গত বিশ্বকাপে সুযোগ পাননি। প্রবল মানসিক যন্ত্রণায় অবসাদে ভেঙে পড়েছিলেন একসময়। জাতীয় দলে ফিরতে জেমাইমা রদ্রিগেজ শুরু করেন লড়াই। সঙ্গী বাইবেল। এবারের বিশ্বকাপের দলে সুযোগ পেয়েছিলেন। কিন্তু শুরুটা ভালো হয়নি। প্রথম মাচে শূন্য করেছিলেন। পরবর্তী তিনটি ম্যাচে রান না পাওয়ায় বাদও পড়েছিলেন। জেদ চেপে গিয়েছিল। ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য, নিজেকে প্রমাণ করার জন্য মঞ্চ খুঁজছিলেন তিনি। সেমিফাইনালেই সেই মঞ্চটা পেয়ে গেলেন। এবং নিজেকে উজাড় করে দিলেন। ছাপিয়ে গেলেন সবাইকে।
জেমাইমার সেঞ্চুরিতে নাবি মুম্বাইয়ের ডিওয়াই পাতিল স্টেডিয়ামে গতকাল রাতে নারী বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়াকে ৫ উইকেটে হারিয়ে ফাইনালে উঠেছে ভারত। অস্ট্রেলিয়ার ৩৩৮ রান তাড়া করতে নেমে ভারত জয় তুলে নেয় ৯ বল হাতে রেখে। ১৩৪ বলে ১৪ চারে ১২৭ রান করে অপরাজিত ছিলেন। নারী বিশ্বকাপে এটাই সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ড। অথচ মেয়েদের বিশ্বকাপে ভারত এর আগে কখনও ২০০ রান তাড়া করে জিততে পারেনি।

ম্যাচের পর জেমাইমা বলছিলেন, “ঈশ্বরকে ধন্যবাদ। কারণ, আমি একা কিছুই করিনি। তিনি পাশে না থাকলে কিছুই করতে পারতাম না। আমি জানি, তিনি আমার পাশে ছিলেন। ধন্যবাদ জানাতে চাই আমার বাবা-মা, আমার কোচ এবং কঠিন সময়ে যারা আমার পাশে ছিলেন, তাঁদের সবাইকে। গত চারটা মাস কী গেছে তা বলে বোঝাতে পারব না। ফিরে আসাটা ভীষণই কঠিন ছিল। স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে।”
সেঞ্চুরি করার পরও জেমাইমাকে কোনও উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে দেখা যায়নি। এ নিয়ে তিনি বললেন, “আমার পঞ্চাশ বা একশো করাটা কোনও বিষয় ছিল না। ভারতকে জিতিয়ে আনাটাই প্রধান লক্ষ্য ছিল” এরপরই জীবনের সেই খারাপ সময়ের কথাগুলি বেরিয়ে এল তার কণ্ঠ থেকে। বলে উঠলেন, “গতবছর বিশ্বকাপে আমাকে বাদ দেওয়া হয়েছিল। কোনওকিছুই আমার নিয়ন্ত্রণে ছিল না। এই সফরে প্রায় প্রতিদিন কেঁদেছি। মানসিকভাবে মেটেই ভালো জায়গায় ছিলাম না। একটা উদ্বেগ ঘিরে ছিল আমাকে। তবে নিজেকে বলেছিলাম, জ্বলে উঠতে হবে।”

জ্বলে ওঠার জন্য নিজের সঙ্গে কথা বলেছিলেন। ভরসা ছিল বাইবেল। জেমাইমা বললেন, “বাইবেলে বলা আছে, শক্ত হয়ে দৃঢ়ভাবে দাঁড়াও। ঈশ্বরই তোমার হয়ে লড়াই করবেন। মাঠের মধ্যেও বাইবেল পড়েছি তখনও অনেকটা পথ যেতে হত। আমি শুধু শান্ত থেকে নিজের কাজটা করে গেছি।”
ভারত ফাইনালের টিকিট পাওয়ার পর গৌতম গম্ভীরের ছবি পাশাপাশি রেখে অনেকেই পোস্ট করছেন। আসলে দু’জনেরই জার্সিতে যে মাটি মাখা! ২০১১ বিশ্বকাপের ফাইনালে শতরান পাননি গৌতম গম্ভীর। কিন্তু তাঁর ৯৭ রানের ইনিংসটিই ছিল ম্যাচের সর্বোচ্চ। জেমাইমা শক্তিশালী অজিদের বিপক্ষে প্রায় সাড়ে তিনশো তাড়া করার সময় যে চাপ তাকে নিতে হল তা ফাইনালের চেয়ে কম বোধহয় নয়!
দুই লড়াকু ব্যাটার পাশাপাশি হলেন, কাদামাখা জার্সিতে দেশকে গর্বিত করার মহাকাব্য রচনা করে। যে মহাকাব্যের শিরোনাম বোধহয় হতে পারে ‘দাগ খারাপ কী’! কে বলবে মাঝে ১৪টাবছর! ২০১১ আর ২০২৫ যেন এক সরলরেখায় দাঁড়িয়ে।
সেমিফাইনালে তাকে যে তিন নম্বরে ব্যাট করতে হবে, তা জেমাইমা জানতেনই না। নিজেই বললেন, “ম্যাচের ঠিক আগে জানতে পারি, আমাকে তিন নম্বরে ব্যাট করতে হবে। তবে আমি নিজেকে নিয়ে ভাবিইনি। কারণ, আমার প্রমাণ করার কিছু ছিল না। একটাই লক্ষ্য ছিল, ভারতকে জয় এনে দেওয়া। কারণ, এই পরিস্থিতিতে আমরা বহুবার হেরেছি। আমি চেয়েছিলাম দলকে যতদূর সম্ভব এগিয়ে নিয়ে যেতে।”
 
				 
											 
				 
				



 
								 
								 
															