বাংলাদেশের ফুটবলে নতুন বিপ্লব এনেছেন হামজা চৌধুরী। লাল-সবুজ জার্সিতে তার খেলার আগ্রহ প্রকাশের পর থেকেই দেশের ফুটবলের বাঁকবদল শুরু। এরপর মাঠে নেমে নতুন আশার বীজ বুনেছেন প্রিমিয়ার লিগে খেলা এই মিডফিল্ডার। দেখেছেন বাংলাদেশের মানুষের ফুটবলপ্রেম ও তার প্রতি হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসা।
এই ভালোবাসার গভীরতা কতটা, হৃদয় দিয়ে অনুভব করেছেন হামজা। সিলেটে গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার পথে কিংবা ঢাকা স্টেডিয়ামে খেলতে নেমে প্রতিটি মুহূর্তে বাংলাদেশের ফুটবলপ্রেমীদের ভালোবাসায় সিক্ত হয়েছেন তিনি। এখন ইংল্যান্ড বসেও সেই মুহূর্তগুলো নাড়া দিয়ে যাচ্ছে হামজাকে। তার ক্লাব লিস্টার সিটির অ্যাপে দেওয়া সাক্ষাৎকারে প্রকাশ পেয়েছে তা। হামজা জানিয়েছেন, বাংলাদেশে পাওয়া ভালোবাসার ধারেকাছেও কোনও কিছু নেই।
গত মার্চে এএফসি এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের জার্সিতে অভিষেক হয় হামজার। জুনে প্রথমবার দেশের দর্শকদের সামনে খেলেছেন। মহাদেশীয় শ্রেষ্ঠত্বের মূল মঞ্চে জায়গা পাওয়ার লড়াইয়ে বাংলাদেশ এখনও জয়ের খোঁজে। এরপরও এই হামজাকে স্বপ্নসারথী মেনে গ্যালারিতে ও মাঠের বাইরে গলা ফাটিয়ে যাচ্ছেন বাংলাদেশের সমর্থকরা।
নিজ চোখে এ সবকিছু দেখেছেন হামজা। লিস্টার সিটির অ্যাপে দেওয়া তার সাক্ষাৎকারে সেসবই উঠে এসেছে। সিলেটে গ্রামের বাড়িতে কাটানো শৈশব তার স্মৃতিতে গাথা, “প্রথমবার যখন আমরা সেখানে (বাংলাদেশে) যাই, তখন আমি আমার গ্রামে গিয়েছিলাম। সেটা একেবারেই গ্রামীণ জায়গা। আমার শৈশবের বড় একটা অংশজুড়ে ওই গ্রাম।”
বাংলাদেশের হয়ে খেলার ছাড়পত্র পাওয়ার পর প্রথমবার যখন সিলেটে এসেছিলেন, সেসময়কার স্মৃতি আরও মধুর। গ্রামের বাড়িতে পাওয়া আতিথেয়তার কথা আলাদা করে বলেছেন হামজা, “(সিলেট পাওয়া অভ্যর্থনা) এককথায় অসাধারণ। ছেলেরা (সতীর্থরা) এটা নিয়ে প্রায়ই কথা বলে, এটা অবিশ্বাস্য। আমার মনে হয় না, এই মাত্রার ভালোবাসা কখনও স্বাভাবিক ব্যাপার।”
হামজার জন্ম ও বেড়ে ওঠা ইংল্যান্ডে। শৈশব থেকেই খেলছেন ফুটবল। ইংল্যান্ডের সঙ্গে বাংলাদেশের ফুটবলের তুলনা চলে না। কিন্তু ভালোবাসা ও আন্তরিকতার প্রসঙ্গে এলে বাংলাদেশের সঙ্গে তুলনার কিছু নেই বলে জানিয়েছেন এই মিডফিল্ডার, “ফুটবলার হিসেবে আমরা যুক্তরাজ্যে অনেক মনোযোগ পাই। তবে সেখানে (বাংলাদেশে) পাওয়া অভ্যর্থনা এমন নয়। বাংলাদেশে পাওয়া আন্তরিকতার ধারেকাছেও নেই। এটা অসাধারণ।”
দেশের মানুষের ভালোবাসা হামজাকে এতটা ছুঁয়ে গেছে যে, তার হৃদয়ের অনেকটা পড়ে থাকে বাংলাদেশেই, “অনেকেই বলতে পারেন এটা হয়তো কিছুটা ভীতি জাগানো বা আবেগময় ব্যাপার। কিন্তু সত্যি বলছি… আমার কাছে, আমার হৃদয়ের অনেকটা ওখানে (বাংলাদেশে) পড়ে আছে। তারা সবাই কেবল ইতিবাচকতা ও আমাকে ভালোবাসার জন্যই আছে। এটা অসাধারণ অনুভূতি।”