Beta
শনিবার, ১ নভেম্বর, ২০২৫
Beta
শনিবার, ১ নভেম্বর, ২০২৫

যেভাবে ট্রাম্পের প্রিয়ভাজন হয়েছিলেন চার্লি কার্ক

trump and kirk
[publishpress_authors_box]

মাত্র কয়েকবারই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে মতবিরোধ হয়েছিল রক্ষণশীল অ্যাক্টিভিস্ট চার্লি কার্কের। তাই বলে নিজের মতামত জানাতে কখনও পিছপা হননি তিনি।

ঠিক যেভাবে জানিয়েছিলেন ২০২৪ সালের জুনে। ইরানে পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে বলেছিলেন, যুবসমর্থকদের ওপর এর ফলাফল নেতিবাচক হতে পারে। কারণ এসব সমর্থকদের অনেকেই নির্বাচনের আগে ট্রাম্পের দেওয়া ‘যুদ্ধের সমাপ্তি টানার’ প্রতিশ্রুতিতে আকৃষ্ট হয়েছিলেন।

পার্থক্যটা এখানেই। কেউ সমালোচনা করলেন মুখের ওপর কিন্তু তাতে কোনও প্রতিক্রিয়া দেখালেন না ট্রাম্প। তাতেই স্পষ্ট হয়ে যায়, প্রেসিডেন্টের কতটা প্রিয়ভাজন হয়ে উঠেছিলেন কার্ক। এমনকি তার নেতৃত্বাধীন সংগঠন টার্নিং পয়েন্ট ইউএসএর শক্তিকেও ট্রাম্প কতটা পছন্দ করতেন তা টের পাওয়া যায় বিভিন্ন বক্তব্যে।

বৃহস্পতিবার সকালে উটাহ বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তৃতা করার সময় গুলি করে হত্যা করা হয় কার্ককে। তার মৃত্যুর কথা জানিয়ে এক্সে দেওয়া এক পোস্টে ট্রাম্প লিখেছেন, “যুক্তরাষ্ট্রের তরুণদের হৃদয়ের কথা চার্লির থেকে ভালো আর কেউ বুঝত না। সবাই তাকে ভালোবাসত ও সম্মান করত, বিশেষ করে আমি।”

স্বেচ্ছায় পড়াশোনা ছেড়েছিলেন চার্লি কার্ক। ট্রাম্পের সঙ্গে ছিল সরাসরি যোগাযোগ। হোয়াইট হাউসের নিয়মিত অতিথি কার্ক শুধু ট্রাম্পের একজন ভক্ত বা অনুরাগীই নয়, বরং ট্রাম্পের ‘মেক আমেরিকা গেট এগেইন(এমএজিএ)’ ভাবনা সম্পর্কে তার ছিল গভীর উপলব্ধি।

নিজেকে একজন প্রকৃত রক্ষণশীল মূল্যবোধের বিশ্বাসী এবং ট্রাম্পের প্রতি সম্পূর্ণভাবে অনুগত মনে করতেন, বলে জানিয়েছেন তার ঘনিষ্ঠরা। প্রেসিডেন্টের দ্বিতীয় মেয়াদে তিনি নিজের আন্দোলন আরও শক্তিশালী করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ছিলেন।

২০২৪ সালের নির্বাচনে তরুণ ভোটারদের জাগিয়ে তোলা ও সংগঠিত করার কৃতিত্বও কার্ককে দেন ট্রাম্প। কিন্তু তার আগেই প্রেসিডেন্ট ও ট্রাম্প পরিবারের একজন নির্ভরযোগ্য বন্ধু ও উপদেষ্টায় পরিণত হন তিনি।

প্রেসিডেন্টের বড় ছেলে ডোনাল্ড ট্রাম্প জুনিয়র ছিলেন কার্কের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। একসাথে বেড়ানো থেকে শুরু করে এমএজিএ আন্দোলনের বিস্তারে বহুবার একসঙ্গে জনসমক্ষে হাজির হয়েছেন তারা। সর্বশেষ গত জুলাইয়ে ফ্লোরিডায় আয়োজিত টার্নিং পয়েন্ট ইউএসএ সম্মেলনে তাদের একসঙ্গে দেখা যায়।

কার্কের মৃত্যুর পর ট্রাম্প জুনিয়র এক্স পোস্টে লিখেছেন, “ভাই, আমি তোমাকে ভালোবাসি। তুমি অনেক মানুষকে কথা বলার সাহস দিয়েছো আর আমরা কখনোই চুপ থাকব না।”

প্রেসিডেন্টের জামাই ও প্রথম মেয়াদের সিনিয়র উপদেষ্টা জ্যারেড কুশনার ২০১৬ সালের নির্বাচনী প্রচারে কার্কের ভূমিকা এবং এমএজিএ আন্দোলনের বিকাশে তার অবদানের কথা স্মরণ করেছেন।

এক্স পোস্টে তিনি লিখেছেন, “আমি যখন হোয়াইট হাউসে ছিলাম, প্রতিষ্ঠিত সংগঠনগুলো প্রায়ই অভিযোগ করত, আমরা বারবার চার্লির সঙ্গে ইভেন্ট করি। জবাবে বলতাম—‘ও বড় বড় চিন্তা করে, ওর সঙ্গে কাজ করা সহজ আর প্রতিবারই সে প্রত্যাশার থেকে বেশি কিছু দেয়।’”

১৯৯৩ সালে জন্ম নেওয়া চার্লি কার্ক বড় হয়েছেন শিকাগোর উত্তর-পশ্চিম উপশহরে, জীবনে চারজন মাত্র প্রেসিডেন্ট দেখেছেন তিনি। তারপরও মাত্র ১৫ বছর বয়সেই রাজনৈতিক সচেতনতা তৈরি হয় তার। যখন তার নিজ রাজ্যের সিনেটর বারাক ওবামা প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।

ওবামার ঐতিহাসিক বিজয় উৎযাপন না করলেও কার্কের নিজস্ব রাজনৈতিক উত্থান শুরু হয় ২০০৯ সালে হওয়া টি পার্টি আন্দোলনের বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে। ইলিনয়ের প্যালাটাইনে হার্পার কলেজে পড়াশোনা করতেন তিনি। সেই সময়ে কলেজ ছেড়ে রক্ষণশীল রাজনীতিতে পুরোপুরি মনোনিবেশ করেন কার্ক। এটাকে বেশ গর্বের বিষয় হিসেবেও তুলে ধরেন তিনি।

বিভিন্ন বক্তৃতায় প্রায়শই কার্ক বলতেন, “ভিড় থেকে আলাদা হতে চাইলে, কলেজে যেও না, কথাটা আমার ক্ষেত্রে বেশ কাজ করেছে।”

এরপর মাত্র এক দশকের ব্যবধান, কার্ক ধীরে ধীরে হয়ে ওঠলেন রক্ষণশীল রাজনীতির তারকা। প্রথমে ট্রাম্প জুনিয়রের ঘনিষ্ঠ, পরে ট্রাম্পের আস্থাভাজন। ওহাইওর সিনেটর জেডি ভ্যান্সের সঙ্গেও তার সম্পর্ক ছিল অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। ২০২২ সালের সিনেট নির্বাচনে তার গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী ছিলেন কার্ক। এমনকি ২০২৪ সালের নির্বাচনে ট্রাম্পের ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে ভ্যান্সের নাম প্রস্তাব করার পেছনেও কার্কের ভূমিকা ছিল প্রবল।

কার্ক ও তার রাজনৈতিক সংগঠন টার্নিং পয়েন্ট অ্যাকশন ট্রাম্পের দ্বিতীয়বারের প্রেসিডেন্ট হওয়ায় বড় ভূমিকা রেখেছে। সেই ভূমিকার কারণেই একটি গুরুত্বপূর্ণ সুইং স্টেট অ্যারিজোনা বাইডেনের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিতে সক্ষম হন ট্রাম্প।

‘চেজ দ্য ভোট’ নামে এক উদ্যোগের মাধ্যমে, সংগঠনটি দীর্ঘ সময় ধরে নির্দিষ্ট ভোটারদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলে। এমনকি তাদের আগাম ভোট দিতে উৎসাহিত করে। ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে পৌঁছাতে এবং ডাকযোগে ভোট পাঠাতেও সাহায্য করে তারা। এসবের উদ্দেশ্য ছিল, যারা সাধারণত ভোট দেন না কিন্তু ট্রাম্পের প্রতি সহানুভূতিশীল, তাদের ভোট যেন নিশ্চিত করা যায়।

সিএনএনের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, এমন সব কার্যক্রমের ফলে টার্নিং পয়েন্ট অ্যাকশন অ্যারিজোনায় প্রায় সোয়া এক লাখ অনিয়মিত ভোটারকে সক্রিয় করতে সক্ষম হয়। যার ফলাফল দেখা যায় নির্বাচনে। ট্রাম্প এই রাজ্যে জয় পান আনুমানিক ১ লাখ ৮৭ হাজার ভোটে।

দ্বিতীয় মেয়াদে ট্রাম্প ক্ষমতার মসনদে বসার পর আলোচনায় আসে কার্ককে প্রশাসনের ভেতরে কোনো পদের দায়িত্ব দেওয়ার কথা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত হয়, প্রশাসনের বাইরে থেকেই তিনি ভূমিকা রাখতে পারবেন বেশি।

ট্রাম্পের সঙ্গে কার্কের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হয় দ্বিতীয় মেয়াদের ক্ষমতার সময়ে। কিন্তু তার প্রতি কৃতজ্ঞতা আরও আগেই প্রকাশ করে ফেলেছিলেন ট্রাম্প। দ্বিতীয় মেয়াদে শপথ গ্রহণের প্রাক্কালে ট্রাম্প বলেছিলেন, “চার্লি অসাধারণ। শিশুরা উদারপন্থী-একথা ছেলেটা বিশ্বাস করে না। শিশুরা উদারপন্থী নয়ও। হয়তো তারা আগে ছিল, কিন্তু এখন আর নয়।”

তথ্যসূত্র: সিএনএন

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত