যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কের জন এফ কেনেডি বিমানবন্দরের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও দুঃখ প্রকাশ করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে এ ধরনের ঘটনায় যথাযথ আইনি ও কূটনৈতিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানিয়েছে সরকার।
গত বছর ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস দ্বিতীয়বারের মতো সরকার প্রধান হিসাবে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে নিউ ইয়র্ক গেছেন। এবার তিনি সফরসঙ্গী করেন বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী এবং অভ্যুত্থানকারীদের গড়া দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কয়েকজন নেতাকে।
সোমবার বিকালে জন এফ কেনেডি বিমানবন্দরের পৌঁছনোর পর ডিপ্লোমেটিক পাসপোর্টধারী ড. ইউনূস অন্য পথ দিয়ে বের হলেও সাধারণ পাসপোর্টধারী বিএনপি নেতা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, এনিসিপি নেতা আখতার হোসেনসহ অন্যরা বিমানবন্দর থেকে বের হওয়ার সময় পড়েন আওয়ামী লীগ সমর্থকদের তোপের মুখে।
এ সময় জুলাই অভ্যুত্থানের অন্যতম নেতা আখতার হোসেনকে লক্ষ্য করে ডিম ছোড়া হয়। ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে একদল ব্যক্তিকে এই কাণ্ড ঘটাতে দেখা গেছে সোশাল মিডিয়ায় আসা বিভিন্ন ভিডিওতে।
সরকারের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে এসে সোমবার নিউ ইয়র্কের জন এফ কেনেডি বিমানবন্দরে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্য সচিব আখতার হোসেন এবং যুগ্ম সদস্য সচিব তাসনিম জারাসহ রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের ওপর উদ্দেশ্যমূলক হামলার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও দুঃখ প্রকাশ করছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
“ক্ষমতাচ্যুত স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার সহযোগী এবং সমর্থকরা এই হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।”
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বলছে, “এই নিন্দনীয় ঘটনার মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনার শাসনামলে গড়ে ওঠা বিধ্বংসী ও সহিংস রাজনৈতিক সংস্কৃতির এক স্পষ্ট ও মর্মান্তিক চিত্র প্রকাশ পেয়েছে। এই বিধ্বংসী রাজনৈতিক সংস্কৃতির অবসান ঘটিয়ে একটি শান্তিপূর্ণ, গণতান্ত্রিক এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দৃঢ় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “প্রধান উপদেষ্টা এবং তার সঙ্গে থাকা রাজনৈতিক নেতাদের সফরের সময় সম্ভাব্য নিরাপত্তা ঝুঁকির আশঙ্কায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিভিন্ন পর্যায়ে একাধিক সতর্কতামূলক নিরাপত্তা ব্যবস্থা সমন্বয় করেছিল। জন এফ কেনেডি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পর প্রতিনিধিদলটিকে প্রথমে একটি নির্দিষ্ট ভিভিআইপি গেট দিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল এবং একটি বিশেষভাবে সুরক্ষিত পরিবহন ইউনিটে ওঠানো হয়েছিল। তবে, অপ্রত্যাশিত এবং শেষ মুহূর্তের ভিসা-সম্পর্কিত জটিলতার কারণে প্রতিনিধিদলটিকে পথ পরিবর্তন করে বিকল্প প্রস্থানের জন্য অগ্রসর হতে হয়।
“বিমানবন্দরে রাজনৈতিক নেতাদের জন্য ভিভিআইপি প্রবেশাধিকার এবং নিরাপত্তা সুবিধা দেওয়ার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে আনুষ্ঠানিক অনুরোধ করা সত্ত্বেও বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ দুঃখজনকভাবে সেই অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করে। এর ফলে প্রতিনিধিদলের সদস্যরা ঝুঁকির মুখে পড়েন।”
ঘটনার পরপরই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নিউ ইয়র্কে বাংলাদেশ মিশনের মাধ্যমে দ্রুত এবং আইনানুগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে নিউ ইয়র্ক পুলিশ ডিপার্টমেন্টের সঙ্গে যোগাযোগ করে- একথা জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “আমাদের জানানো হয়েছে যে ইতোমধ্যেই একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং বর্তমানে ঘটনাটির আনুষ্ঠানিক তদন্ত চলমান।”
এই ঘটনার পর প্রধান উপদেষ্টা এবং প্রতিনিধিদলের সব সদস্যের নিরাপত্তা ব্যবস্থা উল্লেখযোগ্যভাবে জোরদার করা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে বিবৃতিতে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বিদেশে তার প্রতিনিধিদের নিরাপত্তা ও মর্যাদা নিশ্চিতে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ও স্থানীয় আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সাথে সার্বক্ষণিক ঘনিষ্ঠ এবং অবিচ্ছিন্ন সমন্বয় রাখছে।
“আমরা দেশের অভ্যন্তরে এবং আন্তর্জাতিকভাবে গণতান্ত্রিক নীতি ও আইনের শাসন সমুন্নত রাখার প্রতি আমাদের অটল অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করছি। রাজনৈতিক সহিংসতা এবং ভীতি প্রদর্শনের ঘটনা, তা বাংলাদেশের ভেতরে হোক বা এর সীমানার বাইরে হোক, কোনোভাবেই সহ্য করা হবে না। এ ধরনের ঘটনায় যথাযথ আইনি ও কূটনৈতিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”