সফরের শেষটা ভালো হওয়ার আশায় ছিল বাংলাদেশ। লিটন দাসরা সেই আশা পূরণ করেছেন। যাতে শ্রীলঙ্কার মাটিতে প্রথম সিরিজ জয়ের আনন্দ এনে দিয়েছে। কলম্বোর শেষ টি-টোয়েন্টি ৮ উইকেটে জিতেছে বাংলাদেশ।
বুধবার (১৬ জুলাই) আর প্রেমাদাসার শেষ টি-টোয়েন্টিতে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমেছিল শ্রীলঙ্কা। শেখ মেহেদী হাসানের দুর্দান্ত বোলিংয়ে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৭ উইকেটে ১৩২ রান করতে পারে স্বাগতিকরা। জবাবে তানজিদ হাসান তামিমের চমৎকার ব্যাটিংয়ে মাত্র ২ উইকেট হারিয়ে জয় নিশ্চিত করে বাংলাদেশ।
তানজিদ হাসান তামিম খেলেছেন টি-টোয়েন্টির ক্যারিয়ারসেরা ইনিংস। তিনি ৪৭ বলে ১ চার ও ৬ ছক্কায় খেলেছেন অপরাজিত ৭৩ রানের ইনিংস। ২৫ বলে অপরাজিত ২৭ রান করা হৃদয়ের সঙ্গে ৫৯ রানের জুটি গড়ে বাংলাদেশের জয় নিশ্চিত করেন তামিম।
টেস্ট, ওয়ানডে ও টি টোয়েন্টি মিলিয়ে কোনও ফরম্যাটেই শ্রীলঙ্কার মাটিতে সিরিজ জেতার নজির ছিল না বাংলাদেশের। ২০১৭ সালে টেস্ট ও টি টোয়েন্টি সিরিজে ১-১ সমতা এনেছিল বাংলাদেশ। এবার টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিতেই শ্রীলঙ্কা সফর শেষ করল লাল-সবুজ জার্সিধারীরা।
যদিও ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশের শুরুটা ভালো ছিল না। প্রথম বলেই আউট পারভেজ হোসেন ইমন। শুরুতেই উইকেট হারিয়ে অনেকবারই পথ হারানোর নজির আছে বাংলাদেশের। তবে এবার সেই অতীত পাল্টে দিয়েছেন তানজিদ হাসান তামিম ও লিটন দাস।
দুজনের ব্যাটে ১০ ওভার শেষেই জয়ের সুবাস পায় বাংলাদেশ। লিটন ৩২ রানে ফিরলেও তামিম জয় নিশ্চিত করে মাঠ ছেড়েছেন।
তবে ম্যাচসেরার তামিম নন, পুরস্কারটি জিতেছেন শেখ মেহেদী। মাত্র ১১ রানে ৪ উইকেট নিয়ে আগেই বাংলাদেশের জয়ের পথ সহজ করে দিয়েছিলেন এই স্পিনার। আর সিরিজসেরা হয়েছেন লিটন।

মেহেদীর ম্যাজিকের পর শ্রীলঙ্কার ১৩২
একই পিচে দুই রকমের অভিজ্ঞতা হলো বাংলাদেশের। শেখ মেহেদী হাসান ৪ ওভারে মাত্র ১১ রান দিয়ে নিলেন ৪ উইকেট। সেই পিচেই শরিফুল ইসলাম খরচ করলেন ৫০ রান। শেষ ওভারে বাঁহাতি পেসারের খরচ ২২ রান। দাসুন শানাকার আগ্রাসী ওই ওভারটাই শ্রীলঙ্কাকে লড়াই করার মতো সংগ্রহ এনে দিয়েছে।
প্রথম টি-টোয়েন্টি জিতেছে শ্রীলঙ্কা। পরেরটি জিতে নেয় বাংলাদেশ। সেকারণে কলম্বোর তৃতীয় ও শেষ টি-টোয়েন্টি হয়ে দাঁড়িয়েছে অঘোষিত ‘ফাইনাল’। সিরিজ নির্ধারণী এই ম্যাচে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা শ্রীলঙ্কা নির্ধারিত ২০ ওভারে ৭ উইকেটে করে ১৩২ রান।
শেখ মেহেদী চমৎকার বোলিংয়ের পরও শ্রীলঙ্কা যে এই পর্যন্ত যেতে পেরেছে, তা শানাকার ব্যাটিংয়ের সৌজন্যে। শরিফুলের শেষ ওভারে তিনি মেরেছেন দুই চার ও দুই ছক্কা। খেলেছেন অপরাজিত ৩৫ রানের ইনিংস। ২৫ বলের ইনিংসটি তিনি সাজান ৪ বাউন্ডারি ও ২ ছক্কায়। শানাকার সঙ্গে ৬ রানে অপরাজিত ছিলেন মাহিশ থিকশানা।
পাথুম নিসানকা তৃতীয় ওভারেই ১৭ রানে ড্রেসিংরুমে ফিরতে পারতেন। শরিফুল ইসলামের বলে মিড উইকেটে তার ক্যাচ ফেলেছিলেন তানজিম হাসান সাকিব। ‘জীবন’ পেয়ে নিসানকা এগিয়ে চললেও বিপদে পড়ে শ্রীলঙ্কা। হাফসেঞ্চুরির সম্ভাবনা জাগিয়েছিলেন লঙ্কান ওপেনার। যদিও শেখ মেহেদী হাসানের ঘূর্ণিতে তাকেও ফিরতে হয়েছে। এককথায় কলম্বোর আর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে চলেছে মেহেদী-ম্যাজিক।
শ্রীলঙ্কার টপ অর্ডারের ৪ উইকেটই নিয়েছেন মেহেদী। আরও স্পষ্ট করে বললে, স্বাগতিকদের হারানো ৫ উইকেটের ৪টিই তার! নিজের ৪ ওভারের কোটা শেষ করেছেন উইকেট উৎসব করে। তার বোলিং ফিগারটা দেখার মতো- ৪-১-১১-৪।
সিরিজ জয়ের লক্ষ্যে তৃতীয় টি চোয়েন্টিতে শুরু থেকেই বোলিংয়ে দুর্দান্ত বাংলাদেশ। মেহেদী হাসান মিরাজকে বসিয়ে শেখ মেহেদীকে একাদশে সুযোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত কার্যকরী হয়েছে। এই স্পিনার তুলে নেন শ্রীলঙ্কার টপ অর্ডারের তিন ব্যাটারকে। মেহেদী আউট করেছেন কুশল পেরেরা, দিনেশ চান্ডিমাল, চারিথ আসালঙ্কা ও নিসানকাকে।
একাদশে সুযোগ পাওয়া শেখ মেহেদী ফিরিয়েছেন রানের খাতা খুলতে না পারা কুশল পেরেরা, ৪ রান করা চান্ডিমাল ও ৩ রান করা আসালঙ্কাকে। পরে নিসানকাকে আউট করেছেন ৪৬ রানে।
এর আগে শরিফুল ৪ বলে ৬ রান করা কুশল মেন্ডিসকে ফিরিয়ে বাংলাদেশকে এনে দেন প্রথম উইকেট।
টানা ৯ টস হার লিটনের, মিরাজের জায়গায় মেহেদী
কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে সিরিজের শেষ টি-টোয়েন্টিতে টস জিতেছে শ্রীলঙ্কা। টস জিতে রান তাড়ার চাপে না পড়তে ব্যাটিং নিয়েছেন অধিনায়ক চারিথ আসালঙ্কা। এই সিরিজে টানা তিন ম্যাচেই টস জিতলেন আসালঙ্কা। একাদশে পরিবর্তন দুটি। মেহেদী হাসান মিরাজের জায়গায় সুযোগ পেয়েছেন শেখ মেহেদী। আর সাইফউদ্দিনের জায়গায় খেলছেন তানজিম হাসান সাকিব।
লিটন দাস এ নিয়ে টস হারলেন টানা ৯টি ! শ্রীলঙ্কা সিরিজে হারলেন টানা তিন টস। এর আগে পাকিস্তান ও সংযুক্ত আরব আমিরাত সিরিজের ৬ ম্যাচেও টসে হেরেছিলেন তিনি!
পাল্লেকেলেতে প্রথম টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশ হেরেছিল ৭ উইকেটে। ডাম্বুলায় পরের ম্যাচে ঘুরে দাঁড়ায় লিটন দাসের দল। শ্রীলঙ্কাকে মাত্র ৯৪ রানে গুটিয়ে জয় পায় ৮৩ রানের বড় ব্যবধানে। সিরিজে সমতা ফেরে ১-১’এ। এর আগে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে পিছিয়ে পড়ে কেবল একবারই জিতেছে বাংলাদেশ। সেটা ২০১৮ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে।
ওয়ানডের পর টি টোয়েন্টি, দাপুটে জয়ে ফিরে এসে সিরিজ জয়ের সম্ভাবনা তৈরি করেছে বাংলাদেশ। তবে ওয়ানডেতে সিরিজ জয় ধরা দেয়নি। সেই আক্ষেপ টি টোয়েন্টিতে মেটানোর সুযোগ আজ।
সিরিজের শেষ ম্যাচ জিতে সফর হাসিমুখে শেষ করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ বাংলাদেশ দল। সেই স্পৃহা দেখা গেছে ম্যাচের আগের দিন অনুশীলনে। অধিনায়ক লিটন দাস মাঠে পৌঁছে দেখেছেন উইকেট। সবার আগে যেন এই কাজ সারার ইচ্ছা ছিল তার। তাই দলের বাকিরা মাঠে নামার আগে নিজেই চলে যান উইকেট দেখতে।
পরে কোচ ফিল সিমন্সের সঙ্গে লম্বা আলাপ সেরেছেন। তা অবশ্যই আজকের ম্যাচে জয়ের পরিকল্পনা নিয়ে। সিরিজের প্রথম ম্যাচে অদ্ভুত একাদশ নিয়ে বেশ সমালোচনায় পরেছিল বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ম্যাচে একাদশে তিনটি পরিবর্তন এনে বৈচিত্র্য আনা হয়। তাতে সুফলও আসে।
কোচ ফিল সিমন্সের সঙ্গে লিটনের আলোচনার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হতে পারে একাদশ নির্বাচন। অবশ্য গত ম্যাচে জয়ের পর বাংলাদেশ দলে দুটি পরিবর্তন এসেছে।
মিরাজের জায়গায় খেলছেন শেখ মেহেদী। সাইফউদ্দিনের বদলে নেওয়া হয়েছে তানজিম সাকিবকে। টি টোয়েন্টিতে মিরাজের ব্যাটিং ও বোলিং দুটোই তার বিপক্ষে ছিল। তাই মেহেদীকে সুযোগ দিয়েছে দল।
বাংলাদেশ একাদশ: তানজিদ হাসান তামিম, পারভেজ হোসেন ইমন, লিটন দাস (অধিনায়ক ও উইকেটকিপার), তাওহিদ হৃদয়, জাকের আলি, শামীম হোসেন পাটোয়ারি, শেখ মেহেদী হাসান, রিশাদ হোসেন, তানজিম সাকিব, মোস্তাফিজুর রহমান, শরিফুল ইসলাম।
শ্রীলঙ্কা একাদশ: পাথুম নিসানকা, কুশল মেন্ডিস (উইকেটকিপার), কুশল পেরেরা, আভিস্কা ফার্নান্ডো, চারিথ আসালঙ্কা (অধিনায়ক), দাসুন শানাকা, চামিকা করুণারত্নে, জেফরি ভ্যান্ডারসে, মাহিশ থিকশানা, নুয়ান থুসারা, বিনুরা ফার্নান্ডো।



