দেশের বাজারে সোনার দামে ওঠানামা চলছেই; এই বাড়ছে তো, ওই কমছে। টানা পাঁচ দিন মূল্যবান এই ধাতুর দর সমন্বয় করেছে স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস)। এর মধ্যে চার দিন কমেছে; বেড়েছে একদিন।
২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে বৃহস্পতিবার রাতে সবচেয়ে ভালো মানের (২২ ক্যারেট) সোনার দাম ভরিতে ২ হাজার ৬১৩ টাকা কমানোর ঘোষণা দিয়েছে বাজুস। আর তাতে ভরি ২ লাখ ৯৬ টাকায় নেমে এসেছে।
শুক্রবার থেকে এই দরে বিক্রি হবে সোনা। অন্যান্য মানে সোনার দরও একই হারে কমানো হয়েছে।
বুধবার রাতে ২২ ক্যারেট সোনার দাম এক লাফে ভরিতে ৮ হাজার ৯০০ টাকা বাড়িয়েছিল বাজুস; ভরি বেড়ে ফের ২ লাখ টাকা ছাড়িয়ে ২ লাখ ২ হাজার ৭০৯ টাকায় ওঠে। বৃহস্পতিবার সারা দেশে এই দরে বিক্রি হয় সোনার গহনা বা অলংকার।
রেকর্ডের পর রেকর্ড গড়ে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে ২০ অক্টোবর দেশের বাজারে ২২ ক্যারেট মানের সোনার ভরি ২ লাখ ১৭ হাজার ৩৮২ টাকায় উঠেছিল। এর আগে কখনই সোনার দর অত উচ্চতায় ওঠেনি।
এর পর চার দফায় সাড়ে ২৩ হাজার টাকা কমে ভরি ১ লাখ ৯৩ হাজার ৮০৯ টাকায় নেমে এসেছিল।
মঙ্গলবার রাতে ২২ ক্যারেট মানের সোনার দাম ভরিতে ১০ হাজার ৪৭৪ টাকা কমানোর ঘোষণা দেয় বাজুস। এর আগে দেশে কখনই একবারে সোনার দাম এতটা কমানো হয়নি। আর তাতেই এক ধাক্কায় ভরি নেমেছিল ১ লাখ ৯৩ হাজার ৮০৯ টাকায়। বুধবার দেশে এই দরে বিক্রি হয় সোনা।
এর আগে পর পর দুই দিন সোম ও মঙ্গলবারও সোনার দাম কমানো হয়। এই তিন দিনে ভরিতে কমে ১৫ হাজার ১৮৬ টাকা। তর আগে ২২ অক্টোবর কমানো হয় ৮ হাজার ৩৮৬ টাকা।
সব মিলিয়ে ছয় দিনের ব্যবধানে চার দফায় কমেছিল ২৩ হাজার ৫৭২ টাকা।
ইতিহাস গড়ে ২০ অক্টোবর দেশের বাজারে ২২ ক্যারেট মানের সোনার ভরি ২ লাখ ১৭ হাজার ৩৮২ টাকায় উঠেছিল।
দুই দিন পর ২২ অক্টোবর এক ধাক্কায় এই মানের সোনার দর ভরিতে ৮ হাজার ৩৮৬ টাকা কমায় বাজুস; ভরি নামে ২ লাখ ৮ হাজার ৯৯৫ টাকায়। ২৩ অক্টোবর থেকে এই দরে বিক্রি হয় সোনা।
তিন দিনের মাথায় চলতি সপ্তাহের প্রথম দিন রবিবার (২৬ অক্টোবর) এই সোনার দাম ভরিতে আরও এক হাজার ৩৮ টাকা কমানো হয়; ভরি নামে ২ লাখ ৭ হাজার ৯৫৮ টাকায়। সোমবার (২৭ অক্টোবর) এই দরে বিক্রি হয়। ওইদিন রাতে আরও ৩ হাজার ৬৭৪ টাকা কমানো হয়; ভরি নামে ২ লাখ ৪ হাজার ২৮৩ টাকায়। মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) সারা দেশে এই দরে বিক্রি হয়।
২৪ ঘণ্টা না যেতেই আরেক দফা কমানো হয়। এ দফায় কমানো হয় ভরিতে ১০ হাজার ৪৭৪ টাকা। আর এতেই ভরি ২ লাখ টাকার নিচে নেমেছিল।
আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ায় দেশের বাজারেও সোনার দাম বাড়িয়েছিল বাজুস। আগস্টের মাঝমাঝি সময় থেকে বিশ্ববাজারে সোনার দাম বাড়া শুরু হয়। তার সঙ্গে সমন্বয় করে দেশের বাজারেও দাম বাড়িয়ে চলে বাজুস। এই আড়াই মাসে দু-এক বার ছাড়া প্রতিবারই দাম বাড়ানো হয়।
বাজুসের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, সেপ্টেম্বর মাস জুড়ে অস্থির ছিল দেশের সোনার বাজার। পুরো মাসে মোট ১২ বার দাম সমন্বয় করা হয়। এর মধ্যে ১০ বারই বাড়ানো হয়, কমে মাত্র দুইবার।
সেপ্টেম্বর মাসে ২২ ক্যারেট মানের প্রতিভরি সোনার দাম বাড়ে ২১ হাজার ৬৬ টাকা।
সেই উল্লম্ফন মধ্য অক্টোবর পর্যন্ত চলে। এই মাসে টানা সাত দফায় ২২ ক্যারেট মানের সোনর দাম ভরিতে ২১ হাজার ৯৯৭ টাকা বেড়েছিল।
২২ অক্টোবর থেকে নামতে থাকে সোনার দর। ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত কমে। ২৯ অক্টোবর ফের বাড়ে। ৩০ অক্টোবর (বৃহস্পতিবার) আবার কমানোর ঘোষণা দিয়েছে বাজুস।
চলতি বছর (২০২৫ সাল) এখন পর্যন্ত মোট ৭২ বার সোনার দাম সমন্বয় করেছে বাজুস। এর মধ্যে ৪৯ বার বেড়েছে, আর কমেছে ২৩ বার।
গত বছর (২০২৪ সাল) পুরো সময়ে দাম সমন্বয় হয়েছিল ৬২ বার।
গত ২০ আগস্ট থেকে বিশ্ববাজারে সোনার দাম টানা বাড়ছিল। সেই দামের সঙ্গে সমন্বয় করে বাজুসও দেশের বাজারে এই ধাতুর দাম বাড়িয়ে চলেছে। মাঝে দুই দিন নিম্মমুখী হওয়ায় দেশের বাজারেও কিছুটা কমানো হয়।
বাজুস সাধারণত রাত সাড়ে ৮টা থেকে ৯টার দিকে সোনার দাম বাড়ানো-কমানোর ঘোষণা দিয়ে থাকে। পরের দিন থেকে সারা দেশে সেই দরে সোনা বিক্রি হয়।
তবে মাঝে-মধ্যে দিনে দুই বারও সোনার দাম বাড়ানো-কমানোর ঘোষণা দিয়ে থাকে সংগঠনটি।
বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে সোনার দাম কমানোর ঘোষণা দেয় বাজুস। দাম কমানোর ব্যাখ্যায় সংগঠনটির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, স্থানীয় বাজারে তেজাবি স্বর্ণের (পিওর গোল্ড) মূল্য হ্রাস পেয়েছে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে সোনার নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে।
বাজুসের নতুন ঘোষণা অনুযায়ী, শুক্রবার থেকে দেশের বাজারে হলমার্ক করা এক গ্রাম ২২ ক্যারেট মানের সোনা ১৭ হাজার ১৫৫ টাকায় বিক্রি হবে। ১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রামে এক ভরি হিসাবে প্রতিভরি বিক্রি হবে ২ লাখ ৯৬ টাকায়। ২১ ক্যারেটের এক ভরি কিনতে লাগবে ১ লাখ ৯০ হাজার ৯৯৮ টাকা।
১৮ ক্যারেটের ১ লাখ ৬৩ হাজার ৭১৬ টাকায় এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতিভরি সোনা ১ লাখ ৩৬ হাজার ১৪ টাকায় বিক্রি হবে।
বৃহস্পতিবার দেশের বাজারে ২২ ক্যারেট মানের প্রতিভরি সোনা ২ লাখ ২ হাজার ৭০৯ টাকায় বিক্রি হয়। ২১ ক্যারেটের বিক্রি হয় ১ লাখ ৯৩ হাজার ৫০৬ টাকায়।
এছাড়া ১৮ ক্যারেটের ১ লাখ ৬৫ হাজার ৮৬২ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতিভরি সোনা ১ লাখ ৩৭ হাজার ৮৪৫ টাকায় বিক্রি হয়।
হিসাব বলছে, এক দিনের ব্যবধানে প্রতিভরি ২২ ক্যারেটের সোনার দাম কমছে ২ হাজার ৬১৩ টাকা। ২১ ক্যারেটের কমছে ২ হাজার ৫০৮ টাকা।
এছাড়া ১৮ ক্যারেটে ২ হাজার ১৪৬ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতিভরি সোনার দাম কমছে ১ হাজার ৮৩১ টাকা।
বিশ্ববাজারেও ওঠানামা
বিশ্ববাজারেও সোনার দর ওঠানামা করছে। রেকর্ডের পর রেকর্ড গড়ে গত ২০ অক্টোবর অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে প্রতি আউন্সের (৩১.১০৩৪৭৬৮ গ্রাম) দাম ৪ হাজার ৩৫০ ডলারে উঠেছিল।
সপ্তাহ ধরে তা কমতে কমতে ৪ হাজার ডলারের নিচে নেমে এসেছিল। মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) বাংলাদেশ সময় রাত ১০টায় বিশ্ববাজারে প্রতি অউন্স সোনার দাম ৪১ ডলার ৪৩ সেন্ট কমে ৩ হাজার ৯৬৩ ডলার ৯৫ সেন্টে নেমেছিল। শতাংশ হিসাবে কমেছিল ১ দশমিক শূন্য তিন শতাংশ।
বুধবার (২৯ অক্টোবর) বাংলাদেশ সময় রাত ১০টায় বিশ্ববাজারে প্রতি অউন্স সোনার দাম ২৭ ডলার ২ সেন্ট বেড়ে ৩ হাজার ৯৯৪ ডলার ৪৩ সেন্টে ওঠে। শতাংশ হিসাবে বেড়েছিল দশমিক ৬৮ শতাংশ।
বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১২টায় আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি অউন্স সোনার দাম ছিল ৪ হাজার ১১ ডলার ৩৪ সেন্ট।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত ২ এপ্রিল বিভিন্ন দেশের ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপ করার পর সোনার দাম হু হু করে বাড়ছিল। ২২ এপ্রিল প্রতি আউন্স সোনার দাম ৩ হাজার ৫০০ ডলার ছাড়ায়।
এরপর আন্তর্জাতিক বাজারে সোনার দর ৩ হাজার ৫০০ ডলারের নিচে লেনদেন হচ্ছিল। আগস্টের মাঝামাঝি সময় থেকে বাড়ছিল মূল্যবান এই ধাতুর দর।
এরপর ওঠানামার মধ্য দিয়েই চলছে লেনদেন।
 
				 
											 
				 
				



