Beta
সোমবার, ২০ মে, ২০২৪
Beta
সোমবার, ২০ মে, ২০২৪
সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলা

গায়েব হয়েছিল কেস ডকেট, সাক্ষ্যও গা বাঁচানো

দিতির সঙ্গে সোহেল চৌধুরী। ছবি : সংগৃহীত
দিতির সঙ্গে সোহেল চৌধুরী। ছবি : সংগৃহীত
Picture of প্রতিবেদক, সকাল সন্ধ্যা

প্রতিবেদক, সকাল সন্ধ্যা

হত্যার ২৫ বছর পর রায় দেওয়া হয়েছে চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলার। দীর্ঘ সময় ধরে চলা এই মামলার রায় ঘোষণার পাশাপাশি পর্যবেক্ষণও তুলে ধরেছেন বিচারক। সেখানে উঠে এসেছে কেস ডকেট গায়েব হওয়ার মতো বিষয়। সাক্ষীরা গা বাঁচানো সাক্ষ্য দিয়েছেন, এমন মত খোদ বিচারকের।

বৃহস্পতিবার সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলায় তিনজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক অরুণাভ চক্রবর্তী।

রায় ঘোষণার জন্য দুপুর ১টার কিছু পরে এজলাসে আসেন তিনি। তবে তার আগে মামলা বিষয়ে তার পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন।

বিচারক বলেন, “এই মামলার সিডি (কেইস ডকেট) পাওয়া যায়নি। ধারণা করা হয়, সিডি গায়েব করা হয়েছে। আদনান সিদ্দিকী ঘটনাস্থল থেকে ধরা পড়েছিলেন। তিনি সাক্ষ্য দিয়েছেন, তবে তা অনেকটা গা বাঁচিয়ে দেওয়ার মতো।”

সোহেল চৌধুরী কোনও অখ্যাত ব্যক্তি ছিলেন না উল্লেখ করে বিচারক বলেন, “ট্রাম্পস ক্লাবের ম্যানেজার বলেছেন, ‘জেনেছি সোহেল চৌধুরী নামে একজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন’। তার মানে তিনি তাকে চিনতেন না? অথচ এ ঘটনায় আহত অপর একজনকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। যারা পুলিশের কাছে সাক্ষ্য দিয়েছেন, তাদের অনেকেই মারা গেছেন। তাই তাদেরকে পরীক্ষা করা সম্ভব হয়নি। জবানবন্দী গ্রহণ করা ম্যাজিস্ট্রেটরাও আদালতে সাক্ষ্য দিতে আসেননি।”

সোহেল চৌধুরী ও দিতির পরিবার। ছবি : সংগৃহীত
সোহেল চৌধুরী ও দিতির পরিবার। ছবি : সংগৃহীত

সোহেল চৌধুরীর জন্ম ১৯৬৩ সালের ১৯ অক্টোবর ঢাকার বনানীর এক অবস্থাপন্ন পরিবারে। তারেক আহমেদ চৌধুরী ও নূরজাহান বেগম দম্পতির ছোট সন্তান ছিলেন সোহেল।

১৯৮৪ সালে ‘নতুন মুখের সন্ধানে’ নামে মেধা অনুসন্ধান প্রতিযোগিতার মাধ্যমে চলচ্চিত্র জগতে তার অভিষেক হয়। নির্মাতা এফ কবির চৌধুরীর ‘পর্বত’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে নায়ক হিসেবে নাম লেখান তিনি। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ৩০টির বেশি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন।

বিয়ে করেছিলেন সহশিল্পী পারভীন সুলতানা দিতিকে। লামিয়া ও দীপ্ত চৌধুরী নামে দুই সন্তান রয়েছে তাদের।

রায় ঘোষণার আগে পর্যবেক্ষণে বিচারক বলেন, এ মামলায় যারা সাক্ষ্য দিয়েছেন তাদের অনেকেই পক্ষপাতদুষ্ট ও সত্য গোপনের চেষ্টা করেছেন।

প্রতিটি মৃত আত্মা বিচার চায় উল্লেখ করে বিচারক অরুণাভ চক্রবর্তী বলেন, “এত বছর ধরে ফেলে রেখে মামলার বিচার না হওয়ায় মানুষের মধ্যে বিরূপ প্রভাব পড়ে। আসামি আদনান সিদ্দিকী কয়েকজনের নাম বলেছেন তবে সেখানে নিজের গা বাঁচিয়েছেন। যে নিজের গা বাঁচিয়ে সাক্ষ্য দিতে পারে সে অন্যের নামেও সত্য বলতে পারে না। তবে যাদের নাম বলছে তাদের কাছ থেকে কোনও রিকভারি হয় নাই। এ ভাষ্য অনুযায়ী আসামিদের গুরুদণ্ড দেওয়া ঠিক হবে না।”

যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পাওয়া তিন আসামি হলেন চলচ্চিত্র প্রযোজক ও ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাই ওরফে আব্দুল আজিজ, বনানীর ট্রাম্পস ক্লাবের মালিক আফাকুল ইসলাম ওরফে বান্টি ইসলাম ও আদনান সিদ্দিকী। এরা তিনজনই পলাতক।

প্রযোজক আজিজ মোহাম্মদ ভাই বাংলাদেশের চলচ্চিত্র জগতে একটা বড় সময় প্রভাব বিস্তার করেছেন। অলিম্পিক ব্যাটারি, অলিম্পিক ব্রেড অ্যান্ড বিস্কুট, অলিম্পিক বলপেন, এমবি ফিল্মের মতো প্রতিষ্ঠানের মালিক তিনি। এমবি ফিল্মের ব্যানারে প্রায় ৫০টি চলচ্চিত্র পযোজনা করেছেন তিনি। তার বিরুদ্ধে মাদক কারবারেরও অভিযোগ রয়েছে।

রায় ঘোষণার সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন আসামি আশীষ রায় চৌধুরী ও কারাবন্দি সানজিদুল ইসলাম ইমন। এদের দুজনকেই খালাস দেওয়া হয়েছে। এছাড়া পলাতক ফারুক আব্বাসি, তারিক সাঈদ মামুন, সেলিম খান ও হারুন-অর-রশিদ ওরফে লেদার লিটনও খালাস পেয়েছেন।

পর্যবেক্ষণের পর রায় ঘোষণা করেন বিচারক।

সেখানে বলা হয়, আসামি আফাকুল ইসলাম ওরফে বান্টি ইসলাম, আজিজ মোহাম্মদ ভাই ওরফে আব্দুল আজিজ ও আদনান সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রাপ্ত সাক্ষ্য পারিপার্শ্বিক সাক্ষ্যে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ হয়। অন্যদিকে বান্টির বক্তব্যে ইমন ও আশীষ রায় চৌধুরীর নাম এলেও ঘটনাস্থলে তাদের উপস্থিতি প্রমাণিত হয়নি বিধায় তাদের খালাস দেওয়া হলো।

মেয়ে লামিয়া চৌধুরীকে কোলে নিয়ে সোহেল চৌধুরী। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
মেয়ে লামিয়া চৌধুরীকে কোলে নিয়ে সোহেল চৌধুরী। ছবি : সকাল সন্ধ্যা

১৯৯৮ সালের ১৮ ডিসেম্বর ঢাকার বনানীর ১৮ নম্বর রোডের আবেদিন টাওয়ারের ট্রাম্পস ক্লাবের সামনে গুলি করে হত্যা করা হয় সোহেল চৌধুরীকে। এ ঘটনায় সোহেল চোধুরীর ভাই তৌহিদুল ইসলাম চৌধুরী বাদী হয়ে ঢাকার গুলশান থানায় হত্যা মামলা করেন।

মামলাটি তদন্ত করে পরের বছর ১৯৯৯ সালের ২ আগস্ট আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ।

২০০১ সালের ৩০ অক্টোবর ঢাকার অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালত-৩ আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে। কিন্তু এক আসামির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টের আদেশে দেড় যুগ বিচার কাজ বন্ধ ছিল।

পরে বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হলে আবার শুরু হয় বিচার কাজ।

আইনজীবীরা যা বলছেন

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আব্দুল্লাহ আবু বলেন, “পূর্ণাঙ্গ রায় পাওয়ার পর সেটি আমরা পর্যালোচনা করব। রায়ে আইনের কোনো ব্যত্যয় ঘটেছে কি না, সার্বিক বিষয়ে দেখে আমরা আপিল করব কি না সেই সিদ্ধান্ত নেব।”

রায়ের রাষ্ট্রপক্ষ সন্তুষ্ট কি না- এর কোনও উত্তর দেননি এই আইনজীবী।

তবে খালাস পাওয়া সানজিদুল ইসলাম ইমনের আইনজীবী ফারুক আহমেদ সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।

চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলা প্রমাণে মামলায় ৩৩ জনকে সাক্ষী করা হয়। এর মধ্যে ১০ জন সাক্ষীকে আদালতে হাজির করা হয়। যার মধ্যে তিন সাক্ষী আবার সোহেল চৌধুরীকে খুনের অভিযোগ সমর্থন করে সাক্ষ্য দেননি।

যে কারণে বাধ্য হয়ে তাদের ‘বৈরী’ ঘোষণা করে জেরা করে রাষ্ট্রপক্ষ।

অন্যদিকে, ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরীর গাড়িচালকসহ গুরুত্বপূর্ণ ১১ সাক্ষী এই ২৫ বছরে মারা গেছেন। আবার গুরুত্বপূর্ণ ১২ সাক্ষীকে খুঁজেই পায়নি রাষ্ট্রপক্ষ।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত