রাষ্ট্রের যে কোনও পরিকল্পনা প্রণয়নের আগে সেই সম্পর্কিত তথ্য জানাটা গুরুত্বপূর্ণ। এই কাজটি করে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো-বিবিএস। কিন্তু তাদের পরিসংখ্যানের বিশ্বাসযোগ্যতা বিভিন্ন সময়ে হয়েছে প্রশ্নবিদ্ধ।
এই প্রেক্ষাপটে নির্ভরযোগ্য, মানসম্পন্ন ও প্রমাণনির্ভর পরিসংখ্যান তৈরির লক্ষ্যে হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।
মঙ্গলবার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় এই প্রকল্পটিসহ ৮ হাজার ৯৭৪ কোটি টাকা ব্যয়ের মোট ১৭টি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়।
সাধারণত একনেক বৈঠকের পর পরিকল্পনা উপদেষ্টা সভার সিদ্ধান্ত সাংবাদিকদের জানালেও এদিন সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে তা জানানো হয়। মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, উপদেষ্টার জরুরি আরেকটি বৈঠক থাকায় প্রেস ব্রিফিং হয়নি।
‘স্ট্যাটিস্টিক্যাল ক্যাপাসিটি এনহেন্সমেন্ট অ্যান্ড মর্ডানাইজেশন (এসসিইএম)’ শীর্ষক প্রকল্পটিতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৯৬ কোটি টাকা। এর ১ হাজার টাকা জোগান হবে বিশ্ব ব্যাংকের ঋণ তেকে, ৯৬ কোটি টাকা সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে দেওয়া হবে।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় জানায়, দেশের নীতি-নির্ধারণী প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও প্রমাণ-নির্ভরতা নিশ্চিত করে নির্ভরযোগ্য, মানসম্পন্ন ও সময়োপযোগী পরিসংখ্যান প্রস্তুত, ব্যবস্থাপনা ও প্রকাশনা নিশ্চিত করতে এই প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছে।
প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে একটি আধুনিক ও সমন্বিত জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যবস্থা গড়ে তোলে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বাড়ানো হবে।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, দেশের প্রধান তথ্য সংগ্রহ, প্রণয়ন ও তথ্য প্রকাশের প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য সংগ্রহ ব্যবস্থা, তথ্য সন্বিবেশ ব্যবস্থায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহারে উন্নয়ন ঘটানো হবে।
“প্রকল্পটির গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে বিগ ডেটা, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং ডেটা সায়েন্স বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি করা,” বলেন তিনি।
এছাড়া প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তি পর্যায়ে সক্ষমতা এবং পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মান অনুসরণ করে তথ্য প্রচার প্রক্রিয়া উন্নত করাও এই প্রকল্পের লক্ষ্য।
আগামী ২০৩০ সালের জুনে প্রকল্পটি শেষ করার লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় জানায়, একনেকে মঙ্গলবার অনুমোদিত ১৭টি উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে যে ৮ হাজার ৯৭৪ কোটি টাকা ব্যয় হবে, তার ৩ হাজার ১৮০ কোটি ৩৪ লাখ টাকা সরকার জোগান দেবে। বিদেশি বিভিন্ন সংস্থা থেকে ঋণ নেওয়া হবে ৫ হাজার ৫৬৩ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। সংশ্লিষ্ট সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন রয়েছে ২৩০ কোটি ৫১ লাখ টাকা।
বৈঠকে অনুমোদিত প্রকল্পগুলো
> ‘উপজেলা কমপ্লেক্স সম্প্রসারণ (২য় পর্যায়) (২য় সংশোধিত) প্রকল্প। ব্যয় বাড়ছে ৪৮৩ কোটি টাকা।
>> ‘বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী ও স্থানীয় জনগণের জীবনমান উন্নয়ন প্রকল্প। ব্যয় ৬৫২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা।
>> ‘৭ বিভাগীয় শহরে ২০০ শয্যার মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র নির্মাণ’ প্রকল্প। ব্যয়;
১ হাজার ৪১৩ কোটি টাকা।
>> ‘৪টি নতুন মেরিন একাডেমিতে সিমুলেটর ও সংশ্লিষ্ট সুবিধাদি স্থাপনের মাধ্যমে সক্ষমতা বৃদ্ধি’ প্রকল্প।
>> ‘একসেস টু জাস্টিস ওম্যান’ প্রকল্প। ব্যয় ১৮৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা।
>> ‘তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবল স্থাপন’ (২য় সংশোধিত) প্রকল্প। ব্যয় বাড়ছে ২৩০ কোটি টাকা।
>> ‘সার সংরক্ষণে ১৩টি নতুন বাফার গোডাউন (৩য় সংশোধিত)’ প্রকল্প। ব্যয়; ৫৪৪ কোটি টাকা।
>> ‘কিশোর-কিশোরী ক্লাব স্থাপন’ (১ম সংশোধিত) প্রকল্প। ব্যয় বাড়ছে১১৪ কোটি টাকা।
>> ‘টিভেট টিচারস ফর ফিউচার (টিটিএফ)’ প্রকল্প। ব্যয়; ২ হাজার ৯ কোটি টাকা।
>> ‘দেশব্যাপী ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি (৩য় সংশোধিত)’ প্রকল্প। ব্যয় বাড়ছে ৩৮ কোটি ৪২ লাখ টাকা।
>> ‘উন্নয়ন বাজেট ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি শক্তিশালী করণ (৩য় সংশোধনী) প্রকল্প, ব্যয় বাড়ছে ২ কোটি টাকা।
>> ‘সরকারি বিনিয়োগ ব্যবস্থাপনা প্রকল্প’; ব্যয় ৩১৬ কোটি টাকা।
>> ‘ক্রয় পদ্ধতির আধুনিকায়ন এবং সরকারি সেবা উন্নয়ন প্রকল্প’; ব্যয় প্রায় ৫৫২ কোটি টাকা।
>> ‘স্ট্রেংদেনিং পাবলিক অডিট থ্রো ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন অ্যান্ড ক্যাপাসিটি এনহেন্সমেন্ট’ প্রকল্প। ব্যয়; ৩১২ কোটি টাকা
>> ‘স্ট্রেংদেনিং ডমেস্টি রেভিনিউ মোবিলাইজেশন’ প্রকল্প।