বিশ্ব ইজতেমার মোনাজাত শেষে মুসল্লিদের বাড়ি ফেরার চাপের মাঝে রাজধানীর প্রধান দুই সড়কে চলছে বিক্ষোভ-অবরোধ, যার প্রভাব পড়েছে পুরো নগরীতে।
শ্যামলীর শিশুমেলা মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভ চলছে জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে আহতদের। আর তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীদের অবরোধে মহাখালী-গুলশান সড়ক বন্ধ রাখা হয়েছে।
রবিবার অফিস শুরুর প্রথম দিন গুরুত্বপূর্ণ এই দুই সড়কে যানবহান চলাচল বন্ধ হওয়ায় অনেকেই বাধ্য হয়ে হেঁটে গন্তব্যে যাচ্ছে।
শিশুমেলা মোড়ে গণঅভ্যুত্থানে আহতদের আল্টিমেটাম
সুচিকিৎসা, পুনর্বাসন ও রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির দাবিতে শ্যামলী শিশুমেলা মোড় অবরোধ করে রেখেছে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহতরা। তারা বলেছেন, বিকাল ৪টার মধ্যে সরকারের কোনও প্রতিনিধি তাদের সঙ্গে দেখা না করা পর্যন্ত তারা সড়ক ছাড়বেন না। বেঁধে দেওয়া এই সময়ের মধ্যে তাদের লিখিত স্বীকৃতি না দেওয়া হলে তারা সচিবালয় ঘেরাও করবেন।
যে গণআন্দোলনে গত ৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত হয় আওয়ামী লীগ সরকার, সেই আন্দোলনে আহত এসব মানুষ শনিবার রাতেও একই দাবিতে রাস্তায় নেমেছিল।
রবিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে জাতীয় অর্থোপেডিক ইনস্টিটিউট ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের (পঙ্গু হাসপাতালের) সামনে থেকে সরে শিশুমেলা মোড়ে অবস্থান নেয় আন্দোলনে আহতরা। সেখানে নানা ধরনের স্লোগান দিতে থাকেন তারা।
আহতদের এই অবস্থানের কারণে মিরপুর সড়কের দুই পাশের পাশাপাশি শ্যামলী-আগারগাঁও সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। আটকা পড়েছে অনেক যানবাহন।
পরিস্থিতি সামাল দিতে ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা আসাদগেইট থেকে গাবতলী-মিরপুরগামী যানবাহনকে বিকল্প পথে ঘুরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে।

শিশুমেলা মোড়ের অবস্থান কর্মসূচিতে আছেন নাঈম শেখ। পঙ্গু হাসপাতালে তার চিকিৎসা চলছে।
নাঈম শেখের অভিযোগ, তারা এখন পর্যন্ত সুচিকিৎসার আশ্বাসই শুধু পেয়েছেন। এতোদিনেও আশ্বাসের কোনও বাস্তবায়ন হয়নি।
শনিবার রাতে রাস্তায় নেমে এসেছেন জানিয়ে নাঈম শেখ বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে তাদের সঙ্গে এখনও কেউ যোগাযোগ করেননি। যোগাযোগ না করলে সচিবালয় ঘেরাও কর্মসূচি দেওয়া হবে।
কী ধরনের উন্নত চিকিৎসা চাচ্ছেন- এ প্রশ্নে আন্দোলনে আহত একাধিক ব্যক্তি বলেছেন, “দেশি ডাক্তার যে কথা বলে, বিদেশি ডাক্তার এসেও একই কথা বলে। এটা কেন বলবে।”
‘আমরা কি সরকারের বোঝা হয়ে গেলাম’
চিকিৎসা তো একই রকম হবে- এমন মন্তব্যে উত্তেজিত হয়ে তাদের ভেতর থেকে কেউ কেউ বলেন, “উন্নত চিকিৎসা দরকার। বিদেশ পাঠায় না কেন।”
শনিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে চিকিৎসা ঠিকমতো হচ্ছে না অভিযোগ করে জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের ভেতরে বিক্ষোভ দেখান আহতরা। পরে তারা অবস্থান নেন মূল সড়কে। রবিবার সকাল থেকে সড়কের মাঝে বেঞ্চ পেতে, কেউবা আবার কেবল চাদর বিছিয়ে শুয়ে পড়েন।

তারা বলছেন, জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনে ও সরকার তাদের গুরুত্ব দিচ্ছে না। তাদের কাজও ধীরগতির। কিন্তু গত আন্দোলনে তাদের অবদান রয়েছে। সেগুলোকে কেউ মনে রাখছে না। কিন্তু উন্নত চিকিৎসার পাশাপাশি তাদের দায়িত্ব নিতে হবে সরকারকে।
এর আগে গত নভেম্বর মানেও উন্নত চিকিৎসার জন্য রাস্তায় নেমে এসেছিল আহতরা। তখন উপদেষ্টারা সেখান গিয়ে উন্নত চিকিৎসার আশ্বাস দিলে তারা সড়ক ছাড়ে।

তিতুমীরের শিক্ষার্থীদের ‘ব্লকেড টু নর্থ সিটি’ কর্মসূচি শিথিল
স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়সহ সাত দাবিতে মহাখালীতে অবস্থিত তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা রবিবার পঞ্চম দিনের মতো আন্দোলন করছে। কলেজের প্রধান ফটকের সামনে আমরণ অনশন কর্মসূচিও অব্যাহত রেখেছেন তারা।
এদিন বেলা ১১টা ৫০ মিনিটে আন্দোলনরত শিক্ষাির্থীরা বাঁশ দিয়ে কলেজটির সামনের দুই পাশের সড়কই আটকে দেন। এতে সড়কের উভয় পাশে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
এই কর্মসূচির নাম দেওয়া হয়েছে ‘বারাসাত ব্যারিকেড’ বা সড়ক ও রেলপথ অবরোধ কর্মসূচি।

তবে বিশ্ব ইজতেমায় আখেরি মোনাজাতের কথা চিন্তা করে ‘ব্লকেড টু নর্থ সিটি’ কর্মসূচি শিথিল করার কথা জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। দুপুর ১২টায় ক্যাম্পাসের সামনে সংবাদ সম্মেলন করে এই ঘোষণা দেন আন্দোলনে সম্মুখ সারিতে থাকা ১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থী আলি আহমদ।
তিনি বলেন, “আজ বিশ্ব ইজতেমার আখেরি মোনাজাত ছিল। এতে সারাদেশ থেকে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা অংশগ্রহণ করেন। তাই তাদের কথা চিন্তা করে আমরা শুধু আজকের জন্য আমরা রেলপথ ও ঢাকা-ময়মনসিংহ হাইওয়ে সড়কে ব্লকেড কর্মসূচি প্রত্যাহার করেছি। কিন্তু নর্থ সিটির ভেতরে অন্য সড়কগুলোতে ব্লকেড কর্মসূচি চলমান থাকবে।”
এদিকে অনশনকরীদের মধ্যে ছয়জন অসুস্থ হয়ে পড়েছে। তাদের মধ্যে চারজনকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে এবং দুইজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, তাদের সাত দফা কর্মসূচি মেনে না নেওয়া পর্যন্ত এই আন্দোলন চলবে।

ইজতেমা শেষে বাড়ি ফিরছে মুসল্লিরা, সড়কে ধীরগতি
তাবলিগ জামাতের শুরায়ে নেজাম বা মাওলানা জোবায়েরের অনুসারীদের প্রথম ধাপের ইজতেমার আখেরি মোনাজাত শেষে রবিবার সকাল থেকে বাড়ি ফিরছেন মুসল্লিরা। কেউ বাসে, কেউ ট্রেনে, কেউবা বাড়ি ফিরছেন হেঁটে। এতে গাজীপুরের টঙ্গীর তুরাগতীর ও আশপাশের এলাকায় দেখা দিয়েছে মানুষের ভিড়। যান চলাচলে দেখা দিয়েছে ধীরগতি।
গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় শুরু হয়েছিল মাওলানা জোবায়েরের অনুসারীদের প্রথম ধাপের ইজতেমা। রবিবার সকালে আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হয় এ ধাপের ইজতেমা। মোনাজাত পরিচালনা করেন কাকরাইল মসজিদের ইমাম মাওলানা জোবায়ের।
মোনাজাত শেষে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক, ঢাকা-আশুলিয়া সড়ক, টঙ্গীর কামারপাড়া-মন্নুগেট সড়কসহ আশপাশের সড়ক ও অলিগলিতে মানুষের ঢল নামে। মুসল্লিদের চলাচলের সুবিধার্থে আশপাশের কয়েকটি সড়কে শনিবার মধ্যরাত থেকে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণে রেখেছে গাজীপুর মহানগর পুলিশ।
তবে শ্যামলীর শিশুমেলা ও মহাখালীর আমতলি মোড়ে অবরোধ থাকায় অনেকেই ভোগান্তিতে পড়েছেন।



