তিনি ছিলেন বাফুফে ডেভেলপমেন্টের দায়িত্বে। ২০২৪ সালে তাঁকে দেওয়া হয় বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবলের দায়িত্ব। প্রথম অ্যাসাইনমেন্টেই সফল হন পিটার বাটলার। অক্টোবরে নেপালে নারী সাফে চ্যাম্পিয়ন করেন বাংলাদেশকে। এরপর পেশাদারিত্বের চূড়ান্ত প্রদর্শনী দেখিয়ে বাংলাদেশকে সাফের গণ্ডি ছাড়িয়ে এশিয়ান ফুটবলের সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিয়ে গেছেন। সিনিয়র নারী দলের পর লাওসে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-২০ দল উঠে গেছে এশিয়ান কাপের মূল পর্বে। এত সব সাফল্যের পেছনের রহস্য কি? সামনের দিনগুলোতে ঋতুপর্ণা, আফঈদাদের নিয়ে কি পরিকল্পনা। লাওস থেকে ছুটি নিয়ে ইংল্যান্ড যাওয়ার আগে সে সবই জানালেন এই বৃটিশ কোচ।
প্রশ্ন: মিয়ানমারে জাতীয় দলকে এশিয়ান কাপের চূড়ান্ত পর্বে তোলার পর এবার বয়সভিত্তিক দলকেও এশিয়া কাপে তুলেছেন। কেমন লাগছে?
পিটার বাটলার : আমার মনে হয় পেছনে ফিরে তাকালে এবং সবকিছুর প্রেক্ষাপট বিবেচনা করলে, সত্যিই সত্যিই মেয়েদের জন্য গর্বিত। আপনি জানেন আমরা ঠিক পথেই আছি।
প্রশ্ন: দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে দারুণ শুরুর পরও ৬ গোল হজম। এটাকে কিভাবে দেখছেন?
বাটলার : এটা সত্যি দ্বিতীয়ার্ধে আমরা আত্মসমর্পণের মতো শেষ করেছি। আমি জানতাম মেয়েরা ম্যাচের অর্ধেক সময় পার করে ফেলেছে। কিন্তু তাদের দম শেষ হয়ে গিয়েছিল। তাছাড়া দলে কিছু মেয়ের জ্বর হয়েছিল, চোট ছিল অনেকের। আরও সমস্যা ছিল। কিন্তু তারা যেভাবে খেলেছে, কোরিয়ার মতো দলের সঙ্গে যেভাবে চোখে চোখ রেখে লড়াই করেছে, ওদের ম্যাচে টিকে থাকাটাকে আমি প্রশংসা করি।
প্রশ্ন : কোরিয়ার বিপক্ষে ম্যাচটি থেকে নিশ্চয় মেয়েরা শিখেছে।
বাটলার: ঠিকই বলেছেন। আপনি কেবল একটি ম্যাচ খেলেই এশিয়ান কাপের চূড়ান্ত পর্বের জন্য যোগ্যতা অর্জন করতে পারবেন না। এখানে তিন-চারটি ম্যাচ খেলতে হবে। সেখানে আমরা যা অর্জন করতে চেয়েছিলাম তা অর্জন করেছি। শুধু শেষটাই ভালো হলো না। কিন্তু বিশ্বের অনূর্ধ্ব-২০ মহিলা ফুটবলের সম্ভবত সেরা দলের একটির বিপক্ষে খেলেছে মেয়েরা। ওদের জন্য এটা একটা দুর্দান্ত শিক্ষা ছিল। আমরা যতটা সময় খেলেছি, ওদের সঙ্গে সমান তালে খেলেছি।
প্রশ্ন : চাইলে তো আপনি দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে ড্রও করতে পারতেন?
বাটলার : অবশ্যই। আমরা চাইলে ম্যাচটি ড্র করতে অন্য পথে হাটতে পারতাম। অতি রক্ষণাত্মক হয়ে খেলতে পারতাম। আমাদের টুর্নামেন্টে নিজেদের টিকিয়ে রাখার জন্যই ওটা করতে পারতাম। কিন্তু আমি এই দর্শনের সঙ্গে একমত নই। আমি ওভাবে কাজ করি না। কিন্তু হ্যাঁ, সামগ্রিকভাবে আমি আনন্দিত এবং মেয়েদের জন্য সত্যিই গর্বিত। আমি অবশ্যই আনন্দিত কিন্তু এটা সাপ লুডু এবং মইয়ের মতো। কখনও আপনি সাপের মুখে পড়তে পারেন। আবার কখনও মই বেয়ে তরতরিয়ে ওপরে উঠতে পারেন। এবং এটাও সত্যি যা উপরে যায় তা কখনও কখনও নিচেও নেমে আসে।
প্রশ্ন: বাংলাদেশ ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে সর্বোচ্চ ২৪ ধাপ এগিয়েছে। এই বিষয়টিকে কিভাবে দেখছেন?
বাটলার : এখানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো আমরা যেটা অর্জন করেছি। সংযুক্ত আরব আমিরাত সফরের দিকে ফিরে তাকালে, আমার মনে হয় এটি গত বছর চাইনিজ তাইপে থেকে শুরু হয়েছিল। আমি সত্যিই বিশ্বাস করি যে ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে আমাদের উত্থান আসলেই বাস্তবায়িত হয়েছে। কারণ একটি প্রতিযোগিতামূলক এবং আরও স্বাস্থ্যকর কর্মপরিবেশ তৈরি করার ক্ষমতা আমাদের আছে এবং মেয়েরা অত্যন্ত ভালো করেছে।
প্রশ্ন: তাহলে আপনার পরবর্তী লক্ষ্য কি?
বাটলার: মেয়েরা যা অর্জন করেছে, স্বীকৃতি, প্রশংসা সবই তাদের প্রাপ্য। এখন আমরা আছি ১০৪তম স্থানে। আমি মনে করি, (র্যাঙ্কিং) এটি খুব দ্রুত নেমে আসতে পারে, খুব দ্রুত উপরেও উঠতে পারে। তাই আমাদের বাস্তববাদী হতে হবে এবং আবারও চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। অধ্যাবসায়ের সঙ্গে চেষ্টা করতে হবে যাতে ফিফা র্যাঙ্কিং ধরে রাখা যায় এবং এটিকে ১০০-এর নিচে নামিয়ে আনা যায়।
প্রশ্ন: আপনাকে ধন্যবাদ।
বাটলার: আপনাকেও ধন্যবাদ।