আলাস্কায় আগামী শুক্রবার বৈঠকে বসতে যাচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। বিবিসি জানিয়েছে, এ বৈঠকে ইউক্রেন যুদ্ধের ভবিষ্যৎ নিয়ে তাদের মধ্যে আলোচনা হবে।
ট্রাম্পই মূলত সোশাল মিডিয়ায় ১৫ আগস্টের এই বৈঠকের ঘোষণা দিয়েছেন। পরে ক্রেমলিনের এক মুখপাত্র বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, আলাস্কার অবস্থান রাশিয়ার কাছাকাছি হওয়ায় বৈঠকের স্থানটি “যৌক্তিক”।
তবে ইউক্রেন এই ঘোষণার বিষয়ে তাৎক্ষণিক কোনও প্রতিক্রিয়া জানায়নি।
বৈঠকের সময় ঘোষণা দেওয়ার পরেই ট্রাম্প ইঙ্গিত দেন, যুদ্ধ শেষ করতে ইউক্রেনকে হয়তো কিছু ভূখণ্ড ছাড় দিতে হতে পারে। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রার ‘অভিযান’ চালানোর পর থেকে এ যুদ্ধ চলছে।
শুক্রবার হোয়াইট হাউসে ট্রাম্প সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেন, “আপনি এমন একটি ভূখণ্ডের কথা বলছেন, যা নিয়ে তিন বছর ছয় মাস ধরে যুদ্ধ চলছে। অনেক রুশ নাগরিক মারা গেছে। অনেক ইউক্রেনীয়ও প্রাণ হারিয়েছে। বিষয়টি খুব জটিল। কিছু আমরা ফেরত পাব, কিছু বদল হবে। ভূখণ্ড বিনিময় হবে, যা উভয়ের জন্যই ভালো হবে।”
তবে প্রস্তাবটি কেমন হতে পারে, সে বিষয়ে তিনি বিস্তারিত কিছু জানাননি।
তবে যুক্তরাষ্ট্রে বিবিসির অংশীদার সিবিএস নিউজ জানিয়েছে, বিষয়টি সম্পর্কে জানেন এমন সূত্রের মতে, হোয়াইট হাউস ইউরোপীয় নেতাদের এমন একটি চুক্তি মানতে রাজি করানোর চেষ্টা করছে, যাতে রাশিয়া পূর্ব ইউক্রেনের সম্পূর্ণ দনবাস অঞ্চল ও ক্রিমিয়া নিজেদের দখলে রাখবে। এর বিনিময়ে তারা আংশিকভাবে দখল করা খেরসন ও জাপোরিঝঝিয়া অঞ্চল ছেড়ে দেবে।
এর আগে শুক্রবার ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানায়, পুতিন মস্কোয় ট্রাম্পের দূত স্টিভ উইটকফের সঙ্গে বৈঠকে একই ধরনের প্রস্তাব দিয়েছেন।
ইউক্রেন ও ইউরোপীয় মিত্ররা এমন কোনও প্রস্তাবে রাজি হবে কি না, তা এখনও স্পষ্ট নয়। কারণ ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ও পুতিন শান্তিচুক্তির শর্তে একেবারেই ভিন্ন অবস্থানে রয়েছেন। জেলেনস্কি আগেই যে কোনও ধরনের ভূখণ্ড ছাড়ের শর্ত প্রত্যাখ্যান করেছেন।
সিবিএসকে হোয়াইট হাউসের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, শুক্রবারের বৈঠকের প্রস্তুতি এখনও চলমান। জেলেনস্কি কোনোভাবে এতে যুক্ত হতে পারেন।
বলা হচ্ছে, রাশিয়া পূর্ণমাত্রার ‘অভিযানে’ কোনও বড় ধরনের সাফল্য অর্জন করতে পারেনি। তবে তারা ইউক্রেনের প্রায় ২০ শতাংশ ভূখণ্ড দখল করে রেখেছে। অন্যদিকে ইউক্রেনের পাল্টা হামলাগুলোও রুশ বাহিনীকে পিছনে ঠেলে দিতে পারেনি।
ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে ইস্তাম্বুলে হওয়া তিন দফা সরাসরি আলোচনায়ও যুদ্ধ বন্ধের কোনও অগ্রগতি হয়নি। কিয়েভ ও তার মিত্ররা মনে করে, রাশিয়ার সামরিক ও রাজনৈতিক শর্তগুলো আসলে ইউক্রেনের আত্মসমর্পণ।
রাশিয়ার শর্তগুলোর মধ্যে রয়েছে, ইউক্রেনকে নিরপেক্ষ রাষ্ট্রে পরিণত করা, সামরিক বাহিনী উল্লেখযোগ্যভাবে কমানো, ন্যাটোতে যোগদানের আশা ত্যাগ করা ও রাশিয়ার ওপর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া। এছাড়া মস্কো চায়, কিয়েভ দক্ষিণ-পূর্ব ইউক্রেনের চারটি আংশিকভাবে দখল করা অঞ্চল থেকে সেনা প্রত্যাহার করুক এবং সৈন্যদের অবসর দিক।
তবে ট্রাম্প শুক্রবার দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্রের কাছে একটি ত্রিপক্ষীয় শান্তিচুক্তির সুযোগ আছে।
তিনি বলেন, “ইউরোপীয় নেতারা শান্তি চাইছেন, প্রেসিডেন্ট পুতিন শান্তি চাইছেন। জেলেনস্কিও শান্তি চাইছেন বলে আমি মনে করি। প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কিকে তার সব প্রয়োজনীয় জিনিস পেতে হবে। কারণ তাকে প্রস্তুত হতে হবে কিছু সই করার জন্য। আমি মনে করি তিনি এ জন্য কঠোর পরিশ্রম করছেন।”
গত মাসে ট্রাম্প বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জানান, তিনি চারবার মনে করেছিলেন যে রাশিয়ার সঙ্গে ইউক্রেন যুদ্ধের ইতি টানতে চুক্তি হতে পারে। তিনি বলেন, “আমি পুতিনের ওপর হতাশ, কিন্তু তার সঙ্গে আমার সম্পর্ক শেষ হয়নি।”
সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ট্রাম্প ক্রেমলিনের প্রতি কঠোর হয়েছেন। তিনি ৮ আগস্ট শুক্রবার পর্যন্ত সময় দিয়েছেন রাশিয়াকে যুদ্ধবিরতিতে রাজি হওয়ার জন্য। নইলে আরও কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে।
কিন্তু সময়সীমা ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে অর্থনৈতিক হুমকির চেয়ে ট্রাম্প ও পুতিনের সরাসরি বৈঠকের পরিকল্পনাই বেশি গুরুত্ব পায়।
শুক্রবার হোয়াইট হাউস থেকে রাশিয়ার ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞার কোনও ঘোষণা আসেনি।
ফেব্রুয়ারিতে ট্রাম্প ও পুতিন ফোনে কথা বলেন। এটি ছিল রাশিয়ার পূর্ণমাত্রার ‘অভিযানের’ পর তাদের প্রথম সরাসরি আলাপ।
যুক্তরাষ্ট্রের সর্বশেষ কোনও প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন ২০২১ সালে। তখন জো বাইডেন সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় এক শীর্ষ বৈঠকে তার সঙ্গে মিলিত হয়েছিলেন।
তথ্যসূত্র : বিবিসি।