Beta
সোমবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
Beta
সোমবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

স্বীকৃতি পাচ্ছে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র, নেতৃত্বে কে

Flag-of-Palestine
[publishpress_authors_box]

ফিলিস্তিনি কূটনীতিক হুসাম জোমলটকে এই মাসের শুরুতে লন্ডনের চ্যাথাম হাউস থিঙ্ক ট্যাঙ্কে আলোচনায় অংশ নিতে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। সেখানে তিনি ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়টিকে ‘গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত’ হিসেবে উল্লেখ করেন।

জোমলট যখন এই আলাপ দিচ্ছিলেন, তার আগেই জাতিসংঘে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রতিশ্রুতিতে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও আরও কিছু দেশ যোগ দিয়েছিল।

ড. জোমলট সতর্ক করেছিলেন, “নিউ ইয়র্কে যা ঘটতে যাচ্ছে, সেটিই হয়তো দ্বিরাষ্ট্র সমাধান কার্যকর করার শেষ প্রচেষ্টা হতে পারে। একে ব্যর্থ হতে দেবেন না।”

কয়েক সপ্তাহ পেরিয়ে এখন এই চিন্তা বাস্তবতায় রূপ নিয়েছে। ইসরায়েলের দীর্ঘদিনের ঘনিষ্ঠ মিত্র যুক্তরাজ্য, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়াও এই পদক্ষেপ নিয়েছে।

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার সোশাল মিডিয়াতে একটি ভিডিও পোস্ট করে এই ঘোষণা দেন।

তিনি সেখানে বলেন, “মধ্যপ্রাচ্যে বেড়ে চলা বিভীষিকার মুখে আমরা কাজ করছি শান্তির সম্ভাবনা ও দ্বিরাষ্ট্র সমাধানের আশা বাঁচিয়ে রাখতে। এর মানে হচ্ছে, একটি নিরাপদ ও সুরক্ষিত ইসরায়েল, পাশাপাশি একটি টেকসই ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র। অথচ এই মুহূর্তে আমাদের কাছে কোনোটিই নেই।”

এর আগে ১৫০টিরও বেশি দেশ ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছিল। কিন্তু যুক্তরাজ্যসহ নতুন দেশগুলোর অন্তর্ভুক্তিকে অনেকে বড় অগ্রগতি হিসেবে দেখা হচ্ছে।

সাবেক ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা জাভিয়ার আবু ইদের মতে, “বিশ্বে ফিলিস্তিন কখনও এত শক্তিশালী অবস্থানে ছিল না। বিশ্ব এখন ফিলিস্তিনের পক্ষে একজোট।”

তবে উত্তর দেওয়ার মতো জটিল প্রশ্নও রয়ে গেছে। ফিলিস্তিন আসলে কী? আদৌ কি এমন কোনও রাষ্ট্র আছে, যাকে স্বীকৃতি দেওয়া যায়?

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সঙ্গে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের নেতা মাহমুদ আব্বাস।

১৯৩৩ সালের মন্টেভিডিও কনভেনশনে রাষ্ট্র স্বীকৃতির চারটি মানদণ্ড উল্লেখ করা আছে। ফিলিস্তিন সেখান থেকে দুটি দাবি করতে পারে যথার্থভাবেই। একটি স্থায়ী জনসংখ্যা (যদিও গাজায় যুদ্ধ এটিকে মারাত্মক ঝুঁকিতে ফেলেছে) এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক স্থাপনের সক্ষমতা, যার প্রমাণ ড. জোমলট।

কিন্তু “নির্ধারিত ভূখণ্ডের” শর্তে এখনও ফিলিস্তিন মেলে না। চূড়ান্ত সীমান্ত নিয়ে কোনও সমঝোতা নেই (শান্তি প্রক্রিয়াও নেই)। ফলে ফিলিস্তিন বলতে কী বোঝানো হচ্ছে, এটি নিশ্চিতভাবে বলা কঠিন।

ফিলিস্তিনিদের জন্য তাদের কাঙ্ক্ষিত রাষ্ট্র মানে তিনটি অংশ; পূর্ব জেরুজালেম, পশ্চিম তীর ও গাজা উপত্যকা। এগুলো ইসরায়েল ১৯৬৭ সালের ছয় দিনের যুদ্ধে দখল করে নেয়।

নকশায় সামান্য চোখ বোলালেই বোঝা যায় সমস্যার কোথা থেকে শুরু। পশ্চিম তীর ও গাজা উপত্যকা ইসরায়েলের স্বাধীনতার বছর ১৯৪৮ থেকেই ভৌগোলিকভাবে বিচ্ছিন্ন।

পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ও ইহুদি বসতি স্থাপনকারীদের উপস্থিতির কারণে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ (যা ১৯৯০-এর দশকের অসলো শান্তি চুক্তির পর প্রতিষ্ঠিত হয়) মাত্র প্রায় ৪০ শতাংশ এলাকা পরিচালনা করে। ১৯৬৭ সাল থেকে বসতি সম্প্রসারণ পশ্চিম তীরকে খণ্ডিত করে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে ভঙ্গুর করে তুলেছে।

এদিকে পূর্ব জেরুজালেম, যাকে ফিলিস্তিনিরা তাদের রাজধানী মনে করেন, সেটিকে ঘিরে ফেলা হয়েছে ইহুদি বসতিতে। আর সেটি ধীরে ধীরে শহরটিকে পশ্চিম তীর থেকে আলাদা করছে।

গাজার অবস্থা তো আরও ভয়াবহ। প্রায় দুই বছরের যুদ্ধের ফলে গাজার বড় অংশই ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। কিন্তু এতসব সমাধানযোগ্য সংকটের বাইরে, রাষ্ট্র স্বীকৃতির জন্য মন্টেভিডিও কনভেনশন যে চতুর্থ শর্ত দিয়েছে, সেটিই সবচেয়ে কঠিন; একটি কার্যকর সরকার।

আর এখানেই ফিলিস্তিনিদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।

‘আমাদের দরকার নতুন নেতৃত্ব’

১৯৯৪ সালে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনি মুক্তি সংস্থার (পিএলও) মধ্যে হওয়া এক চুক্তির মাধ্যমে ফিলিস্তিনি জাতীয় কর্তৃপক্ষের (সংক্ষেপে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ বা পিএ) জন্ম। এ সংস্থা গাজা ও পশ্চিম তীরে আংশিকভাবে ফিলিস্তিনিদের ওপর বেসামরিক নিয়ন্ত্রণ চালাত।

কিন্তু ২০০৭ সালে হামাস ও পিএলওর প্রধান দল ফাতাহর মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর থেকে গাজা ও পশ্চিম তীরে দুই প্রতিদ্বন্দ্বী সরকারের শাসন কায়েম হয়। গাজায় হামাস ও পশ্চিম তীরে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ, যার প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস।

আর এতে তৈরি হয়েছে ৭৭ বছরের ভৌগোলিক বিচ্ছিন্নতা এবং ১৮ বছরের রাজনৈতিক বিভাজন। দীর্ঘ সময় ধরে পশ্চিম তীর ও গাজা উপত্যকা আরও দূরে সরে গেছে।

ফিলিস্তিনি রাজনীতি এ সময়কালে কঠিন ও অনমনীয় হয়ে পড়েছে। ফলে অধিকাংশ ফিলিস্তিনি তাদের নেতৃত্বের প্রতি অবিশ্বাসী হয়ে পড়েছে এবং অভ্যন্তরীণ সমঝোতার সম্ভাবনা তো দূরের কথা, রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার অগ্রগতি নিয়েও তারা হতাশ।

সর্বশেষ প্রেসিডেন্ট ও সংসদ নির্বাচন হয় ২০০৬ সালে। অর্থাৎ পশ্চিম তীর বা গাজায় ৩৬ বছরের কম বয়সী কোনও ফিলিস্তিনি জীবনে কখনও ভোট দেওয়ার সুযোগ পায়নি।

ফিলিস্তিনি আইনজীবী ডায়ানা বুত্তু বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, “এত সময় পেরিয়ে গেলেও আমরা কোনও নির্বাচন করিনি। এটা ভাবতেই অবাক লাগে। আমাদের নতুন নেতৃত্ব দরকার।”

২০২৩ সালের অক্টোবরে গাজায় যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ার পর এই প্রশ্নটি আরও জরুরি হয়ে ওঠে। দশ-হাজারেরও বেশি নাগরিকের মৃত্যুর মুখে পশ্চিম তীরের সদরদপ্তর থেকে ঘটনাপ্রবাহ দেখলেও আব্বাসের নেতৃত্বাধীন ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ কার্যত অসহায় দর্শকে পরিণত হয়েছে।

বহু বছরের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব

নেতৃত্বের ভেতরে টানাপোড়েন বহু বছর ধরেই চলছিল। পিএলও চেয়ারম্যান ইয়াসির আরাফাত দীর্ঘ নির্বাসন শেষে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের নেতৃত্বে ফেরার পর স্থানীয় ফিলিস্তিনি রাজনীতিবিদরা প্রায় উপেক্ষিত হয়ে পড়েন।

“ভেতরের লোকরা” আরাফাতের “বাইরের লোকদের” কর্তৃত্বপূর্ণ ভঙ্গিতে ক্ষুব্ধ হয়। আরাফাতের ঘনিষ্ঠ মহলে দুর্নীতির গুঞ্জন পিএর ভাবমূর্তিকে আরও দুর্বল করে দেয়।

সবচেয়ে বড় বিষয় হলো, সদ্য গঠিত ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ পশ্চিম তীরে ইসরায়েলের ধীরে ধীরে বসতি স্থাপন বন্ধ করতে পারেনি। আরাফাতের ঐতিহাসিক হ্যান্ডশেক (১৯৯৩ সালে হোয়াইট হাউসে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী ইয়িৎসহাক রবিনের সঙ্গে) থেকে জন্ম নেওয়া স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতিশ্রুতি পূরণেও ব্যর্থ হয়।

এর পরের বছরগুলোতে ব্যর্থ শান্তি উদ্যোগ, ইহুদি বসতির অব্যাহত সম্প্রসারণ, দুই পক্ষের উগ্রপন্থীদের সহিংসতা, ইসরায়েলি রাজনীতির ডানদিকে ঝুঁকে যাওয়া এবং ২০০৭ সালে হামাস-ফাতাহর সহিংস বিভাজন; সব মিলিয়ে কোনও সুগঠিত রাজনৈতিক বিকাশ সম্ভব হয়নি।

ফিলিস্তিনি ইতিহাসবিদ ইয়েজিদ সাইয়িঘ বলেন, “স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে নতুন প্রজন্মের নতুন নেতৃত্ব উঠে আসত। কিন্তু তা সম্ভব হয়নি। অধিকৃত ভূখণ্ডের ফিলিস্তিনিরা অসংখ্য খণ্ডিত স্থানে বিভক্ত হয়ে পড়েছে, যা নতুন নেতৃত্বের আবির্ভাব ও ঐক্যকে প্রায় অসম্ভব করে তুলেছে।”

তবুও একজন নেতার নাম সামনে এসেছে; মারওয়ান বারগুতি। পশ্চিম তীরে জন্ম ও বেড়ে ওঠা বারগুতি মাত্র ১৫ বছর বয়সে ফাতাহ আন্দোলনে সক্রিয় হন। দ্বিতীয় ফিলিস্তিনি ইন্তিফাদার সময় তিনি জনপ্রিয় নেতা হিসেবে আবির্ভূত হন। এরপর তাকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং অভিযোগ আনা হয় যে তিনি এমন কিছু প্রাণঘাতী হামলার পরিকল্পনা করেছিলেন, যাতে পাঁচজন ইসরায়েলি নিহত হয়।

মারওয়ান বারগুতি সবসময় এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। কিন্তু ২০০২ সাল থেকে তিনি ইসরায়েলি কারাগারে আছেন।

দ্বিতীয় ফিলিস্তিনি ইন্তিফাদার সময় জনপ্রিয় নেতা হিসেবে আবির্ভূত হন মারওয়ান বারগুতি।

তবুও ভবিষ্যৎ ফিলিস্তিনি নেতৃত্বের আলোচনায় মানুষ প্রায়ই এমন একজনের নামই তোলে, যিনি প্রায় ২৩ বছর ধরে কারাবন্দি।

পশ্চিম তীরভিত্তিক ফিলিস্তিনি সেন্টার ফর পলিসি অ্যান্ড সার্ভে রিসার্চের এক সাম্প্রতিক জরিপে দেখা যায়, ৫০ শতাংশ ফিলিস্তিনি বারগুতিকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে বেছে নেবেন। ২০০৫ সাল থেকে প্রেসিডেন্ট থাকা আব্বাসের চেয়ে তার জনপ্রিয়তা অনেক বেশি।

বারগুতি ফাতাহর শীর্ষ সদস্য। বহু বছর ধরে হামাসের সঙ্গে তার দ্বন্দ্ব রয়েছে। তবুও গাজায় আটক ইসরায়েলি জিম্মিদের বিনিময়ে হামাস যে রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তির তালিকা দিয়েছে, সেখানে তার নাম আছে বলে ধারণা করা হয়।

তবে ইসরায়েল তাকে মুক্তি দেওয়ার কোনও ইঙ্গিত দেয়নি।

গত আগস্টে প্রকাশিত একটি ভিডিওতে দেখা যায়; রোগা, দুর্বল ৬৬ বছর বয়সী বারগুতিকে ইসরায়েলের নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন গিভির বিদ্রুপ করছেন। বহু বছর পর এটিই ছিল তার প্রথম প্রকাশ্য ভিডিও।

এক সাম্প্রতিক জরিপে দেখা যায়, ৫০ শতাংশ ফিলিস্তিনি বারগুতিকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে বেছে নেবেন।

নেতানিয়াহু ও ফিলিস্তিন রাষ্ট্র

গাজার যুদ্ধের অনেক আগে থেকেই বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর অবস্থান ফিলিস্তিন রাষ্ট্র নিয়ে পরিষ্কার ছিল।

২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে তিনি বলেন, “সবাই জানে আমি সেই ব্যক্তি, যে দশকের পর দশক ধরে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা ঠেকিয়ে রেখেছি। কারণ এটি আমাদের অস্তিত্বকে হুমকির মুখে ফেলত।”

আন্তর্জাতিক মহল ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে আবার গাজার নিয়ন্ত্রণ নিতে বললেও নেতানিয়াহু জোর দিয়ে বলেছেন, গাজার ভবিষ্যৎ প্রশাসনে পিএর কোনও ভূমিকা থাকবে না। তার দাবি, আব্বাস ৭ অক্টোবর হামাসের আক্রমণকে নিন্দা জানাননি।

গত আগস্টে ইসরায়েল এক বসতি প্রকল্পের চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়, যা কার্যত পূর্ব জেরুজালেমকে পশ্চিম তীর থেকে বিচ্ছিন্ন করবে।

৩,৪০০টি বাড়ি নির্মাণের জন্য ওই পরিকল্পনা অনুমোদন করা হয়।

ইসরায়েলের অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচ বলেন, এই পরিকল্পনা ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের ধারণাকেই সমাধিস্থ করবে। কারণ “স্বীকৃতি দেওয়ার মতো কিছু নেই, কাউকেই স্বীকৃতি দেওয়ার নেই।”

ফিলিস্তিনি ইতিহাসবিদ ইয়েজিদ সাইয়িঘের মতে, এটি নতুন কিছু নয়।

তিনি বলেন, “আপনি ফেরেশতা মিকাইলকে নামিয়ে এনে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের নেতৃত্বে বসাতে পারলেও কিছুই বদলাবে না। কারণ পরিস্থিতি এমন, যেখানে কোনও ধরনের সফলতা একেবারেই অসম্ভব। আর এটাই দীর্ঘদিনের বাস্তবতা।”

একটি বিষয় নিশ্চিত; যদি কোনোদিন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গড়ে ওঠে, সেটি হামাস চালাবে না।

ফ্রান্স ও সৌদি আরবের পৃষ্ঠপোষকতায় তিন দিনের এক সম্মেলন শেষে জুলাইয়ে গৃহীত ঘোষণায় বলা হয়; “হামাসকে গাজার শাসন শেষ করতে হবে এবং তাদের অস্ত্র ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করতে হবে।”

এই “নিউ ইয়র্ক ঘোষণা” আরব রাষ্ট্রগুলো একযোগে অনুমোদন করে এবং পরবর্তীতে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ১৪২ সদস্য দেশ এটি গ্রহণ করে।

অন্যদিকে হামাস বলছে, তারা গাজার ক্ষমতা স্বাধীন টেকনোক্র্যাট প্রশাসনের হাতে তুলে দিতে প্রস্তুত।

শুধু প্রতীকী স্বীকৃতি কি যথেষ্ট

বারগুতি কারাগারে, আব্বাস প্রায় ৯০ বছরের কাছাকাছি বয়সে, হামাস বিধ্বস্ত এবং পশ্চিম তীর টুকরো টুকরো। এ অবস্থায় স্পষ্ট যে ফিলিস্তিন নেতৃত্ব ঐক্যের ঘাটতিতে ভুগছে। তবে এর মানে এই নয় যে, আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির কোনও গুরুত্ব নেই।

ফিলিস্তিনি নাগরিক ডায়ানা বুত্তু বলেন, “এটি আসলেই খুব মূল্যবান হতে পারে।” তবে তিনি সতর্ক করেন; “এটা নির্ভর করছে কেন এই দেশগুলো স্বীকৃতি দিচ্ছে এবং তাদের উদ্দেশ্য কী।”

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ব্রিটিশ সরকারি কর্মকর্তা বলেন, শুধু প্রতীকী স্বীকৃতি যথেষ্ট নয়।

তার ভাষায়; “প্রশ্ন হলো, আমরা কি এমন কোনও অগ্রগতি আনতে পারি যাতে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ (ইউএনজিএ) শুধু স্বীকৃতির অনুষ্ঠানে পরিণত না হয়।”

নিউ ইয়র্ক ঘোষণা স্বাক্ষরকারী দেশগুলোকে (এর মধ্যে যুক্তরাজ্যও আছে) বাধ্য করেছে “ফিলিস্তিন প্রশ্নের শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য দৃশ্যমান, সময়সীমাবদ্ধ ও অপরিবর্তনীয় পদক্ষেপ” নিতে।

এই ইস্যুতে ট্রাম্প ও স্টারমারের দৃষ্টিভঙ্গি ভিন্ন

লন্ডনের কর্মকর্তারা বলেন, ঘোষণায় গাজা ও পশ্চিম তীরের ঐক্য, ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে সমর্থন, নির্বাচন আয়োজন এবং গাজার জন্য আরব পুনর্গঠন পরিকল্পনার উল্লেখ আছে। এসবই সেই পদক্ষেপ যা স্বীকৃতির পর অনুসরণ করা প্রয়োজন।

কিন্তু তারা জানেন, বাধাগুলো ভয়াবহ।

ইসরায়েল অনড় বিরোধিতা করছে এবং হুমকি দিচ্ছে পশ্চিম তীরের অংশবিশেষ বা পুরোটা আনুষ্ঠানিকভাবে দখল করে নেবে।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিষয়টি নিয়ে তার অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, “এ বিষয়ে আমার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর মতপার্থক্য আছে।”

গত আগস্টে যুক্তরাষ্ট্র অস্বাভাবিক এক পদক্ষেপ নেয়। দেশটি ডজনখানেক ফিলিস্তিনি কর্মকর্তার ভিসা বাতিল বা প্রত্যাখ্যান করে, যা জাতিসংঘের নিজস্ব নিয়ম ভঙ্গের সম্ভাবনা তৈরি করে।

জাতিসংঘে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার ক্ষেত্রে ভেটো দেওয়ার ক্ষমতা যুক্তরাষ্ট্রের আছে এবং ট্রাম্প এখনও তার তথাকথিত “রিভিয়েরা পরিকল্পনায়” অনড় মনে হচ্ছেন। এই পরিকল্পনায় যুক্তরাষ্ট্র “দীর্ঘমেয়াদি মালিকানা অবস্থান” নিতে চায় গাজার ওপর।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, ওই পরিকল্পনায় ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কোনও উল্লেখ নেই। শুধু বলা হয়েছে “পুনর্গঠিত ফিলিস্তিনি স্বশাসনের” কথা, যেখানে গাজা ও পশ্চিম তীরের ভবিষ্যৎ সংযোগের কোনও ইঙ্গিত নেই।

গাজার দীর্ঘমেয়াদি ভবিষ্যৎ হয়তো অবস্থান করছে নিউ ইয়র্ক ঘোষণা, ট্রাম্পের পরিকল্পনা ও আরব পুনর্গঠন পরিকল্পনার মাঝে কোথাও।

সব পরিকল্পনাই নিজেদের ভিন্ন ভিন্ন পথে, গত দুই বছরে গাজার ওপর নেমে আসা বিপর্যয়ের ভেতর থেকে কিছুটা হলেও উদ্ধার করার চেষ্টা করছে। তবে যে পরিকল্পনাই সামনে আসুক না কেন, ফিলিস্তিন ও তার নেতৃত্ব কেমন হবে, এই প্রশ্নের উত্তর সেখানে থাকতেই হবে।

কিন্তু ফিলিস্তিনি ডায়ানা বুত্তুর মতো অনেকের কাছে আরও জরুরি প্রশ্ন রয়েছে। তিনি বলেন, রাষ্ট্রের স্বীকৃতির ওপর জোর দেওয়ার চেয়ে তিনি বরং চাইবেন দেশগুলো হত্যাযজ্ঞ ঠেকাতে উদ্যোগ নিক।

তার মতে, “রাষ্ট্রের প্রশ্ন নিয়ে আলোচনায় আটকে না থেকে, আরও কিছু করুন এই হত্যা থামানোর জন্য।”

তথ্যসূত্র : বিবিসি

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত