জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের আগে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়ার তালিকায় নিজেদের নাম তুলল ফ্রান্স।
সোমবার নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সঙ্কট অবসানে দ্বি-রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান নিয়ে এক সম্মেলনে এই স্বীকৃতির ঘোষণা দেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ।
তার কয়েকদিন আগেই যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, পর্তুগাল ফিলিস্তিনকে স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসাবে স্বীকৃতি দেয়।
ওয়াশিংটনের বিরোধিতার মধ্যেই তাদের পর ফ্রান্সও স্বীকৃতি দেওয়ায় এখন নিরাপত্তা পরিষদে ভেটো ক্ষমতাধরদের মধ্যে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতির প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্র একা হয়ে পড়ল।
গাজায় ইসরায়েলি অভিযানে ফিলিস্তিনিদের মৃত্যর সংখ্যা বাড়ার মধ্যে ফ্রান্স ও সৌদি আরবের আয়োজনে দ্বি-রাষ্টভিত্তিক সমাধান নিয়ে সাধারণ পরিষদে সম্মেলনের আয়োজন হয়।
সেখানে ফ্রান্সের পাশাপাশি ইউরোপের দেশ মোনাকো, মাল্টা ও লুক্সেমবুর্গও স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের প্রতি তাদের সমর্থন ঘোষণা করে।
সম্মেলনে বেলজিয়ামও শর্ত সাপেক্ষে স্বীকৃতি দেওয়ার কথা জানিয়েছে। তারা বলেছে, হামাসকে নিয়ন্ত্রণের জায়গা থেকে সরিয়ে দেওয়া হলে এবং জিম্মিদের ছেড়ে দেওয়া হলে এই স্বীকৃতি কার্যকর হবে।
সম্মেলনে ভাষণে ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ বলেন, ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়াই ইসরায়েলের নিরাপত্তাহীনতার সমাধান।
তিনি বলেন, “আমাদের অবশ্যই দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের সম্ভাবনাকে টিকিয়ে রাখতে হবে, যেখানে ইসরায়েলিরা ও ফিলিস্তিনিরা পাশাপাশি শান্তিতে এবং নিরাপদে বসবাস করবে।”
ফিলিস্তিনি জনগণের অধিকারকে স্বীকৃতি দেওয়ার মানে ইসরায়েলিদের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়, তাও বলেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট।
সম্মেলনে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস গাজার বর্তমান পরিস্থিতিকে ‘অসহনীয়’ হিসাবে তুলে ধরে বলেন, দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধান হলো এই দুঃস্বপ্ন থেকে বেরিয়ে আসার একমাত্র পথ।
তিনি বলেন, ফিলিস্তিনিদের জন্য রাষ্ট্রীয় মর্যাদা একটি অধিকার, এটা কোনও পুরস্কার নয় এবং এটা ছাড়া এই অঞ্চলটিতে শান্তি আসবে না।
প্রভাবশালী দেশগুলোর স্বীকৃতিতে ফিলিস্তিনের পক্ষে অবস্থান নেওয়া দেশের সংখ্যা দেড়শ ছাড়ালেও এই পদক্ষেপটি প্রতীকী হিসাবেই দেখা হচ্ছে। কারণ এতে ভেটো ক্ষমতাধর যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন নেই। তাদের সমর্থন ছাড়া িফলিস্তিন জাতিসংঘের সদস্যও হতে পারবে না।
সাধারণ পরিষদে সোমবারের সম্মেলনেও যুক্তরাষ্ট্র যোগ দেয়নি। এই সম্মেলনের লক্ষ্য হলো দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের পুনরুজ্জীবনের জন্য প্রচেষ্টা জোরদার করা এবং শান্তির পথ তৈরি করা।
কিন্তু গাজায় প্রায় দুই বছরের যুদ্ধ এবং অধিকৃত পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বসতি সম্প্রসারণে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বপ্ন ক্রমেই ফিকে হচ্ছে।
ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার বিভিন্ন দেশের পদক্ষেপে ইসরায়েলও ক্ষুব্ধ হয়েছে। জাতিসংঘে ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত ড্যানি ড্যানন ফ্রান্সে ঘোষণায় হতাশা প্রকাশ করে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল এই ‘প্রহসনে’ অংশ নেবে না।
তথ্যসূত্র : সিএনএন