Beta
মঙ্গলবার, ৭ অক্টোবর, ২০২৫
Beta
মঙ্গলবার, ৭ অক্টোবর, ২০২৫

জাপানে রপ্তানি বাড়ছে না যে কারণে

ss-garments worker-11-12-23
[publishpress_authors_box]

বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বাজারে পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশ শক্ত অবস্থান তৈরি করলেও আরেক বড় বাজার জাপানে মোটেই ভালো করতে পারছে না। এক থেকে সোয়া বিলিয়নের (১০০ থেকে ১২৫ কোটি) মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে রপ্তানি।

সরকার ও রপ্তানিকারকদের পক্ষ থেকে জাপানে রপ্তানি বাড়াতে কখনোই তেমন কোনও উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। অথচ এই বাজারে বছরে পোশাকের মোট চাহিদা ২৫ বিলিয়নের (২ হাজার ৫০০ কোটি) মতো। এই চাহিদার মাত্র ৫ শতাংশের মতো রপ্তানি করেন বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানিকারকরা।

এমনকি গত মে মাসে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের জাপান সফরের পরও দেশটিতে বাংলাদেশের রপ্তানি বাড়ছে না। অথচ দেশ হিসাবে সবচেয়ে বেশি ঋণ-সহায়তা আসে এই জাপান থেকে।

বিশ্বের অন্যান্য বাজারের মতো জাপানেও পোশাক রপ্তানি বাড়লে বিশ্ব বাণিজ্যে বাংলাদেশ আরও মজবুত অবস্থান তৈরি করতে পারত বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদ ও রপ্তানিকারকরা।

জাপানে বাংলাদেশের রপ্তানি বাড়ছে না কেন- এ প্রশ্নের উত্তরে তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিজিএমইএর সাবেক পরিচালক এবং ডেনিম এক্সপার্টের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “জাপানের মতো দেশে খুব মানসম্পন্ন পণ্যের চাহিদা বেশি। তাই জাপানে পণ্য রপ্তানি বাড়াতে হলে সেই মানের পণ্য উৎপাদন করতে হবে।

“কিন্তু বর্তমানে বাংলাদেশে যে মানের পণ্যের উৎপাদন সক্ষমতা রয়েছে, তা দিয়ে জাপানে পণ্য রপ্তানি বেশি বাড়ানো যাবে না। জাপান যদি কোনও বিশেষ রপ্তানি সুবিধাও দেয়, তবু বাংলাদেশ সেই সুবিধা কাজে লাগাতে পারবে কি না সন্দেহ রয়েছে।

“তাই জাপানে আমাদের রপ্তানি বাড়াতে হলে দেশটির ক্রেতাদের চাহিদার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে মানসম্পন্ন পণ্য রপ্তানি করতে হবে। অর্থাৎ বেশি দমের পোশাক রপ্তানি করতে হবে।”

একই কথা বলেছেন নিট পোশাক শিল্পমালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম।

সকাল সন্ধ্যাকে তিনি বলেন, “জাপানের মানুষ খুবই ফ্যাশন সচেতন। তারা দামের বিষয়টি চিন্তা না করে দ্রুত ফ্যাশন পরিবর্তন করেন। তাদের এই প্রবণতার প্রতি তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রেখে আমাদেরও পোশাক তৈরি করে এই বাজারে রপ্তানি করতে হবে। তাহলেই কেবল আমরা জাপানে আাদের রপ্তানি বাড়াতে পারব।”

বিকেএমইএ সভাপতি বলেন, “জাপানের ফ্যাশন অগ্রগামী এবং মান সচেতন বাজার যদি আমরা ধরতে পারি তাহলে জাপানের বাজার আমাদের সাফল্যের জন্য নতুন পথ খুলে দিতে পারে।”

ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড সেন্টারের (আইটিসি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে জাপান বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ২ হাজার ২৮৫ কোটি ৮৮ লাখ (২২.৮৬ বিলিয়ন) ডলার মূল্যের পোশাক আমদানি করেছিল। এর মধ্যে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানিকারকরা রপ্তানি করেন মাত্র ১২৫ কোটি ৭২ লাখ (১.২৬ বিলিয়ন) ডলারের পোশাক। এই অঙ্ক জাপানের মোট পোশাক আমদানির মাত্র ৫ দশমিক ৫০ শতাংশ।

“এই তথ্যই বলছে, জাপানের বাজারে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি বাড়ানোর যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। প্রয়োজন কেবল যথাযথ উদ্যোগ ও পরিকল্পনা,” বলেন মোহাম্মদ হাতেম।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে জাপানে ১৪১ কোটি ১৬ লাখ (১.৪১ বিলিয়ন) ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ, যা আগের অর্থ বছরের (২০২৩-২৪) চেয়ে ৭ দশমিক ৪৮ শতাংশ বেশি।

এর মধ্যে ১১৮ কোটি ৫৪ লাখ (১.১৮ বিলিয়ন) এসেছে তৈরি পোশাক থেকে। হিসাব বলছে, মোট রপ্তানির ৮৪ শতাংশই এসেছে তৈরি পোশাক থেকে।

তৈরি পোশাকের বাইরে গত অর্থ বছরে ১১ কোটি ৭৮ লাখ ডলারের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য ও ২ কোটি ৭৫ লাখ ডলারের হোম টেক্সটইল রপ্তানি হয়েছে।

২০২৩-২৪ অর্থ বছরে জাপানে ১৩১ কোটি ৩৩ লাখ (১.৩১ বিলিয়ন) ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছিল বাংলাদেশ, যা ছিল আগের অর্থ বছরের (২০২২-২৩) চেয়ে ৯ দশমিক ৪২ শতাংশ কম, যার মধ্যে ১০৮ কোটি ৬২ লাখ (১.০৮ বিলিয়ন) এসেছিল তৈরি পোশাক থেকে।

ইপিবির তথ্যে দেখা যায়, বাংলাদেশের ইতিহাসে জাপানে পণ্য রপ্তানি থেকে সবচেয়ে বেশি বিদেশি মুদ্রা এসেছে  ২০২২-২৩ অর্থ বছরে। ওই আর্থিক বছরে জাপানে ১৪৫ কোটি (১.৪৫ বিলিয়ন) ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছিল বাংলাদেশ, যা ছিল ২০২১-২২ অর্থ বছরের চেয়ে ৭ দশমিক ১ শতাংশ বেশি, যার মধ্যে ১২৫ কোটি (১.০৮ বিলিয়ন) ডলারই এসেছিল তৈরি পোশাক থেকে।

২০২১-২২ অর্থ বছরে জাপানে মোট রপ্তানির অঙ্ক ছিল ১৩৫ কোটি ৩৮ লাখ (১.৩৫ বিলিয়ন) ডলার, যার মধ্যে ১১০ কোটি (১.১০ বিলিয়ন) ডলারই এসেছিল পোশাক থেকে।

চলতি ২০২৫-২৬ অর্থ বছরের প্রথম দুই মাসের (জুলাই-আগস্ট) রপ্তানির তথ্য প্রকাশ করেছে ইপিবি। এই দুই মাসে জাপানে ২৬ কোটি ৪৬ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ, যা গত অর্থ বছরের চেয়ে ১৫ দশমিক ২২ শতাংশ বেশি।

২০২৪-২৫ অর্থ বছরে এই বাজারে রপ্তানির অঙ্ক ছিল ২২ কোটি ৯৬ লাখ ডলার।

১৩ কোটি মানুষের দেশ জাপানে রপ্তানি বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে উল্লেখ করে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “এ কথা ঠিক যে, জাপানে রপ্তানি বাড়ছে; তবে খুবই ধীর গতিতে। এটা আরও বাড়ানোর সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এজন্য সরকার ও রপ্তানিকারকরা মিলে সম্মিলিতভাবে উদ্যোগ নিতে হবে।”

তিনি বলেন, “জাপান বাংলাদেশের শীর্ষ রপ্তানি গন্তব্যগুলোর মধ্যে অন্যতম। বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পরিমাণ বাড়ানোর এবং সম্পর্ক আরও শক্তিশালী করার সুযোগ রয়েছে। আগামী ৫ বছরের মধ্যে জাপানে ৫ বিলিয়ন ডলার রপ্তানির লক্ষ্য নিয়ে আমাদের পরিকল্পনা করতে হবে। আর সে জন্য যা যা করা দরকার তা সরকার ও বেসরকারি খাতকে মিলে করতে হবে।”

নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে গড়ে ওঠা জাপানি অর্থনৈতিক অঞ্চলকে ঘিরেও রপ্তানি বাড়ানোর পরিকল্পনা করা যেতে পারে বলে জানান এই অর্থনীতিবিদ।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত