Beta
মঙ্গলবার, ৭ অক্টোবর, ২০২৫
Beta
মঙ্গলবার, ৭ অক্টোবর, ২০২৫

জিম্মি মুক্তিতে রাজি হামাস, ‘গাজা দখল’ স্থগিতের নির্দেশ ইসরায়েলের

gaza--r9yqt90roca9itt2qigdbyh4aa3cem6zopq820lel4
[publishpress_authors_box]

গাজা যুদ্ধ বন্ধে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ২০ দফা পরিকল্পনায় আংশিক সম্মতি জানিয়েছে হামাস। এক বিবৃতিতে সব ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দিতে রাজি হওয়ার কথা জানিয়েছে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠীটি।

তবে শান্তি পরিকল্পনার কয়েকটি বিষয় নিয়ে আরও আলোচনা চাইছে সংগঠনটি। ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনায় হামাসের এই আংশিক সম্মতির ঘটনার প্রশংসা করছেন বিশ্বনেতারা।

গতকাল শুক্রবার হামাসের ওই সম্মতির পর গাজা উপত্যকায় সামরিক তৎপরতা কেবল প্রতিরক্ষামূলক অভিযানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখার জন্য সেনাবাহিনীকে নতুন নির্দেশনা জারি করেছে ইসরায়েল। দেশটির গণমাধ্যম জানিয়েছে, ইসরায়েলের রাজনৈতিক নেতৃত্ব গাজা সিটি ‘দখল’ তৎপরতা থামানোর নির্দেশ দিয়েছে সেনাবাহিনীকে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শুক্রবার হামাসকে তার প্রস্তাব মেনে নেওয়ার সময়সীমা বেঁধে দিয়ে হুমকি দেন। তিনি বলেন, রবিবার যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে প্রস্তাব মেনে নিতে হবে। নয়তো হামাসকে ‘নরকযন্ত্রণা ভোগ করতে হবে’।

এর কয়েক ঘণ্টা পর হামাস এক বিবৃতিতে আংশিকভাবে প্রস্তাব মেনে নেওয়ার ঘোষণা দেয়। তাদের বিবৃতিতে বলা হয়, জীবিত ও মৃত সব জিম্মিকে মুক্তি দিতে রাজি আছে হামাস। প্রস্তাবের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত নিয়ে আরও আলোচনার দাবিও জানায় তারা।

হামাসের এই ঘোষণার পর ডোনাল্ড ট্রাম্প তার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে এক পোস্টে লেখেন, “হামাসের সদ্য প্রকাশিত বিবৃতির ভিত্তিতে আমি বিশ্বাস করি, তারা স্থায়ী শান্তির জন্য প্রস্তুত। ইসরায়েলকে অবিলম্বে গাজায় বোমাবর্ষণ বন্ধ করতে হবে, যাতে আমরা জিম্মিদের নিরাপদে এবং দ্রুত মুক্ত করতে পারি।”

চলমান হামলা ও সংঘাতের মধ্যে জিম্মিদের মুক্ত করা অত্যন্ত বিপজ্জনক বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের গাজায় অবিলম্বে বোমাবর্ষণ বন্ধের এই আহ্বান জানানোর পরদিন শনিবার সকালেই সেখান কয়েকটি বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে।

হামাসের আংশিক ওই সম্মতির প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, ডোনাল্ড ট্রাম্পের পরিকল্পনার প্রথম ধাপ অবিলম্বে বাস্তবায়নে ইসরায়েল প্রস্তুত হচ্ছে।

ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী প্রধান সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর শীর্ষ কর্মকর্তাদের সাথে শুক্রবার রাতভর বৈঠক করেছেন বলে ইসরায়েলি ডিফেন্স ফোর্স এক বিবৃতিতে জানিয়েছে।

বৈঠকে তিনি ট্রাম্পের পরিকল্পনার প্রথম ধাপ বাস্তবায়ন নিয়ে আগেই প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি সেনাদের নিরাপত্তা ‘শীর্ষ অগ্রাধিকার’ এবং সেজন্য আইডিএফ দক্ষিণাঞ্চলীয় কমান্ডের সব সক্ষমতা মোতায়েন করেছে। এ কমান্ড থেকেই গাজার অভিযান দেখভাল করা হয়।

ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর বিবৃতিতে গাজায় সামরিক তৎপরতা হ্রাস করার সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করা হয়নি। বরং বলা হয়েছে, সেনারা সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় থাকবে, যাতে যেকোনো মুহূর্তে হুমকির জবাব দিতে পারে।

গত সোমবার গাজায় যুদ্ধ বন্ধে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ২০ দফা পরিকল্পনা প্রকাশ করে হোয়াইট হাউস। এরপর ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুও এতে সম্মতি জানান।

পরিকল্পনায় বলা হয়, গাজায় ‘তাৎক্ষণিকভাবে’ যুদ্ধ বন্ধ করতে হবে। এর পাশাপাশি ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ২০ জন জীবিত জিম্মিকে ফিরিয়ে দিতে হবে। মৃত জিম্মিদের দেহাবশেষ হস্তান্তর করতে হবে। বিনিময়ে ইসরায়েলে আটক থাকা গাজার ‘শত শত বাসিন্দাকে’ মুক্তি দেবে নেতানিয়াহু সরকার।

ধারণা করা হয়, বর্তমানে গাজায় ৪৮ জন ইসরায়েলি জিম্মি আছেন, যাদের মধ্যে জীবিত ২০ জন।

হামাস বন্দিবিনিময়ে রাজি হলেও গাজার ভবিষ্যৎ শাসনব্যবস্থা ও ফিলিস্তিনি জনগণের অধিকার সম্পর্কিত অন্যান্য বিষয় নিয়ে আরও আলোচনা করতে চাইছে। সংগঠনটি বলেছে, বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা চলছে।

এক বিবৃতিতে হামাস আরও বলেছে, তারা গাজা উপত্যকার শাসনভার একটি স্বাধীন ফিলিস্তিনি সংস্থার (টেকনোক্র্যাট) কাছে হস্তান্তর করতে চায়। এই সংস্থা ফিলিস্তিনি জাতীয় ঐকমত্য এবং আরব ও ইসলামি বিশ্বের সমর্থনের ভিত্তিতে গঠিত হবে।

ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনায় গাজা শাসনে হামাসের কোনও ভূমিকা থাকবে না বলা হয়েছে। ভবিষ্যতে একটি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠনের দরজাও খোলা রাখা হয়েছে পরিকল্পনায়।

তবে পরিকল্পনাটি ঘোষণার কিছু সময় পর নেতানিয়াহু এক ভিডিও বিবৃতিতে পুনরায় বলেন, তিনি দীর্ঘদিন ধরে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের বিরোধী। প্ররিকল্পনায় কোথাও ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের কথা লেখা নেই। তিনি বলেন, “আমরা স্পষ্টভাবে জানিয়েছি যে, আমরা ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের ঘোর বিরোধী।”

ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনায় হামাসের এই আংশিক সম্মতির ঘটনার প্রশংসা করেছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। তাকে উদ্ধৃত করে সংস্থাটি বলেছে, হামাসের বিবৃতি জাতিসংঘ মহাসচিবকে ‘উৎসাহিত করেছে।

সব পক্ষকে গাজা যুদ্ধ অবসানে ‘এ সুযোগ কাজে লাগানোর’ আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব।

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার হামাসের ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনা গ্রহণ করাকে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি মনে করছেন। তিনি বলেন, “প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পরিকল্পনা আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে শান্তির সবচেয়ে কাছাকাছি আমাদের নিয়ে এসেছে।”

ট্রাম্পের প্রস্তাবে হামাসের আংশিক রাজি হয়ে বিবৃতি দেওয়া এবং সব জিম্মি মুক্তির প্রস্তুতিকে স্বাগত জানিয়েছে কাতার। ট্রাম্প ইসরায়েলকে গাজায় অবিলম্বে হামলা বন্ধের যে আহ্বান জানিয়েছেন, তার প্রশংসাও করেছে কাতার।

ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠায় ট্রাম্পের প্রচেষ্টায় পূর্ণ সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করে বলেছেন, “এখন সবার কাছে মূল অগ্রাধিকার হতে হবে এমন একটি যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছানো, যা সব জিম্মির অবিলম্বে মুক্তির পথ তৈরি করবে।”

তথ্যসূত্র : বিবিসি, আল-জাজিরা

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত