Beta
সোমবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
Beta
সোমবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

আফগানিস্তানে শক্তিশালী ভূমিকম্প, নিহত ২ শতাধিক

Afgan
[publishpress_authors_box]

আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চলে ৬ মাত্রার ভূমিকম্পে দুই শতাধিক মানুষ নিহত এবং কয়েকশ আহত হয়েছে। 

দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম বাখতার নিউজ এজেন্সি (বিএনএ) জানিয়েছে, পাকিস্তান সীমান্তের কাছাকাছি পার্বত্য অঞ্চলের কয়েকটি জেলায় উদ্ধারকর্মীদের পাঠানো হয়েছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।

ভূমিকম্পের কারণে দুর্গম গ্রামীণ এলাকায় ত্রাণ নিয়ে যাওয়া দলগুলোকে বেশ হিমশিম খেতে হচ্ছে। মূলত ভূমিধসের কারণে তাদের অগ্রগতি ব্যাহত হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্র ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস) জানিয়েছে, রবিবার মধ্যরাতের ভূমিকম্পটির উৎসস্থল নাঙ্গারহার প্রদেশের প্রায় দুই লাখ মানুষের শহর জালালাবাদের উত্তর-পূর্বে ২৭ কিলোমিটার দূরে এবং ভূ-পৃষ্ঠের ৮ কিলোমিটার গভীরে।

সোমবার স্থানীয় কর্মকর্তারা জানান, কেবল উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় কুনার প্রদেশেই অন্তত ২৫০ জন নিহত এবং ৫০০ জনের বেশি আহত হয়েছে।

কুনার প্রদেশের প্রায় ৯০ শতাংশ এলাকা পাহাড়ি। ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় যাওয়ার সড়কগুলো খুবই সরু। এর মধ্যে অনেকগুলো ভূমিধসে সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে উদ্ধার কার্যক্রম জটিল হয়ে উঠেছে। বর্তমানে জীবিতদের কাছে পৌঁছানোর একমাত্র উপায় হলো হেলিকপ্টার।

২০২২ সালের ভূমিকম্পেও একই ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়েছিল। তখন প্রায় এক হাজার মানুষ নিহত হয়েছিলেন। দুর্গম গ্রামগুলোতে অনুসন্ধান ও উদ্ধারকাজ ভূমিধসের কারণে ব্যাহত হয়েছিল।

রয়টার্সকে দেওয়া এক বিবৃতিতে আফগানিস্তানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র শরাফত জামান বলেন, “ক্ষয়ক্ষতির সংখ্যা অনেক বেশি। তবে এলাকাটি দুর্গম হওয়ায় আমাদের দল এখনও সেখানে কাজ চালাচ্ছে।”

তালেবান সরকারের সর্বশেষ আপডেট অনুযায়ী, আহতদের নানগারহার বিমানবন্দরে পৌঁছে দিতে হেলিকপ্টার মোতায়েন করা হয়েছে। বিমানবন্দর থেকে অ্যাম্বুলেন্সের মাধ্যমে আহতদের আঞ্চলিক হাসপাতালগুলোতে নেওয়া হচ্ছে চিকিৎসার জন্য। সরকার জানিয়েছে, দুর্যোগ মোকাবিলায় সব বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তাকে কাজে সম্পৃক্ত করা হয়েছে।

ইউএসজিএস-এর তথ্য মতে, প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ শক্তিশালী বা অত্যন্ত শক্তিশালী কম্পন অনুভব করেছেন। এটি নিম্নমানের ভবনগুলোতে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির কারণ হতে পারে।

কাবুলের ৪১ বছর বয়সী বাসিন্দা আহমদ জামির সিএনএনকে বলেন, ভূমিকম্প এতটাই প্রবল ছিল যে ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল থেকে ১০০ মাইলেরও বেশি দূরে রাজধানী থেকেও এটি অনুভূত হয়েছে। তিনি জানান, আশপাশের বহুতল ভবনের সবাই আতঙ্কে রাস্তায় নেমে আসে ভেতরে আটকে পড়ার ভয়ে।

তালেবান মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ সোশাল মিডিয়া এক্সে লিখেছেন, “দুর্ভাগ্যবশত, আজ রাতের ভূমিকম্পে আমাদের পূর্বাঞ্চলীয় কিছু প্রদেশে প্রাণহানি ও আর্থিক ক্ষতি হয়েছে।”

তিনি আরও বলেন, “বর্তমানে স্থানীয় প্রশাসন ও বাসিন্দারা উদ্ধারকাজে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছেন। রাজধানী ও আশপাশের প্রদেশ থেকেও সহায়তা দল রওনা দিয়েছে। জনগণের উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রমে সব ধরনের সম্পদ ব্যবহার করা হবে।”

পাকিস্তানের আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, ভূমিকম্পটি খাইবার পাখতুনখাওয়া ও পাঞ্জাব প্রদেশের বিভিন্ন শহরেও অনুভূত হয়েছে।

ইউএসজিএস জানিয়েছে, মূল ভূমিকম্পের পর ওই অঞ্চল অন্তত পাঁচটি আফটারশকে কেঁপে ওঠে। এর মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী ছিল ৫ দশমিক ২ মাত্রার।

ইউএসজিএসের পেজার সিস্টেম ভূমিকম্পের পর অর্থনৈতিক ও মানবিক ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা অনুমান করে। এতে “কমলা সতর্কতা” জারি করা হয়েছে। সতর্কতায় বলা হয়েছে, “বড় ধরনের প্রাণহানি ঘটতে পারে এবং দুর্যোগের প্রভাব ব্যাপক হতে পারে।”

আফগানিস্তানে ভূমিকম্পের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। দেশটির পাকিস্তান সীমান্তবর্তী হিন্দুকুশ পার্বত্য অঞ্চলে নিয়মিতভাবে ভূমিকম্প হয়। ২০২৩ সালের অক্টোবরে পশ্চিম আফগানিস্তানে ৬ দশমিক ৩ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্পে দুই হাজারেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়। সেটি ছিল সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে সবচেয়ে প্রাণঘাতী ভূমিকম্পগুলোর একটি।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত