বিশ্ববাজারের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দেশের বাজারেও পাগলা ঘোড়ার মতো ছুটতে সোনার দর; প্রায় প্রতিদিনই বাড়ছে। গড়ছে রেকর্ডের পর রেকর্ড।
২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে সবচেয়ে ভালো মানের (২২ ক্যারেট) প্রতিভরির দাম বেড়েছে ৬ হাজার ৯০৫ টাকা। বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনই সোনার দর একবারে এতটা বাড়েনি।
বৃহস্পতিবার থেকে এক ভরি ২২ ক্যারেট মানের সোনার গহনা কিনতে ২ লাখ ৯ হাজার ১০০ টাকা লাগবে। অন্যান্য মানের সোনার দরও প্রায় একই হারে বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে দেশের স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস)।
মঙ্গলবার রাতে এই মানের সোনার দর ভরিতে ১ হাজার ৪৭০ টাকা বাড়ানোর ঘোষণা দেয় বাজুস। বুধবার সারা দেশে ২ লাখ ২ হাজার ১৯৫ টাকা ভরিতে বিক্রি হয়; রাতে আরেক দফা বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে বাজুস।
সোমবার (৬ অক্টোবর) ২২ ক্যারেট সোনার দাম ভরিতে ৩ হাজার ১৪৯ টাকা বাড়ানো হয়। অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে ভরি ২ লাখ টাকার মাইলফলক ছাড়িয়ে ২ লাখ ৭২৬ টাকায় ওঠে। মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) সারা দেশে এই দরে বিক্রি হয় সোনার গহনা।
তার দুই দিন আগে গত ৪ অক্টোবর বাড়ানো হয় ভরিতে ২ হাজার ১৯৩ টাকা বাড়ানো হয়; ভরি ওঠে ১ লাখ ৯৭ হাজার ৫৭৬ টাকায়।
২৯ সেপ্টেম্বর বাড়ানো হয় ২ হাজার ৪১৪ টাকা বাড়ানো হয়; ভরি ওঠে ১ লাখ ৯৫ হাজার ৩৮৪ টাকায়।
তার আগে কয়েক দফা বাড়ানোয় দেশের বাজারে সোনার ভরি রেকর্ড গড়ার পর ২৭ সেপ্টেম্বর ভরিতে ১ হাজার ৮৯০ টাকা কমানোর ঘোষণা দেয় বাজুস। এতে ভরি নামে ১ লাখ ৯২ হাজার ৯৬৯ টাকায়।
২৩ সেপ্টেম্বর এই মানের সোনার দাম ভরিতে ৩ হাজার ৬৬২ টাকা বাড়ানো হয়েছিল।
তার আগে টানা আট দফায় সবচেয়ে ভালো মানের (২২ ক্যারেট) সোনার ভরি ১৮ হাজার টাকার বেশি বাড়ানোর পর ১৭ সেপ্টেম্বর ১ হাজার ৪৭০ টাকা কমিয়েছিল বাজুস।
১৮ সেপ্টেম্বর থেকে এই মানের সোনা ১ লাখ ৮৮ হাজার ১৫২ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল। দুই দিন না যেতেই ২০ সেপ্টেম্বর সোনার দাম ফের বাড়ানো হয়; ভরিতে বাড়ে ১ হাজার ১৫০ টাকা।
২১ সেপ্টেম্বর ২২ ক্যারেটের প্রতিভরি সোনা ১ লাখ ৮৯ হাজার ৩০৭ টাকায় বিক্রি হয়। একদিন পর ২২ সেপ্টেম্বর আরও ১ হাজার ৮৯০ টাকা বাড়ানো হয়।
১ সেপ্টেম্বর ২২ ক্যারেট সোনার দাম ভরিতে ১ হাজার ৪৭০ টাকা বাড়ানো হয়। ৩ সেপ্টেম্বর বাড়ানো হয় ৩ হাজার ৪৪ টাকা।
তার আগে গত ৩০ আগস্ট ভরিতে ১ হাজার ৬৬৮ টাকা বাড়ানো হয়। ২৬ আগস্ট বাড়ানো হয়েছিল ১ হাজার ৫০ টাকা।
এর আগে প্রায় এক মাস দেশের বাজারে মূল্যবান এই ধাতুর দাম একই জায়গায় স্থির ছিল।
বাজুসের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, সেপ্টেম্বর মাস জুড়ে অস্থির ছিল দেশের সোনার বাজার। পুরো মাসে মোট ১২ বার দাম সমন্বয় করেছে বাজুস। এর মধ্যে ১০ বারই বেড়েছে দাম, কমেছে মাত্র দুইবার।
সেপ্টেম্বর মাসে ২২ ক্যারেট মানের প্রতিভরি সোনার দাম বেড়েছে ২১ হাজার ৬৬ টাকা।
সেই উল্লম্ফন অক্টোবর মাসেও চলছে। এই মাসের আট দিনে চার দফায় ২২ ক্যারেট মানের সোনর দাম ভরিতে ১৩ হাজার ৭১৫ টাকা বেড়েছে।
চলতি বছর (২০২৫ সাল) এখন পর্যন্ত মোট ৬৩ বার স্বর্ণের দাম সমন্বয় হয়েছে। এর মধ্যে ৪৫ বারই বেড়েছে, আর কমেছে মাত্র ১৮ বার।
গত বছর (২০২৪ সাল) পুরো সময়ে দাম সমন্বয় হয়েছিল ৬২ বার।
আন্তর্জাতিক বাজারে রেকর্ড গড়ার পর দেশের বাজারেও মূল্যবান এই দাতুর দাম বাড়ানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা।
গত ২০ আগস্ট থেকে বিশ্ববাজারে সোনার দাম টানা বাড়ছে। সেই দামের সঙ্গে সমন্বয় করে বাজুসও দেশের বাজারে এই ধাতুর দাম বাড়িয়ে চলেছে। মাঝে দুই দিন নিম্মমূখী হওয়ায় দেশের বাজারেও কিছুটা কমানো হয়।
বাজুস সাধারণত রাত সাড়ে ৮টা থেকে ৯টার দিকে সোনার দাম বাড়ানো-কমানোর ঘোষণা দিয়ে থাকে। পরের দিন থেকে সারা দেশে সেই দরে সোনা বিক্রি হয়।
তবে মাঝে-মধ্যে দিনে দুই বারও সোনার দাম বাড়ানো-কমানোর ঘোষণা দিয়ে থাকে সংগঠনটি।
বুধবার রাত ৯টার দিকে সোনার দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেয় বাজুস। দাম বাড়ানোর ব্যাখ্যায় সংগঠনটির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, স্থানীয় বাজারে তেজাবি স্বর্ণের (পিওর গোল্ড) মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে সোনার নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে।
বাজুসের নতুন ঘোষণা অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার থেকে দেশের বাজারে হলমার্ক করা এক গ্রাম ২২ ক্যারেট মানের সোনা ১৭ হাজার ৯২৭ টাকায় বিক্রি হবে। ১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রামে এক ভরি হিসাবে প্রতিভরি বিক্রি হবে ২ লাখ ৯ হাজার ১০০ টাকায় বিক্রি হবে। ২১ ক্যারেটের এক ভরি কিনতে লাগবে ১ লাখ ৯৯ হাজার ৫৯৪ টাকায।
১৮ ক্যারেটের ১ লাখ ৭১ হাজার ৮৮ টাকায় এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতিভরি সোনা ১ লাখ ৪২ হাজার ৩০১ টাকায় বিক্রি হবে।
বুধবার দেশের বাজারে ২২ ক্যারেট মানের প্রতিভরি সোনা ২ লাখ ২ হাজার ১৯৫ টাকায় বিক্রি হয়। ২১ ক্যারেটের বিক্রি হয় ১ লাখ ৯৩ হাজার ৪ টাকায়।
এছাড়া ১৮ ক্যারেটের ১ লাখ ৬৫ হাজার ৪৩০ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতিভরি সোনা ১ লাখ ৩৭ হাজার ৪৭২ টাকায় বিক্রি হয়।
হিসাব বলছে, এক দিনের ব্যবধানে প্রতিভরি ২২ ক্যারেটের সোনার দাম বাড়ছে ৬ হাজার ৯০৫ টাকা। ২১ ক্যারেটের বাড়ছে ৬ হাজার ৫৯০ টাকা।
এছাড়া ১৮ ক্যারেটে ৫ হাজার ৬৫৭ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতিভরি সোনার দাম বাড়ছে ৪ হাজার ৮২৯ টাকা।
বিশ্ববাজারেও আউন্স ৪ হাজার ৫০ ডলার ছাড়াল
বিশ্ববাজারেও সোনার দর রেকর্ডের পর রেকর্ড গড়ছে। প্রতি আউন্সের (৩১.১০৩৪৭৬৮ গ্রাম) দাম ৪ হাজার ৫০ ডলার ছাড়িয়েছে।
বুধবার রাত ১০টায় বিশ্ববাজারে প্রতি আউন্স সোনার দাম ৭৩ ডলার ৩৯ সেন্ট বেড়ে ৪ হাজার ৫৩ ডলার ৭৯ সেন্টে উঠেছে। শতাংশ হিসাবে বেড়েছে প্রায় ২ শতাংশ।
মঙ্গলবার রাতে বাজুস যখন দেশের বাজারে সোনার দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেয় তখন প্রতিআউন্স সোনার দাম ছিল ৩ হাজার ৯৭৪ ডলার ২৭ সেন্ট।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত ২ এপ্রিল বিভিন্ন দেশের ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপ করার পর সোনার দাম হু হু করে বাড়ছিল। ২২ এপ্রিল প্রতি আউন্স সোনার দাম ৩ হাজার ৫০০ ডলার ছাড়ায়।
এরপর আন্তর্জাতিক বাজারে সোনার দর ৩ হাজার ৫০০ ডলারের নিচে লেনদেন হচ্ছিল। আগস্টের মাঝামাঝি সময় থেকে বাড়তে থাকে মূল্যবান এই ধাতুর দর।
রূপার দরও বেড়েছে
সোনার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দেশের বাজারে রূপার দামও বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে বাজুস। সংগঠনটি জানিয়েছে বৃহস্পতিবার থেকে হলমার্ক করা প্রতিভরি (১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম) ২২ ক্যারেট মানের রূপা ৪ হাজার ৯৮০ টাকায় বিক্রি হবে।
বুধবার বিক্রি হয়েছে ৪ হাজার ৬৫৪ টাকায়।
এ হিসাবে ২২ ক্যারেট মানের রূপার দাম ভরিতে ৩৯৯ টাকা বেড়েছে।
অন্যান্য মানের সোনার দরও প্রায় একই হারে বাড়িয়েছে বাজুস।