যুদ্ধকালে মন্ত্রিসভায় আরেক দফা পরিবর্তন এনেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি; তাতে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন ইউলিয়া সেভরেদেঙ্কো।
৩৯ বছর বয়সী এই নারী একজন অর্থনীতিবিদ; তিনি এর আগে উপ-প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তিন বছর ধরে রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে যে অর্থনৈতিক চাপ নিতে হচ্ছে ইউক্রেনকে, তা সামাল দিতেই সেভরেদেঙ্কোর ওপর নতুন ভার পড়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
২০২২ সালে যুদ্ধ শুরুর পর জেলেনস্কির সরকারে এটাই সবচেয়ে রদবদল। বৃহস্পতিবার পার্লামেন্ট তা অনুমোদনের পর দেনিস স্মিহালের স্থলাভিষিক্ত হন সেভরেদেঙ্কো।
২০২০ সাল থেকে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করে আসা স্মিহালকে পাঠানো হয়েছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে। যুদ্ধের মধ্যে নানা দুর্নীতির কেলেঙ্কারিতে নাজুক এই দপ্তর।
সেভরেদেঙ্কো উপ-প্রধানমন্ত্রীর পদ ছাড়াও অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও বাণিজ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। সেই সূত্রে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করার অভিজ্ঞত রয়েছে তার।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে জেলেনস্কির সম্পর্কের বরফ কাটাতেও সেভরেদেঙ্কোর ভূমিকা ছিল।
প্রধানমন্ত্রীর পদ পাওয়ার পর সেভরেদেঙ্কো বলেছেন, ইউক্রেনের অভ্যন্তরীণ অস্ত্র উৎপাদন, সশস্ত্র বাহিনীর শক্তি বাড়ানো এবং অর্থনীতিকে গতিশীল করাই তার লক্ষ্য।
“আমার মূল লক্ষ্য হল বাস্তব, ইতিবাচক ফলাফল, যা প্রতিটি ইউক্রেনীয় দৈনন্দিন জীবনে অনুভব করবে। যুদ্ধে দেরির কোনও সুযোগ নেই। আমাদের দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে কাজ করতে হবে।”
জেলেনস্কি স্পষ্ট করেছেন, তার প্রশাসনের এখন অগ্রাধিকার হল সেনাবাহিনীর সমর সরঞ্জামের চাহিদার অন্তত ৫০ শতাংশের জোগান অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে দেওয়া, যা এখন ৪০ শতাংশের মতো।
রদবদলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রি সিবিহা টিকে গেলেও বেশ কয়েকজন মন্ত্রীকে বদলেছেন জেলেনস্কি। তবে সমালোচকরা বলছেন, মন্ত্রীদের মুখ বদলালেও যোগ্যদের চেয়ে অনুগতদেরই প্রাধান্য দিয়েছেন জেলেনস্কি। ফলে কাজে কোনও পরিবর্তন আসবে না।
কে এই সেভরেদেঙ্কো
ইউক্রেনের চেরনিহিভে ১৯৮৫ সালে জন্ম ইউলিয়া সেভরেদেঙ্কোর। ২০০৮ সালে কিয়েভ ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব ট্রেড অ্যান্ড ইকোনমিক্স থেকে ব্যবস্থাপনায় স্নাতক ডিগ্রি নেন তিনি। এরপর তিনি ইউক্রেন-আন্দোরান যৌথ উদ্যোগ জেএসসি এএমপিতে অর্থনীতিবিদ হিসাবে কর্মজীবন শুরু করেন।
২০১১ সালে তিনি চীনের উশি শহরে ইউক্রেনের চেরনিহিভের স্থায়ী প্রতিনিধি হন, যার মধ্যদিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তার সম্পৃক্ততার শুরু। ২০১৮ সালে চেরনিহিভ ওব্লাস্ট রাজ্যের ভারপ্রাপ্ত গভর্নর হিসাবেও দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
২০২০ সালের মে মাসে জেলেনস্কি বিভিন্ন আলোচনায় ইউক্রেনের প্রতিনিধি হিসাবে সেভরেদেঙ্কোকে মনোনীত করেন। ওই বছরের ডিসেম্বরে তিনি প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ের উপ-প্রধান কর্মকর্তা হিসাবে নিয়োগ পান।
২০২১ সালের ৪ নভেম্বর উপ-প্রধানমন্ত্রী এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও বাণিজ্যমন্ত্রী হিসাবে নিযুক্ত সেভরেদেঙ্কো।
তথ্যসূত্র : আল জাজিরা, দ্য মিন্ট