খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা উপজেলায় বুধবার সকালে দুর্বৃত্তদের গুলিতে এক যুবক নিহত ও তার বোন আহত হয়েছে।
পাহাড়ের আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) বলছে, উপজেলার তাইন্দং ইউনিয়নের হেডম্যান পাড়ায় এ ঘটনা ঘটেছে। নিহত সুবি ত্রিপুরা (৩৫) তাদের কর্মী ছিলেন। একই ঘটনায় তার বোন তারাবতী ত্রিপুরার (২০) মাথায় গুলি লেগেছে। তারা হেডম্যান পাড়ার বাসনা ত্রিপুরার সন্তান। তারাবতীর স্বামীর নাম ধন ত্রিপুরা।
এ হত্যাকাণ্ডের জন্য আরেক আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতিকে (জেএসএস) দায়ী করেছে ইউপিডিএফ। অভিযোগের বিষয়ে জেএসএসের কোনও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
এক বিবৃতিতে ইউপিডিএফের খাগড়াছড়ি জেলা সংগঠক অংগ্য মারমা বলেন, শক্তি ত্রিপুরা ও কম্বল ত্রিপুরার নেতৃত্বে জেএসএসের ১৫ জনের একদল সশস্ত্র সন্ত্রাসী সকাল সাড়ে ৭টার দিকে হেডম্যান পাড়ায় সাংগঠনিক কাজে নিয়োজিত ইউপিডিএফ সদস্যদের ওপর হামলা চালায়। ঘটনাস্থলে ইউপিডিএফ সদস্য সুবি ত্রিপুরা নিহত হন। সন্ত্রাসীদের এলোপাতাড়ি গুলিতে সুবি ত্রিপুরার ছোটবোন তারাবতী ত্রিপুরা কপালে জখম হয়ে আহত হয়েছেন।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, “সন্তু গ্রুপের সন্ত্রাসীরা গত রাতে পানছড়ির রূপসেন পাড়া এলাকা থেকে নো ম্যানস ল্যান্ড হয়ে হেডম্যান পাড়ায় এসে ওৎ পেতে থেকে এ হামলা চালায়। হামলার পর সন্ত্রাসীরা তাইন্দংয়ের ভগবান টিলা হয়ে ভারত সীমান্তবর্তী নো ম্যানস ল্যান্ডের দিকে চলে যায়।”
অংগ্য মারমা বলেন, “সন্তু লারমা আঞ্চলিক পরিষদের গদিতে বসে তার পালিত সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের লেলিয়ে দিয়ে হত্যাকাণ্ডে মেতে উঠেছেন। কিন্তু বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার সন্তু লারমার বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ না নিয়ে আঞ্চলিক পরিষদে বহাল রেখেছে।”
বিবৃতিতে অবিলম্বে ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন ইউপিডিএফের খাগড়াছড়ি জেলা সংগঠক অংগ্য মারমা।
খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার মো. আরেফিন জুয়েল সকাল-সন্ধ্যাকে বলেন, “আমরা ঘটনা খবর পেয়েছি। পুলিশ ও বিজিবির যৌথ টিম ঘটনাস্থলের দিকে রওনা করেছে। গোয়েন্দা নজরদারি অব্যাহত রয়েছে।”
এর আগে, গত ১৬ মার্চ রাঙামাটি সদর উপজেলায় নির্মল খীসা (৩২) নামে ইউপিডিএফের এক কর্মীকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ হত্যাকাণ্ডের জন্যও জেএসএস দায়ী করে ইউপিডিএফ। অভিযোগ অস্বীকার করে জেএসএস বলে, ইউপিডিএফের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে এ ঘটনা ঘটতে পারে।
এর আগে গত ১২ মার্চ বিকালে রাঙামাটির বরকল উপজেলার সুবলং ইউনিয়নের রূপবান বাজারে কমল বিকাশ চাকমা নামে জেএসএসের কর্মীকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
আড়াই দশকের বেশি সময় আগে সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন জেএসএস ভেঙে গড়া সংগঠন ইউপিডিএফের সঙ্গে জেএসএসের ‘বন্ধু তুমি, শত্রু তুমি’ মেরুকরণ চলছে দীর্ঘসময় ধরে।
পাহাড়ের রাজনীতির নানা ঘটনাবলির মধ্য দিয়ে কয়েকবার দুই সংগঠনের মধ্যে মিত্রতা দেখা গেছে। সাম্প্রতিক সময়ে বৈরি অবস্থানকে কেন্দ্র করে ফের মুখোমুখি অবস্থানে সংগঠন দুটি।
প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই রাঙামাটি সদর উপজেলার কুতুকছড়ি ও খাগড়াছড়ি-রাঙামাটি সড়ককেন্দ্রিক অবস্থান ধরে রেখেছে ইউপিডিএফ। অন্যদিকে রাঙামাটি শহর এলাকাটি জেএসএস অধ্যুষিত এলাকা হিসেবেই পরিচিত।