-২৪ অর্থ বছরের জুলাই-আগস্ট সময়ে পোশাক রপ্তানি থেকে ২ কোটি ২৬ লাখ ১০ হাজার ডলার আয় হয়েছিল।

সম্ভাবনাময় এই বাজারে রপ্তানি ঘুরে দাঁড়ানোয় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন নিট পোশাক শিল্পমালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম।

সকাল সন্ধ্যাকে তিনি বলেন, “তৈরি পোশাকের খুবই সম্ভাবনা এবং ভালো বাজার হয়ে উঠছিল রাশিয়া। অনেক দিন চেষ্টার ফলে আশার আলো দেখা দিয়েছিল। আমরা আশা করেছিলাম ২০২২-২৩ অর্থ বছরেই দেশটিতে আমাদের রপ্তানি ১ বিলিয়ন (১০০ কোটি) ডলার অতিক্রম করবে।

“কিন্তু যুদ্ধের কারণে সে আশায় হোঁচট খায়। রপ্তানি অনেক কমে যায়। এখন আবার বাড়ছে। যুদ্ধ থামেনি; এর মধ্যেও রপ্তানি বাড়া খুবই ইতিবাচক বলে মনে হচ্ছে। আশা করছি, রাশিয়ায় ১ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানির আশা শিগগিরই পূরণ হবে।”

ইপিবির তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০২১-২২ অর্থ বছরে এই বাজারে ৬৩ কোটি ৮৩ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছিলেন রপ্তানিকারকরা।

২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে হামলা চালায় রাশিয়া। এরপর দেশটিতে বাংলাদেশের রপ্তানি কমতে থাকে। ২০২২-২৩ অর্থ বছর জুড়েই সেই নেতিবাচক ধারা অব্যাহত থাকে।

রাশিয়ায় বাংলাদেশের রপ্তানি বাড়তে থাকে ২০১৯-২০ অর্থ বছর থেকে। ওই অর্থ বছরে দেশটিতে ৪৮ কোটি ৭৩ লাখ ডলারের বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়।

২০২০-২১ অর্থ বছরে ৩৬ দশমিক ৫৩ শতাংশ বেড়ে সেই রপ্তানি ৬৬ কোটি ৫৩ লাখ ২০ হাজার ডলারে গিয়ে ওঠে, যা এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ।

যুদ্ধের কারণে আন্তর্জাতিক লেনদেন ব্যাংকিং নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয় রাশিয়ার কয়েকটি ব্যাংকের ওপর। সে কারণে পশ্চিমা ব্র্যান্ডগুলো রাশিয়ায় ব্যবসা গুটিয়ে নেয়। রাশিয়ায় জাহাজ চলাচল বিঘ্নিত হয়। এরকম আরও কিছু কারণে রপ্তানি বিঘ্নিত হয়। ঝামেলা এড়াতে অনেক কারখানা কর্তৃপক্ষ রাশিয়ার সঙ্গে ব্যবসা করতে রাজি হয়নি।

তৈরি পোশাকের মধ্যে নিট পোশাক বেশি রপ্তানি হয় রাশিয়ায়।

এখন পরিস্থিতি আগের চেয়ে ভালো, রাশিয়ায় রপ্তানি বাড়ছে জানিয়ে বিকেএমইএ সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, “আগামীতে এই ইতিবাচক ধারা অব্যাহত থাকবে বলে আশা করছি।”

রাশিয়ায় তৈরি পোশাক ছাড়া চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য এবং সিরামিক সামগ্রী রপ্তানি করে বাংলাদেশ।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত