Beta
বুধবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
Beta
বুধবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

রেমিটেন্স : একদিনেই এল ১৯ কোটি ডলারের বেশি

ডলার
[publishpress_authors_box]

নতুন অর্থ বছরের দ্বিতীয় মাস আগস্টেও প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সের ইতিবাচক ধারা অব্যাহত রয়েছে; সদ্য শেষ হওয়া এই মাসে ২৪২ কোটি ২০ লাখ (২.৪২ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।

এই অঙ্ক গত বছরের আগস্টের চেয়ে ৮ দশমিক ৯০ শতাংশ বেশি। ২০২৪ সালের আগস্টে ২২২ কোটি ৪১ লাখ (২.২২ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা।

বাংলাদেশ ব্যাংক রবিবার সাপ্তাহিক যে তথ্য প্রকাশ করেছিল, তাতে দেখা যায়, ২০২৫-২৬ অর্থ বছরের দ্বিতীয় মাস আগস্টের প্রথম ৩০ দিনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানরত বাংলাদেশিরা ব্যাংকিং চ্যানলে ২২২ কোটি ৯০ লাখ (২.২৩ বিলিয়ন) ডলার দেশে পাঠিয়েছেন।

সোমবার পুরো মাসের তথ্য প্রকাশ করা হয়। তাতে দেখা যায়, এই মাসে ২৪২ কোটি ২০ লাখ (২.৪২ বিলিয়ন) ডলার এসেছে দেশে। এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, আগস্ট মাসের শেষ দিন রবিবার (৩১ আগস্ট) ১৯ কোটি ৩০ লাখ ডলার পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।

রেমিটেন্সে প্রতি ডলারে এখন ১২২ টাকার মতো দিচ্ছে ব্যাংকগুলো। সে হিসাবে টাকার অঙ্কে আগস্টের শেষ দিন রবিবার একদিনেই ২ হাজার ৩৫৫ কোটি টাকা দেশে এসেছে। এর আগে কখনোই একদিনে এত বেশি রেমিটেন্স আসার তথ্য পাওয়া যায়নি।

সব মিলিয়ে পুরো মাসে ২৯ হাজার ৫৪৮ কোটি টাকা পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। প্রতিদিনের গড় হিসাবে এসেছে ৭ কোটি ৮১ লাখ ডলার; টাকার অঙ্কে যা ৯৫৩ কোটি টাকা।

অর্থ বছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে এসেছিল ২৪৭ কোটি ৭৯ লাখ (২.৪৮ বিলিয়ন) ডলার।

এ হিসাবে চলতি অর্থ বছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই-আগস্ট) ৪৯০ কোটি (৪.৯০ বিলিয়ন) রেমিটেন্স এসেছে দেশে, যা গত ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের জুলাই-আগস্টের চেয়ে ১৮ দশমিক ৪০ শতাংশ বেশি।

২০২৪-২৫ অর্থ বছরের জুলাই-আগস্ট সময়ে ৪ দশমিক ১৩ বিলিয়ন ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা।

দেশের অর্থনীতির প্রধান সূচকগুলোর মধ্যে এ মুহূর্তে সবচেয়ে ভালো অবস্থানে আছে রেমিটেন্স বা প্রবাসী আয়। বলা যায়, সঙ্কটে পড়া বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকা ঘুরিয়ে যাচ্ছে রেমিটেন্স।

অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে ৩০ জুন শেষ হওয়া ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে ৩ হাজার ৩২ কোটি ৭৫ লাখ (৩০.৩৩ বিলিয়ন) ডলার দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা, যা ছিল আগের অর্থ বছরের (২০২৩-২৪) চেয়ে ২৬ দশমিক ৮৩ শতাংশ বেশি।

প্রতি মাসের গড় হিসাবে এসেছিল ২৫১ কোটি ৯৮ লাখ (২.৫২ বিলিয়ন) ডলার।

রোজা ও ঈদ সামনে রেখে গত মার্চে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে ৩২৯ কোটি ৫৬ লাখ (৩.২৯ বিলিয়ন) ডলার রেমিটেন্স আসে দেশে, যা ছিল গত বছরের মার্চ মাসের চেয়ে ৬৫ শতাংশ বেশি।

দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৯৬ কোটি ৯৬ লাখ (২.৯৭ বিলিয়ন) ডলার আসে গত মে মাসে। তৃতীয় সর্বোচ্চ আসে গত অর্থ বছরের শেষ মাস জুনে, ২৮২ কোটি ১২ লাখ (২.৮২ বিলিয়ন) ডলার।

চতুর্থ সর্বোচ্চ আসে এপ্রিল মাসে, ২৭৫ কোটি ১৯ লাখ (২.৭৫ বিলিয়ন) ডলার।

২০২৩-২৪ অর্থ বছরে ২ হাজার ৩৯১ কোটি ২২ লাখ (২৩.৯১ বিলিয়ন) ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। ২০২২-২৩ অর্থ বছরে এসেছিল ২২ দশমিক ৬১ বিলিয়ন ডলার। ২০২১-২২ অর্থ বছরে এসেছিল ২১ দশমিক শূন্য তিন বিলিয়ন ডলার।

২০২০-২১ অর্থ বছরে আসে ২৪ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলার। ২০১৯-২০ অর্থ বছরে এসেছিল ১৮ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলার।

রিজার্ভ নিয়ে আর উদ্বেগ নেই

রেমিটেন্সের ওপর ভর করে বেশ কিছুদিন ধরে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে থাকা অর্থনীতির আরেক গুরুত্বপূর্ণ সূচক বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভও সন্তোষজনক অবস্থায় অবস্থান করছে।

গ্রস বা মোট হিসাবে রিজার্ভ ফের ৩১ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। আর বিপিএম-৬ হিসাবে ছাড়িয়েছে ২৬ বিলিয়ন ডলার।

গত সপ্তাহের প্রথম দিন রবিবার (২৪ আগস্ট) বাংলাদেশের গ্রস রিজার্ভ ছিল ৩০ দশমিক ৮৬ বিলিয়ন ডলার; বিপিএম-৬ হিসাবে ছিল ২৫ দশমিক ৮৭ বিলিয়ন ডলার।

সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার (২৮ আগস্ট) গ্রস হিসাবে রিজার্ভ বেড়ে ৩১ দশমিক ১৯ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়ায়; বিপিএম-৬ হিসাবে ছিল ২৬ দশমিক ১৯ বিলিয়ন ডলার।

বাংলাদেশ ব্যাংক বিপিএম-৬ হিসাবের রিজার্ভকে তাৎক্ষণিক ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ হিসেবে দাবি করে।

সবশেষ গত জুন মাসের আমদানির তথ্য প্রকাশ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তাতে দেখা যায়, ওই মাসে পণ্য আমদানিতে বাংলাদেশের ৪ দশমিক ৩৯ বিলিয়ন ডলার খরচ হয়েছে।

সে হিসাবে বর্তমানের ২৬ দশমিক ১৯ বিলিয়ন ডলার তাৎক্ষণিক ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ দিয়ে ছয় মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব হবে।

আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী, একটি দেশের কাছে অন্তত তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সমপরিমাণ বিদেশি মুদ্রা মজুদ থাকতে হয়।

গত ৮ জুলাই বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভ থেকে আকুর মে-জুন মেয়াদের ২ দশমিক শূন্য ২ বিলিয়ন ডলার আমদানি বিল পরিশোধ করে। এরপর বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ ২৪ দশমিক ৪৫ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে। গ্রস হিসাবে নামে ২৯ দশমিক ৫২ বিলিয়ন ডলারে।

আকুর দেনা শোধের আগে বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ ২৬ দশমিক ৬৮ বিলিয়ন ডলারে উঠেছিল। আর গ্রস হিসাবে ছিল ৩১ দশমিক ৭১ বিলিয়ন ডলার।

সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে আকুর জুলাই-আগস্ট মেয়াদের আমদানি বিল পরিশোধ করতে হবে; তখন অবশ্য রিজার্ভ বেশ খানিকটা কমে আসবে।

আকু হলো এশিয়ার কয়েকটি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মধ্যকার একটি আন্তঃআঞ্চলিক লেনদেন নিষ্পত্তি ব্যবস্থা। এর মাধ্যমে এশিয়ার নয়টি দেশের মধ্যে যেসব আমদানি-রপ্তানি হয়, তার মূল্য প্রতি দুই মাস পরপর নিষ্পত্তি করা হয়।

আকুর সদস্য দেশগুলো হচ্ছে বাংলাদেশ, ভারত, ইরান, নেপাল, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার, ভুটান ও মালদ্বীপ। এর মধ্যে ভারত পরিশোধ করা অর্থের তুলনায় অন্য দেশগুলো থেকে বেশি পরিমাণে ডলার আয় করে। অন্যদিকে বেশিরভাগ দেশকেই আয়ের তুলনায় আমদানি ব্যয় হিসাবে অতিরিক্ত ডলার খরচ করতে হয়।

ব্যাংকগুলো আমদানির খরচ নিয়মিত কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা দেয়, যা রিজার্ভে যোগ হয়। তবে ওই দায় দুই মাস পরপর রিজার্ভ থেকে পরিশোধ করে দেওয়া হয়।

ডলারের দাম ধরে রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে নিলামে ডলার কেনার কারণেও রিজার্ভ বাড়ছে বলে জনিয়েছেন ব্যাংকাররা। গত দেড় মাসে ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে ১ বিলিয়ন (১০০ কোটি) ডলার কিনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

অর্থনীতির সামর্থ্য প্রকাশের গুরুত্বপূর্ণ সূচক রিজার্ভ নিয়ে বাংলাদেশে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা চলছে আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ সময় থেকেই। অভ্যুত্থানের পর গত বছর অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিলেও উদ্বেগ কাটছিল না।

রেমিটেন্স ছাড়াও রপ্তানি আয় এবং বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ ও এডিবিসহ অন্যান্য দাতা সংস্থার বাজেট সহায়তার ঋণে রিজার্ভ স্বস্তিকর জায়গায় এসেছে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা।

রেমিটেন্সের উচ্চ প্রবৃদ্ধি, রপ্তানি আয় বৃদ্ধি এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার ঋণের কারণে গত জুন শেষে গ্রস রিজার্ভ বেড়ে ৩১ দশমিক ৭২ বিলিয়ন ডলার হয়, ২৮ মাসের মধ্যে যা ছিল সর্বোচ্চ।

এর আগে ২০২৩ সালের মার্চের শুরুতে রিজার্ভ ৩২ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমেছিল। গত জুন শেষে বিপিএম-৬ অনুযায়ী রিজার্ভ ওঠে ২৬ দশমিক ৬৯ বিলিয়ন ডলারে।

২০২৩ সালের জুন থেকে আইএমএফের শর্ত মেনে বিপিএম৬ অনুযায়ী হিসাব প্রকাশ করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ওই সময় রিজার্ভ ছিল ২৪ দশমিক ৭৫ বিলিয়ন ডলার।

বাংলাদেশের ইতিহাসে ২০২১ সালের আগস্টে প্রথমবারের মতো রিজার্ভ (তখন বিপিএম-৬ হিসাবে প্রকাশ করা হতো না) ৪৮ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করে। সেখান থেকে ধারাবাহিকভাবে কমে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের আগে গত জুলাই শেষে ২০ দশমিক ৪৮ বিলিয়ন ডলারে নেমেছিল।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত