Beta
সোমবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
Beta
সোমবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

দেখা দিলেন ওলি, অভিযোগ তুললেন ষড়যন্ত্রের

নেপালের সাবেক প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলি।
নেপালের সাবেক প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলি।
[publishpress_authors_box]

নেপালে জেন জি বিক্ষোভে ক্ষমতা হারানোর ১৯ দিন পর প্রকাশ্যে এলেন কে পি শর্মা ওলি; তিনি দাবি করলেন, তরুণদের বিক্ষোভ ব্যবহার করে তার সরকারকে উৎখাতে একটি ষড়যন্ত্র হয়েছিল।

শনিবার কাঠমান্ডু শহরের বাইরে ভক্তপুর জেলার গুন্ডু এলাকায় নিজের বাড়িতে দলের এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন নেপালের কমিউনিস্ট পার্টি (ইউএমএল) নেতা ওলি। অনুষ্ঠানে তাকে ঘিরে ছিল নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য এবং দলীয় কর্মীরা।

সেখানে তিনি বলেন, তরুণদের বিক্ষোভে ঢুকে পড়েছিল অনুপ্রবেশকারীরা, তারা পরিস্থিতি ভিন্ন দিকে নিয়ে গিয়েছিল। তদন্ত হলেই তা বেরিয়ে আসবে।

নেপালের আইন না মানার কারণ দেখিয়ে বেশ কয়েকটি সোশাল মিডিয়া অ্যাপ ওলির সরকার গত ৪ সেপ্টেম্বর বন্ধ করে িদলে তরুণদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ দেখা দেয়। তাদের সেই বিক্ষোভ জেন জি বিক্ষোভ নামে পরিচিতি পায়।

বিক্ষোভ দমনে ওলির সরকার কঠোর হলে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে, তাতে অর্ধ শতাধিক নিহত হয়, যাদের অধিকাংশের বয়সই ৩০ বছরের নিচে।

এরপর পার্লামেন্টসহ বিভিন্ন ভবন ও রাজনৈতিক নেতাদের বাড়ি ভাংচুর-অগ্নিসংযোগ শূরু হলে ৯ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী ওলি পদত্যাগের ঘোষণা দেন।

সেদিন হেলিকপ্টারে করে ওলিকে কাঠমান্ডু থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল। এরপর তার একটি খোলা চিঠি নেপালের সংবাদমাধ্যমে এলেও শনিবারই প্রকাশ্যে কোনও সভায় দেখা গেল তাকে।

দেশ থেকে পালানোর গুঞ্জন উড়িয়ে দিয়ে সভায় ওলি বলেন, “নানা ধরনের গুজব শোনা যাচ্ছে। তারা কী ভেবেছে বিদেশে পালিয়ে যাব?

“আমাদের অবশ্যই দেশকে সাংবিধানিক ও গণতন্ত্রে পথে আনতে হবে এবং রাজনীতিকে আবার সঠিক ধারায় আনতে হবে। আমরা দেশে আইনের শাসন ফিরিয়ে আনব।”

ওলি পদত্যাগের পর সাবেক প্রধান বিচারপতি সুশীলা কার্কির নেতৃত্বে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারা গঠিত হয়েছে। তাদের কাছে নিজের নিরাপত্তার জন্য যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি করেন তিনি।

ওলি বলেন, “আপনারা নিশ্চয়ই সোশাল মিডিয়ায় দেখেছেন যে আমার বাড়ির অবস্থান শেয়ার করা হচ্ছে, হামলার উসকানি দেওয়া হচ্ছে। সরকার কীসের অপেক্ষা করছে? সরকারের কি কোনও দায়িত্ব-কর্তব্য নেই?”

তিনি প্রধানমন্ত্রী থাকার সময় জেন জি বিক্ষোভ মোকাবেলায় ভুল কোনও পদক্ষেপ নেননি বলে দাবি করেন ওলি।

ওলি বলেন, “৮ ও ৯ সেপ্টেম্বর জেন-জি বিক্ষোভের নামে জাতি এক অস্বাভাবিক পরিস্থিতির সাক্ষী হয়। বিক্ষোভকারীদের অনুভূতি এবং তারুণ্যের শক্তিকে কাজে লাগিয়ে এটিকে ভিন্ন দিকে চালিত করা হয়েছিল।

“৮ সেপ্টেম্বর দুপুরে যখন জেন জি বিক্ষোভকারীরা এভারেস্ট হোটেলে পৌঁছে গিয়েছিল, তখন কিছু অনুপ্রবেশকারী ভিড়ের মধ্যে মিশে যায়। পরিস্থিতি যখন প্রশমিত হয়ে আসছিল, অনেক বিক্ষোভকারী ফিরেও যাচ্ছিল, তখন এই অনুপ্রবেশকারীরা কিছু লোককে ঘিরে ধরে সামনে ঠেলে দেয়। তাতে পরিিস্থতির অবনতি হয়, কয়েক ডজন তরুণের মর্মান্তিক জীবনহানি ঘটে।”

বিষয়টি তদন্তের জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয় জানিয়ে তিনি বলেন, “আমি নিশ্চিত যে সত্য প্রকাশ পাবে।”

ওলি বলেন, “আমি আগেও বলেছি যে আমাদের নতুন প্রজন্ম সিংহ দরবার বা অন্য কোথাও ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করেনি। আমাদের জেন জি সরকারি ভবন, পার্লামেন্ট, হোটেল, আদালতে আগুন লাগায়নি। তারা রাজনৈতিক দলগুলোর অফিসগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করেনি।

“৯ সেপ্টেম্বর সকাল ১১/সাড়ে ১১টার দিকে আমি পদত্যাগ করি। আগের দিন অবাঞ্ছিত ঘটনা ঘটেছিল, তাই আমার চেষ্টা ছিল যেন পরিস্থিতি আর নাজুক না হয়। এরপরই অগ্নিসংযোগ, ভাংচুর ও লুটপাটের ঘটনা শুরু হয়।”

বিক্ষোভ দমনে কারফিউ জারি করে সেনা নামানো হলেও দেখামাত্র গুলির কোনও নির্দেশ দেওয়া হয়নি বলে দাবি করেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী।

নিহতদের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে অধিকাংশের মৃত্যুর কারণ হিসাবে মাথা ও বুকে গুলির আঘাতের কথা বলা আছে। তবে ওলি বলছেন, চরম অবস্থায় পুলিশকে শুধু হাঁটুর নিচে গুলি করার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল।

তখনকার পরি‘িস্থতি তুলে ধরে ওলি বলেন, “এমন উসকানি দেওয়া হচ্ছিল যে ‘আমাকে একটি বন্দুক দাও-আমি তাকে মেরে ফেলব’, ‘আমাকে একটি তলোয়ার দাও-আমি তাকে টুকরো টুকরো করে পেল’, ‘আমাকে একটি ড্রোন দাও-আমি তাকে আঘাত করব’- এই ধরনের উসকানি দেওয়া হচ্ছিল, সেগুলো উৎসাহের সঙ্গে প্রচারও হচ্ছিল।

“আমি কী ভূমিকা পালন করেছি? আমি বালুবাটারে ছিলাম, পরিস্থিতির খোঁজ নিচ্ছিলাম, হতাহত এড়াতে এবং সম্পত্তি ও জীবন রক্ষা করার জন্য কাজ করছিলাম। গুলিবর্ষণের খবর শুনে আমি খবর নিই। আমাকে প্রথমে বলা হয়েছিল যে কেবল রবার বুলেট ছোড়া হয়েছে। কিন্তু পরে আমি জানতে পারি যে ১৪ জন মারা গেছে। গুলি তাদের কোথায় লেগেছে- জিজ্ঞাসা করলে আমাকে বলা হয় মাথা ও বুকে।”

“পুলিশের হাঁটুর নিচে গুলি করার নির্দেশ ছিল, কিন্তু তারা মাথায় গুলি করেছে। আমি প্রশ্ন করি, এটা কীভাবে হলো? যারা ঘটনার জন্য দায়ী, তারা এখন আমার উপর দোষ চাপানোর চেষ্টা করছে,” বলেন ওলি।

তবে ওলির মন্ত্রিসভার একজন সদস্য এই দাবির বিরোধিতা করে বলেছেন, ওলি যে কোনোভাবে ক্ষতা ধরে রাখতে চাইছিলেন। এমনকি রাষ্ট্রমন্ত্রী রমেশ লেখক পদত্যাগ করার পরও বিক্ষোভ দমনে কঠোর হতে নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি।

সাবেক ওই মন্ত্রী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “৮ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায়ও প্রধানমন্ত্রী ওলি পদত্যাগ না করার বিষয়ে অনমনীয় ছিলেন। আমরা স্পষ্ট করে দিয়েছিলাম যে আমরা তাকে সমর্থন করতে পারি না এবং পদত্যাগ করার হুমকি দিয়েছিলাম। কিন্তু তিনি (ওলি) নড়েননি।

“এখন তিনি এমন একটি নতুন আখ্যান প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করছেন, যা তাকে নির্দোষ হিসেবে চিত্রিত করবে। রক্ত তার হাতে লেগে আছে। যদি তিনি সেদিন সন্ধ্যায় পদত্যাগ করতেন, তবে বহু জীবন বাঁচানো যেত।”

সেপ্টেম্বরে প্রতিবাদের পর ওলি সরকারি বাসভবন ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন এবং গত সপ্তাহ পর্যন্ত সেনাবাহিনীর আশ্রয়ে ছিলেন।

সংসদ ভেঙে দেওয়া হয়েছে এবং আগামী বছরের মার্চে নির্বাচন নির্ধারিত হওয়ায়, নেপাল এখন একটি অস্থির রাজনৈতিক সন্ধিক্ষণের সম্মুখীন। এদিকে, কাঠমান্ডু এবং অন্যান্য প্রধান শহর জুড়ে বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে, জেন-জি প্রতিবাদকারীরা রাজনৈতিক কর্তৃপক্ষের উপর চাপ বজায় রেখেছে।

তথ্যসূত্র : দ্য ইকোনমিক টাইমস

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত