Beta
বৃহস্পতিবার, ২১ আগস্ট, ২০২৫
Beta
বৃহস্পতিবার, ২১ আগস্ট, ২০২৫

সাবেক সিইসি নূরুল হুদা আবার রিমান্ডে

nurul huda
[publishpress_authors_box]

রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে শেরেবাংলা নগর থানায় করা মামলায় সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদাকে আবার চার দিনের রিমান্ডে পাঠানোর আদেশ দিয়েছে আদালত।

শুক্রবার শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম আওলাদ হোসাইন মুহাম্মদ জোনাইদের আদালত এই রিমান্ডের আদেশ দেয়।

চার দিনের রিমান্ড শেষে নূরুল হুদাকে আদালতে হাজির করে ফের দশ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও শেরেবাংলা নগর থানার উপপরিদর্শক শামসুজ্জোহা সরকার।

রিমান্ড আবেদন মামলার তদন্ত উল্লেখ করে বলেন, আসামি কেএম নূরুল হুদাকে চার দিনের পুলিশ হেফাজতে নিয়ে মামলার ঘটনা সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে আসামি কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য দেওয়ায় আবার তাকে দশ দিন পুলিশ হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা একান্ত প্রয়োজন।

জিজ্ঞেসাবাদ করার কারণ হলো : ১। আসামির দেওয়া চাঞ্চল্যকর তথ্য যাচাই বাছাই করা।

২। আসামি যে তথ্যগুলো দিয়েছেনসেগুলো নথি সংক্রান্ত তথ্য হওয়ায় ওইসব নথি উদ্ধার করে যাচাই বাছাই করা।

৩। আসামি প্রধান নির্বাচন কমিশনার থাকাকালে ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন একটি পাতানো নির্বাচন ছিল। সেটি দাপ্তরিক সংঘবদ্ধ অপরাধ। আসামির নির্দেশে অন্যান্য অফিসের সাথে যোগসাজশ করে কিভাবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনটি পাতানো নির্বাচন করে তা উদঘাটন।

৪। ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আর্থিক বাজেট ও বাস্তবায়ন সংক্রান্ত তথ্য উদঘাটন করা।

৫। আসামি কে এম নূরুল একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সঙ্গে জড়িত অন্যান্য পলাতক আসামিদের
গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন। পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তারসহ ক্রস জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন।

নূরুল হুদার পক্ষে অ্যাডভোকেট তৌহিদুল ইসলাম সজিব, ওবায়দুল ইসলামসহ আরও অনেকেই রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন। রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী রিমান্ডের পক্ষে শুনানি করেন। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালত তার চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

সাবেক আমলা নূরুল হুদা ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় প্রধান নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্বে ছিলেন। ওই নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ রয়েছে। ‘দিনের ভোট রাতে’ কথাটি এসেছে ওই নির্বাচন থেকে।

গত ২২ জুন কে এম নূরুল হুদাকে রাজধানীর উত্তরা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এ সময় পুলিশের উপস্থিতিতেই একদল মব তাকে নানাভাবে লাঞ্ছিত করে। শারীরিকভাবেও হেনস্তা করা হয় সাবেক এই সিইসিকে। সেই ঘটনার একটি ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হলে এটি নিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে।

বিষয়টি নজরে আসার পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষ থেকে বিবৃতি আসে। তাতে আইন নিজের হাতে তুলে না নিতে জনসাধারণের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। 

গত ২২ জুন দশম থেকে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন পরিচালনা করা তিন সিইসি যথাক্রমে কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ, নূরুল হুদা ও কাজী হাবিবুল আউয়ালসহ ২৪ জনের বিরুদ্ধে প্রভাব খাটিয়ে প্রহসনের নির্বাচন করার অভিযোগে শেরেবাংলানগর থানায় মামলা করেন বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মো. সালাহ উদ্দিন খান। পরবর্তীতে গত ২৫ জুন এ মামলায় নতুন করে রাষ্ট্রদ্রোহ, প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের ধারা যুক্ত করা হয়।

গ্রেপ্তারের পর প্রভাব খাটিয়ে প্রহসনের নির্বাচন করার অভিযোগে বিএনপির করা মামলায় ২৩ জুন নূরুল হুদাকে আদালতে হাজির করা হলে তাকে চার দিন হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের (রিমান্ড) অনুমতি পায় পুলিশ।

রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা ব্যক্তির করা ইতিহাসে বিরল : আইনজীবী 

শেরেবাংলা নগর থানার রাষ্ট্রদ্রোহের মামলাটি একজন ব্যক্তি করে ইতিহাসে বিরল ঘটনা সৃষ্টি করেছে। রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা করবে রাষ্ট্র। তবে যদি কোন ব্যক্তি করেন সেটা হবে ত্রুটিপূর্ণ। 

ঢাকার মহানগর হাকিম আওলাদ হোসাইন মুহাম্মদ জোনাইদের আদালতে শুক্রবার সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনা (সিইসি) কে এম নূরুল হুদার রিমান্ড শুনানিতে এই দাবি করেন তার আইনজীবী তৌহিদুল ইসলাম সজিব।

চার দিনের রিমান্ড শেষে শুক্রবার নূরুল হুদার আরও ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শেরেবাংলা নগর থানার উপপরিদর্শক শামসুজ্জোহা সরকার।

নূরুল হুদার মামলার শুনানি শুরু হলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা রিমান্ডে কেন নিবেন সেই বিষয়ে বক্তব্য তুলে ধরেন। 

এরপর রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী রিমান্ডের পক্ষে শুনানি করেন। শুনানিতে তিনি বলেন, “নুরুল হুদার মামলাটি জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ। আসামি একজন দেশের সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান ছিলেন। আসামির সময় ফ্যাসিস্ট সরকারের জম্ম হয়। নির্বাচনের সময় সারাদেশে ডিসি, এসপি নিয়োগ, হাজার হাজার কোটি টাকার বরাদ্দ, ফ্যাসিস্ট সরকারকে সহযোগী করা। এ সকল বিষয়ে স্বল্প সময়ের মধ্যে জিজ্ঞাসাবাদ করা সম্ভব নয়।”

এরপর আসামি নূরুল হুদার পক্ষে অ্যাডভোকেট তৌহিদুল ইসলাম সজিব শুনানিতে বলেন, আসামি ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় কখন রাষ্ট্রদ্রোহের কাজ করলেন। এই মামলা ক্ষেত্রে আইনগত বাধা রয়েছে। রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা করতে হলে অবশ্যই সরকারে অনুমতি নিতে হবে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তার এই ধারা সংযোজনের সুযোগ নেই। আইনগতভাবে এই মামলাটি ত্রুটিপূর্ণ। আসামি নূরুল হুদার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট, সু-স্পষ্ট, দায় সৃষ্টিকারী কোন অভিযোগ নেই। তদন্তকারী কর্মকর্তা রিমান্ড নিয়ে কি করেছেন, তা লিখতে হবে। সেই কথা রিমান্ড ফরোয়ার্ডিং লেখা নেই। রিমান্ড চাওয়ার মত কোন তথ্য উপাত্ত নেই। রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা একজন ব্যক্তি করেছে তা ইতিহাস বিরল ঘটনা। এটা করবেন রাষ্ট্র। তবে এটা কোন ব্যক্তি করলে সেটা হবে ত্রুটিপূর্ণ।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত