Beta
সোমবার, ২৭ অক্টোবর, ২০২৫
Beta
সোমবার, ২৭ অক্টোবর, ২০২৫

জামায়াতকে মুক্তিযুদ্ধে বিরোধিতার দায় স্বীকার করার আহ্বান ৩২ নাগরিকের

libaration war
[publishpress_authors_box]

মুক্তিযুদ্ধে বিরোধিতার জন্য জামায়াতে ইসলামীকে দায় স্বীকার করার আহ্বান জানিয়েছেন দেশের ৩২ নাগরিক।

বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তারা এ আহ্বান জানান।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের বিরোধিতাকারী দল ছিল জামায়াতে ইসলামী। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর নির্বিচার গণহত্যা, ধর্ষণ, নিপীড়ন, উচ্ছেদের মুখে যখন স্বাধীনতাকামী মানুষ নিজের জীবন বাজি রেখে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়; তখন জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা অখণ্ড পাকিস্তানের পক্ষে সক্রিয় ছিল। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে দলীয়ভাবে গণহত্যার পক্ষে অবস্থান নেয়ার তথ্য-প্রমাণ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। তাদের অনেক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে গণহত্যা, উচ্ছেদ, ধর্ষণ, লুটপাটে সহযোগী হওয়ার অভিযোগ রয়েছে।”

“ইতিহাসে দেখা গেছে জনগণের বিরুদ্ধে গিয়ে জামায়াতে ইসলামী অখণ্ড পাকিস্তানের দাবিতে সভা-সমাবেশ করেছে, প্রচার চালিয়েছে”- একথা উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “এমনকি ২৫ মার্চ বর্বর গণহত্যার পর পাকিস্তান জান্তার সঙ্গে বৈঠকও করেছে দলটির নেতারা। তাদের দলের নেতা-কর্মীরা পাকিস্তানি সামরিক জান্তার পক্ষে রাজাকার, আলবদরসহ বিভিন্ন বাহিনীতে যুক্ত হয়ে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ধর্ষণ, লুণ্ঠন, গণহত্যায় সহযোগিতা করেছে বলে পরিষ্কার তথ্য-প্রমাণ রয়েছে।”

স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ের ইতিহাস টেনে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ইসলামী ছাত্র সংঘ নাম পরিবর্তন করে ইসলামী ছাত্রশিবির নামে রাজনীতি শুরু করে। তবে তাদের মূল দল জামায়াতে ইসলামী একই নামে স্বাধীন বাংলাদেশে রাজনীতি করে আসছে। মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকার কারণে তারা কখনো ক্ষমা প্রার্থনা, অনুশোচনার প্রকাশ ঘটায়নি। উল্টো বিভিন্নভাবে মুক্তিযুদ্ধকে ভুল প্রমাণের চেষ্টা চলিয়েছে।”

আওয়ামী লীগ শাসনামলে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার বিচারের প্রসঙ্গ টেনে বিবৃতিতে তারা বলেছেন , “স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের সময়ে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জামায়তের প্রথম সারির প্রায় সব নেতাকে অভিযুক্ত করা হয়। যে প্রক্রিয়ায় তখন তাদের বিচার হয়েছে তা গ্রহণযোগ্য নয়। গুরুতর অভিযোগ রয়েছে, এসব মামলার রায়ে জবরদস্তিমূলকভাবে কারও ফাঁসি অথবা যাবজ্জীবন সাজা হয়েছে। সেই অভিযোগ বিবেচনায়, এসব মামলার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ পুনর্বিচার জরুরি।”

আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের সময়ে সংঘটিত অপরাধকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করেছে অভিযোগ করে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “এর সঙ্গে যারা জড়িত, তাদেরও বিচারের আওতায় আনা উচিত। রাজনৈতিক মহলে এটাও প্রতিষ্ঠিত যে, একই সময়ে শাহবাগে জমায়েত তৈরি করে গণজাগরণ মঞ্চ আওয়ামী লীগের কর্তৃত্ববাদী শাসনের ভিত তৈরি করেছিল।

“এসব অভিযোগেরও যথাযথ তদন্ত এবং বিচার জরুরি। আমরা মনে করি, বিচার প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রিত ছিল সেটা ঠিক। তবে তার মানে এই নয় যে রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াত বা এ দলের নেতাকর্মীরা মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধে সম্পৃক্ত ছিল না।”

জুলাই আন্দোলনের প্রসঙ্গ টেনে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “আওয়ামী লীগের স্বেচ্ছাচারিতার শিকার হওয়া জামায়াতে ইসলামী এবং তাদের কর্মী-সমর্থকদের প্রতি মানুষের সহমর্মিতা ছিল। মহান জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সবাই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আওয়ামী লীগের ফ্যাসিস্ট শাসন উচ্ছেদ করেছে। সেখানে জামায়াতে ইসলামীর ভূমিকা নিয়েও কেউ প্রশ্ন করেনি।

“তবে সফল অভ্যুত্থানের পর থেকে জামায়াত এবং তার সহযোগী ছাত্রশিবির মুক্তিযুদ্ধে বিরোধিতা করা, গণহত্যাসহ অন্যান্য অভিযোগে ঐতিহাসিকভাবে অভিযুক্তদের রাজনীতিতে প্রাসঙ্গিক করতে চাইছে। পাকিস্তানি শাসকরা তখন মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতায় যে ভাষায় কথা বলত, সেই একই বয়ান প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালাচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধে তাদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুললে আওয়ামী লীগের মতো ‘শাহবাগী’ ইত্যাদি ট্যাগিংয়ের রাজনীতি ফিরিয়ে আনছে।”

“তাদের এ ধরনের উদ্দেশ্য, তৎপরতা ইতিহাসের সঙ্গে বেইমানি, রাজনৈতিক অসততা”- একথা উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “পৃথিবীর ইতিহাসে প্রকাশ্যে ও সংগঠিতভাবে জনগণের মুক্তি সংগ্রামের বিরোধিতা করার পরও কোনও রাজনৈতিক দল  অনুশোচনা বা ক্ষমা চাওয়া ছাড়াই অবাধে রাজনীতি করছে এমন নজির চোখে পড়ে না। শুধু তাই নয় জুলাই অভ্যুত্থান পরবর্তী পরিস্থিতিতে গণমানুষের উদারতার সুযোগ নিয়ে পাকিস্তান আমলের বয়ান প্রতিষ্ঠার চেষ্টাও চালাচ্ছে জামায়াত। তাদের এ চর্চা জুলাই অভ্যুত্থানের পর আওয়ামী লীগের চরিত্রের সঙ্গে মিলে যায়।”

সবশেষে বার্তায় বলা হয়েছে, “আমরা জুলাই অভ্যুত্থান পরবর্তী নতুন বাংলাদেশ নির্মাণের স্বার্থে জামায়াতে ইসলামীর কাছে এ ধারার রাজনীতি বন্ধের দাবি জানাই। মুক্তিযুদ্ধে বিরোধিতার রাজনৈতিক দায় শিকারের আহ্বান জানাই। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে কয়েক লাখ  মানুষের শহীদি আত্মত্যাগ ও সম্ভ্রমের প্রতি অবশ্যই তাদের শ্রদ্ধাশীল থাকতে হবে।”

বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগানের গ্র্যান্ড ভ্যালি স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক আজফার হোসেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রায়হান রাইন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জি এইচ হাবীব, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আ-আল মামুন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সায়মা আলম, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আর রাজী, প্রবাসী লেখক ও নৃবিজ্ঞানী সায়েমা খাতুন, কবি ও কথাসাহিত্যিক কাজল শাহনেওয়াজ, রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. মারুফ মল্লিক, লেখক ও সম্পাদক রাখাল রাহা, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক সৌভিক রেজা, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক গোলাম সরওয়ার, শিল্পী দেবাশীষ চক্রবর্তী, নির্মাতা আশফাক নিপুন, আবহাওয়াবিদ মোস্তফা কামাল পলাশ, কথাসাহিত্যিক ও প্রকাশক মোহাম্মদ নাজিমউদ্দিন, কথাসাহিত্যিক গাজী তানজিয়া, অ্যাক্টিভিস্ট এসকে তাসনিম আফরোজ ইমি, বুদ্ধিজীবী তুহিন খান, লেখক ও অ্যাক্টিভিস্ট পারভেজ আলম, কবি ও সংগঠক চিনু কবির, কবি ও অ্যাক্টিভিস্ট ফেরদৌস আরা রুমী, শিল্পী বিথী ঘোষ, ফিল্মমেকার, কবি ও সংগঠক মোহাম্মদ রোমেল, প্রকাশক সাঈদ বারী, প্রকাশক মাহাবুব রাহমান, কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক সালাহ উদ্দিন শুভ্র, কবি ও সাংবাদিক অর্বাক আদিত্য, লেখক ও গণমাধ্যমকর্মী আরিফ রহমান, কবি সোয়েব মাহমুদ, অনুবাদক অস্ট্রিক আর্যু লেখক, সাংবাদিক ও অ্যাক্টিভিস্ট সাদিক মাহবুব ইসলাম।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত