Beta
সোমবার, ২০ মে, ২০২৪
Beta
সোমবার, ২০ মে, ২০২৪

আজিজ মোহাম্মদ ভাইসহ আসামিরা কে কোথায়

দুই সন্তানের সঙ্গে দিতি ও সোহেল চৌধুরী। ছবি : সংগৃহীত
দুই সন্তানের সঙ্গে দিতি ও সোহেল চৌধুরী। ছবি : সংগৃহীত
Picture of প্রতিবেদক, সকাল সন্ধ্যা

প্রতিবেদক, সকাল সন্ধ্যা

চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যামামলা রায় ঘোষণার পর নতুন করে আলোচনায় এসেছেন চলচ্চিত্র প্রযোজক ও ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাই ওরফে আব্দুল আজিজ। তিনিসহ যে তিন আসামিকে এই মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে, তারা সবাই পলাতক।

প্রশ্ন উঠেছে পলাতক আব্দুল আজিজ, আফাকুল ইসলাম ওরফে বান্টি ইসলাম ও আদনান সিদ্দিকী এখন কোথায়?

গোয়েন্দা ও পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রায় ঘোষণার অনেক আগেই দেশ ছেড়েছেন এই তিন আসামি।

আজিজ মোহাম্মদ ভাই
আজিজ মোহাম্মদ ভাই

এদের মধ্যে ব্যাংককে বাস করেন ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাই। তার ঘনিষ্ঠজনরাই এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তারা বলছেন, পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ব্যাংককে থাকেন আজিজ। থাইল্যান্ড ও সিঙ্গাপুরে তার বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা রয়েছে।

পরিচিতদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আরেক আসামি আদনান সিদ্দিকী চিকিৎসার জন্য নেওয়া জামিনে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। এছাড়া আফাকুল ইসলাম ওরফে বান্টি ইসলাম থাকেন কানাডায়।

যদিও আসামিদের হালনাগাদ অবস্থান নিয়ে নিশ্চিত নয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

সোহেল চৌধুরী হত্যামামলায় রায় ঘোষণার পর আসামিদের গ্রেপ্তারে কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে তা জানতে কথা হয় পুলিশ সদরদপ্তরের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি অপারেশনস) হিসেবে দায়িত্বরত মো. আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে।

তিনি বলেন, “সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তারে আদালতের নির্দেশনা ও সংশ্লিষ্ট থানার নথি পেলে তখন পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। প্রয়োজনে ইন্টারপোলের সহযোগিতা চাওয়া হবে।”

অতিরিক্ত আইজিপি হিসেবে সদ্য পদোন্নতি পাওয়া এ কর্মকর্তা বিষয়টি নিয়ে আর কিছু বলতে রাজি হননি।

নায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যামামলায় সাজাপ্রাপ্ত আজিজ মোহাম্মদ ভাই বিত্তশালী ব্যবসায়ী। সার্ক চেম্বার অব কমার্সের আজীবন সদস্য তিনি।

অলিম্পিক ব্যাটারি, অলিম্পিক বলপেন, অলিম্পিক ব্রেড ও বিস্কুট, এমবি ফার্মাসিটিউক্যাল, এমবি ফিল্মসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মালিক তিনি। মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, হংকং ও সিঙ্গাপুরে রয়েছে তার হোটেল ও রিসোর্ট ব্যবসা। ব্যবসার পাশাপাশি এমবি ফিল্মের ব্যানারে তিনি ৫০টির মতো চলচ্চিত্র প্রযোজনা করেছেন।

আজিজ মোহাম্মদের পরিবারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে এমন কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলেছে সকাল সন্ধ্যা।

তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, আজিজ মোহাম্মদের আদি নিবাস ভারতের গুজরাটে। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর ঢাকা আসে পরিবারটি। পুরান ঢাকার আরমানিটোলায় আজিজের জন্ম ১৯৬২ সালে। ‘ভাই’ তাদের পারিবারিক উপাধি। আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের পরিবারের দ্বিতীয় প্রজন্মের নামেও ভাই উপাধি দেখা গেছে।  

আজিজ মোহাম্মদ ভাই মধ্যবয়স থেকে আলোচনায় আসেন। তার জীবনযাপনকে রহস্যময়ও বলেন কেউ কেউ।

নওরীন আজিজ এম ভাই। ছবি : সংগৃহীত
নওরীন আজিজ এম ভাই। ছবি : সংগৃহীত

বন্ধুর মেয়ে নওরিনকে বিয়ে করে এক সময় তুমুল আলোচনার জন্ম দিয়েছিলেন আজিজ মোহাম্মদ ভাই। এ দম্পতির তিন ছেলে ও দুই মেয়ে।

হত্যা, মাদক কারবার, শেয়ার মার্কেট কেলেঙ্কারিসহ বিভিন্ন ঘটনায় কয়েক দফায় গ্রেপ্তার ও জিজ্ঞাসাবাদের মুখে দেশত্যাগের সিদ্ধান্ত নেন আজিজ মোহাম্মদ ভাই।

কোভিড মহামারী চলাকালেই কোম্পানির শেয়ার হস্তান্তরসহ ব্যবসা গোটাতে থাকেন। এক পর্যায়ে পরিবারের সবাইকে নিয়ে দেশ ছাড়েন।

তবে দেশে এখনও কিছু ব্যবসা আছে তার, যেগুলো দেখভাল করেন স্ত্রী নওরিন। এর মধ্যে অ্যাম্বি ফার্মাসিউটিক্যালস পিএলসির বর্তমান ভাইস চেয়ারপারসন তিনি। পাশাপাশি বেঙ্গল স্টিল ওয়ার্কস ও অ্যাম্বি লিমিটেডের পরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন। সেজন্য মাঝে মাঝেই দেশে আসেন নওরিন।

স্বজনরা বলছেন, গ্রেপ্তারের ভয়ে আজিজ মোহম্মদ ভাই গত কয়েক বছর দেশে আসেননি। তার বদলে নওরিনই আসেন।

হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের শাসনামলে একবার গ্রেপ্তার হয়েছিলেন আজিজ মোহম্মদ ভাই। কথিত আছে, সেসময় ইসমাইলিয়া সম্প্রদায়ের ইমাম প্রিন্স করিম আগা খানের হস্তক্ষেপে তিনি মুক্তি পান।

আবার আলোচনায় আসেন ১৯৯৬ সালে। চিত্রনায়ক সালমান শাহ হত্যামামলাতেও তার নাম আসে। এরপর ১৯৯৮ সালে সোহেল চৌধুরী হত্যার পর সেখানেও তার সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ ওঠে। তবে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে বেগ পেতে হয় তদন্তকারীদের।

ঘটনা পরিক্রমায় ২০০৭ সালে গুলশানের একটি বাসা থেকে ১ লাখ ৩০ হাজার পিস ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার করা হয় আজিজ মোহাম্মদের ভাইয়ের ছেলে আমিনুল হুদাকে। এ ঘটনা তদন্তে আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়েরও নাম আসে। তবে সেবারও তার বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ প্রমাণ করতে পারেনি পুলিশ।

এমনকি শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারির ঘটনায় করা একটি মামলায় তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হলেও তাকে ধরা যায়নি।

ঢাকায় কর্মরত পুলিশের বিশেষ শাখার একজন কর্মকর্তা বলেন, “বিমানবন্দরসহ আসামিদের ঘনিষ্ঠজনদের দেওয়া তথ্য যাচাইয়ে দেখা গেছে সোহেল চৌধুরী হত্যামামলায় সাজা পাওয়া তিন আসামি বর্তমানে দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের গ্রেপ্তারে আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে পরে ইন্টারপোলের সহযোগিতা চাওয়া হতে পারে।”

এ মামলার রায়ে সদ্য খালাস পাওয়া আসামি আশীষ রায় চৌধুরীকে ২০২২ সালে র‌্যাব গ্রেপ্তার করে। তখন তিনি জানিয়েছিলেন, ২০০৫ সালে কানাডার নাগরিকত্ব পেয়েছেন। পরিবার সদস্যদের নিয়ে পাঁচ বছর ধরে সেদেশেই বাস করছেন।

সোহেল চৌধুরী হত্যামামলায় পরোয়ানা জারির পর কানাডায় চলে যাওয়ার উদ্যোগ নেন বলে র‌্যাবকে জানান আশীষ। তিনি বেশ কয়েকবার দুবাই ও থাইল্যান্ডে গিয়েছেন। তখন আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে।

আদনান সিদ্দিকীর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে দেখা করেছেন বলেও পুলিশকে জানিয়েছিলেন আশীষ। বান্টি ইসলামের কানাডায় থাকার তথ্যও র‌্যাব কর্মকর্তারা আশীষের মাধ্যমেই যাচাই করেছিলেন।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত